ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনে ২০৩২ সাল পর্যন্ত কর রেয়াত

ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল উৎপাদনকারীরা ২০৩২ সাল পর্যন্ত আয়কর রেয়াত পাবেন।

ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল উৎপাদনকারীরা ২০৩২ সাল পর্যন্ত আয়কর রেয়াত পাবেন।

সক্রিয় ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদানগুলোর (এপিআই) স্থানীয় উৎপাদন উৎসাহিত করে আমদানি নির্ভরতা কমানো এবং রপ্তানির উদ্দেশ্যে এই প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে এপিআই ও গবেষণাগারের রিএজেন্ট উৎপাদন করছে তাদের জন্যেও ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে কর রেয়াত প্রযোজ্য হবে।

গত সোমবার এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে এনবিআর জানায়, ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০৩২ পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা উপভোগ করার জন্য উৎপাদনকারীকে প্রতি বছর অন্তত ৫টি এপিআই ও গবেষণাগার রিএজেন্ট উৎপাদন করতে হবে।

যদি ৫টির কম এপিআই বা রিএজেন্ট উৎপাদন করা হয়, তাহলে সুবিধার পরিমাণ কমে যাবে।

এনবিআর জানায়, জুলাই ২০২২ থেকে প্রতি বছর ৩টি নতুন এপিআই ও রিএজেন্ট উৎপাদন করা হলে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ কর প্রযোজ্য হবে।

প্রায় ২৫০টি স্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক এসএম শফিউজ্জামান বলেন, 'সরকার একটি প্রশংসনীয় কাজ করেছে। কর রেয়াত সুবিধা বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে এবং আমাদের এপিআই উৎপাদনের সক্ষমতা সম্প্রসারণ করবে।'

এ ছাড়াও, এপিআই মলিকিউল ও রিএজেন্ট উৎপাদকদের তাদের বার্ষিক মুনাফার কমপক্ষে ১ শতাংশ গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যয় করতে হবে। যাতে পর্যায়ক্রমে প্রাতিষ্ঠানিক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সংযুক্তি বাড়ে।

এই প্রণোদনার ঘোষণা এমন এক সময় দেওয়া হয়েছে যখন ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের চাহিদার অংশ বিশেষ পূরণের জন্য স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো মুন্সিগঞ্জের এপিআই শিল্প পার্কে কারখানা স্থাপন করছে। ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, এই ক্রমবর্ধনশীল খাতের অনুমিত মূল্য প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার।

প্রয়োজনের তুলনায় স্থানীয় উৎপাদন কম হওয়ায় বাংলাদেশ কাঁচামাল ও রিএজেন্টের চাহিদা পূরণের জন্য চীন, কোরিয়া ও ভারতের ওপর নির্ভরশীল। এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানির জন্য প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয় করা হয়।

অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস, স্কয়ার, এসকেএফ ও বেক্সিমকোসহ প্রায় ১০টি ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান কিছু কাঁচামাল উৎপাদন করে থাকে। আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এপিআই উৎপাদকরা ইতোমধ্যে মলিকিউল আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) পরিশোধ করার দায়বদ্ধতা থেকে অব্যাহতি পেয়েছে। এ ছাড়াও তারা করমুক্ত আমদানি সুবিধাও পায়।

এনবিআর জানিয়েছে, এই সুবিধাগুলো ২০৩২ সাল পর্যন্ত চালু থাকবে। কারণ সরকার ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে একটি দৃঢ় অবস্থান তৈরি এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ট্রিপস চুক্তির আওতায় মেধাসত্ত্ব ফি রেয়াতের সুবিধা নিয়ে রপ্তানি থেকে আয় বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে।

২০১৭ সালে স্থানীয় উৎপাদকরা ৪১টি এপিআই মলিকিউল এবং রিএজেন্ট তৈরি করতে সক্ষম হয়। ২০১৮ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা এপিআই ও রিএজেন্ট উৎপাদন ও রপ্তানি সংক্রান্ত জাতীয় নীতিমালা অনুযায়ী সরকার ২০৩২ সালের মধ্যে উৎপাদন ৩৭০ এ নিয়ে যেতে চায়।

স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে সরকার এপিআই ও রিএজেন্ট আমদানিকে চাহিদার ৮০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

এনবিআরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা কর রেয়াত সুবিধা দিয়েছি যাতে স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল উৎপাদকরা ট্রিপস এর সুবিধাগুলো কাজে লাগাতে পারে।'

সরকার আশা করছে কর ও অন্যান্য প্রণোদনা বাংলাদেশকে ২০৩২ সালের মধ্যে এপিআই রপ্তানি থেকে প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার এনে দেবে এবং প্রায় ৫ লাখ ৫০ হাজার নতুন চাকরি তৈরি করবে।

বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের গ্লোবাল বিজনেস ডেভেলপমেন্টের পরিচালক মঞ্জুরুল আলম বলেন, 'স্থানীয় উৎপাদন দেশে তৈরি ওষুধের খরচ কমাবে এবং বৈশ্বিক বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সক্ষমতা বাড়াবে।'

বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস খুব শিগগির এপিআই উৎপাদন শুরু করার ব্যাপারে আশাবাদী।

মঞ্জুরুল আশা করছেন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে এপিআই উৎপাদন কারখানা স্থাপন করবেন, কারণ উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে উৎপাদন খরচ কম।

তিনি যোগ করেন, 'বিদেশি বিনিয়োগের বড় সম্ভাবনা রয়েছে এক্ষেত্রে।'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Love road at Mirpur: A youthful street

Certain neighbourhoods in Dhaka have that one spot where people gather to just sit back and relax. For Mirpur, it’s the frequently discussed street referred to as “Love Road”.

5h ago