রামুতে সাম্প্রদায়িক হামলার ৯ বছরেও বিচারে অগ্রগতি নেই

কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার পর নয় বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার বিচার প্রক্রিয়ার উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বর্বরোচিত সেই ঘটনার ভুক্তভোগীরা।

ওই ঘটনায় নিম্ন আদালতে বেশ কয়েকটি ফৌজদারি মামলা এবং হাইকোর্টে দুটি রিট পিটিশন হয়েছে। কিন্তু সেগুলো এখনো সুরাহার অপেক্ষায়, কারণ সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা এর জন্য যথেষ্ট উদ্যোগ নেননি।

২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদীদের হাতে ১২টি প্যাগোডা ও ৫০টিরও বেশি বাড়ি ধ্বংস হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের দুজন আইনজীবী দুটি রিট পিটিশন করেন। পিটিশনের পর হাইকোর্টের নির্দেশে দুটি তদন্ত প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা হয় এবং এই হামলা প্রতিরোধে স্থানীয় কর্মকর্তাদের অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু এরপরও হাইকোর্ট এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি।

এছাড়াও, বেঞ্চ পুনর্গঠন ও আদালতে পিটিশনগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের অনীহার কারণে হাইকোর্ট এখনো পিটিশনের বিপরীতে চূড়ান্ত শুনানির আয়োজন করেনি এবং কোনো রায়ও দেয়নি।

অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পিটিশনকারীরা হাইকোর্টের কাছে দ্রুত শুনানির আবেদন না করলে পিটিশনের নিষ্পত্তি হতে অনেক সময় লেগে যাবে।

অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এই পর্যায়ে আমার কিছু করার নেই। এই বিষয়ের ওপর শুনানি হলে আমরা হাইকোর্টের কাছে আমাদের যুক্তি দেবো।'

২০১২ সালের, ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বরে একদল উগ্রবাদী গুজব ছড়ায় যে, রামুর স্থানীয় এক বৌদ্ধ তরুণ ফেসবুকে ইসলামের অবমাননামূলক একটি ছবি পোস্ট করেছেন। এই গুজবের সূত্র ধরে উগ্রবাদীরা বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর ওপর বর্বর হামলা চালায়।

ডেইলি স্টারের অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে, ফেসবুকে পোস্ট করা ওই ছবিটি ফটোশপের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছিল।

উগ্রবাদীরা বৌদ্ধ মন্দিরে আগুন দেয় এবং ৫০টিরও বেশি বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট চালান। এছাড়াও তারা কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল গ্রামের মুশুরিখোলা শ্মশানে আক্রমণ চালায় এবং খারুলিয়া গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে হামলার চেষ্টা করে।

পরের দিন হামলা হয় উখিয়া উপজেলার বৌদ্ধ মন্দিরে। পালংখালীতে দুটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ভাঙচুর করা হয়। তারা টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বৌদ্ধদের বাড়িঘরে আগুন দেয় ও ভাঙচুর করে।

২ ও ৩ অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও ইউনুস আলী আকন্দ আলাদাভাবে হামলাকারী ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের (যারা এই আক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলা করেছেন) বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নেওয়ার জন্য দুটি রিট পিটিশন করেন।

বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দারের (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) নেতৃত্বে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। তিনি আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার আগে প্রধান বিচারপতি এই বেঞ্চকে পুনর্গঠন করেন।

১৬ মে, ২০১৩ তে হাইকোর্টে জমা দেওয়া বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে এই হামলা প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসন, গোয়েন্দা ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ব্যর্থতা চিহ্নিত করা হয়।

এই তদন্তে হামলার সঙ্গে সংযুক্ত ২৯৮ জনকে দায়ী করা হয়। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রতিবেদনে ২০টি সুপারিশ করা হয়, যার মধ্যে আছে প্রশাসনের দক্ষতা বাড়ানো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ এবং মানুষের মধ্যে দেশপ্রেমের চেতনাকে জাগ্রত করা, ইত্যাদি।

পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও দুটি পৃথক তদন্ত পরিচালনা করে।

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ২৬ সেপ্টেম্বর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অন্যান্য মামলায় হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ অতিরিক্ত চাপে থাকায় এই রিট পিটিশনের শুনানি আয়োজনের জন্য আমি কোনো উদ্যোগ নিতে পারিনি। এছাড়াও, আদালত ছুটি ও চলমান মহামারির কারণে বিভিন্ন সময় বন্ধ ছিল। মহামারি শেষে আদালত যখন নিয়মিত কার্যক্রমে ফিরবে, তখন আমি হাইকোর্ট বেঞ্চের কাছে আবেদন জানাবো।'

তিনি আরও জানান, রামুর মামলায় অভিযুক্ত সবাই এখন জামিনে মুক্ত আছে এবং নিম্ন আদালতে এ মামলার বিষয়ে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিও নেই।

আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ ২৬ সেপ্টেম্বর এই প্রতিবেদককে বলেন, বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানিক্রমে স্থান না পাওয়ায় তার রিট পিটিশনের বিপরীতে কোনো শুনানির আয়োজন করেনি।

তিনি বিস্তারিত না জানিয়ে বলেন, তিনি বেঞ্চের কাছে দ্রুত শুনানি আয়োজনের জন্য আবেদন করবেন না, কারণ এ মুহূর্তে বিচারকদের হাতে মামলার সংখ্যা অনেক বেশি।

(সংক্ষেপিত)

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Rawhide price plummets in Ctg despite govt intervention

Despite the government's announcement of fixed prices -- Tk 60–65 per sq ft for salted cowhide in Dhaka and Tk 55–60 outside the capital -- traders in Chattogram said most transactions took place at significantly lower rates

26m ago