আবরার হত্যার ২ বছর: জড়িতদের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে বুয়েট ক্যাম্পাসে মানববন্ধন। ছবি: সুচিস্মিতা তিথি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

আজ বৃহস্পতিবার বুয়েট ক্যাম্পাসে এক মানববন্ধনে এ দাবি জানান তারা।

সকাল সাড়ে ১১টায় আবরার ফাহাদের স্মরণে বুয়েটের ক্যাফেটেরিয়া প্রাঙ্গনে স্মরণানুষ্ঠান আয়োজিত হয়। এতে আন্দোলনের স্মৃতিচারণ, কবিতা, পথনাটক, গান ও পেইন্টিং প্রদর্শনী করেছেন শিক্ষার্থীরা।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে পথনাটক করেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সুচিস্মিতা তিথি

তবে, ওই সময় বুয়েটের কোনো শিক্ষককে অংশ নিতে দেখা যায়নি।

স্মরণানুষ্ঠানের পর দুপুর ১টায় বুয়েটের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে মানববন্ধন ও একটি বিবৃতি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৩ নভেম্বর ২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২৫ জনকে আসামি করে পুলিশ চার্জশিট প্রদান করে। ওই চার্জশিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২১ নভেম্বর আসামিদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে বুয়েট প্রশাসন। এর ধারাবাহিকতায় মাঠ পর্যায়ের আন্দোলনের সমাপ্তি ও ৪ ডিসেম্বর থেকে বুয়েটের স্বাভাবিক একাডেমিক কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়। ২০২০ সালের ১২ মার্চ বাদীপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হয়। কোভিড মহামারি, মামলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের অসুস্থতা, কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ইত্যাদি জটিলতায় দফায় দফায় পিছিয়ে যেতে থাকে মামলার কার্যক্রম।

মামলায় প্রথম দফা অভিযোগ গঠনের প্রায় এক বছর পর ২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ২৫ জন আসামির বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডের ২ বছর পার হয়ে গেলেও হতাশাজনকভাবে এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন ৩ আসামি।

মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় বুয়েট থেকে আজীবন বহিষ্কৃত মো. আশিকুল ইসলাম (বিটু) -কে ২২ মে, ২০২১ তারিখ কেমিকৌশল '১৭ ব্যাচের একটি কোর্সের অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। জানা যায় যে, কোর্ট থেকে প্রাপ্ত স্থগিতাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট প্রশাসন তাকে কোর্স রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ দিয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বুয়েট প্রশাসনের কাছে জবাবদিহিতা ও বহিষ্কার নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।

বুয়েটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিরুদ্ধ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আশিকুল ইসলাম আদালত থেকে বহিষ্কারের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ নিয়ে এসে বুয়েটে রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। তাকে অনলাইন ক্লাসে দেখার পর পর আমরা আবারও আন্দোলন করি। শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে বুয়েট কর্তৃপক্ষ তার কোর্স রেজিস্টেশন নাকচ করে।'

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'নিষিদ্ধ করার পেছনে মূল কারণ ছিল যে, ছাত্র রাজনীতি এখানে একটা অসুস্থ, অমানবিক রূপ নিয়েছিল। যারা হলে থাকতেন তাদেরকে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হতো। এখন এটা থেকে স্বস্তি পাওয়া গেছে। ছাত্র রাজনীতি না থাকার যেটুকু অসুবিধা সেটুকু আমরা নিতে রাজি আছি।'

বুয়েটের আরেক শিক্ষার্থী তাসমিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবো। আমরা দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানাই।'

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগে নতুন শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে যে ভয়, আতঙ্ক আমরা দেখতে পেতাম এখন সেটা দেখা যায় না। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টিকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। আমাদের চেষ্টা থাকবে বুয়েটে যেনো আর কখনো ছাত্র রাজনীতি চালু না হয়।'

২০২০ সালের ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদ হত্যার প্রথম বছরে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছে যে ৫টি দাবি জানিয়েছিল, সেগুলোর কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা জানান, 'আবরারের স্মৃতি রক্ষার্থে বুয়েট প্রশাসনকে আমরা সর্বাত্মকভাবে পাশে চেয়েছিলাম। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, গত এক বছরেও আমাদের ন্যায্য দাবিগুলোর কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি আমরা দেখতে পাইনি। এমনকি শিক্ষার্থীদের আয়োজিত এই স্মরণসভায় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি ও সার্বিকভাবে তাদের নীরবতা আমাদের ব্যথিত করেছে।'

বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, আবরার ফাহাদের পরিবারকে মাসিক কিস্তিতে ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা নিয়েছে বুয়েট প্রশাসন। বুয়েট প্রশাসনের পক্ষ হতে আবরার ফাহাদের দ্বিতীয় বছর সামনে রেখে আনুষ্ঠানিক শোকবার্তা প্রদান করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বুয়েট শিক্ষার্থী অনিরুদ্ধ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অনলাইনে আমরা একটি স্মরণ সভার আয়োজন করেছি। আমরা সব শিক্ষকদের সেই সভায় আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আশা করি, আমরা আলোচনা অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের পাবো।'

আবরার ফাহাদের স্মৃতির স্মরণে দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত খাবার বিতরণ এবং বুয়েট সেন্ট্রাল মসজিদে বাদ আসর দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে।

Comments

The Daily Star  | English
Hilsa fish production in Bangladesh

Hilsa: From full nets to lighter hauls

This year, fishermen have been returning with lesser catches and bigger losses.

12h ago