মাথাপিছু আয়ে ভারতের ওপরেই থাকছে বাংলাদেশ

Bangladesh_GDP.jpg
ছবি: সংগৃহীত

মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দিক দিয়ে ২০২০ সালে প্রথম বারের মতো ভারতকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ। গত ১৫ বছর ধরে বার্ষিক ৬ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বার্ষিক ৩৫৫ বিলিয়ন ডলার উৎপাদন নিয়ে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

বিশ্বের বেশিরভাগ অর্থনীতি মহামারিতে সংকুচিত হলেও বাংলাদেশ এই সময়ে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

মহামারিতে ২০২০ সালে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভারত। এ বছর দেশটির জিডিপি কমে ২ হাজার ৬৬০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক আউটলুক ডাটাবেসের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ এ ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ২ হাজার ৯৮ ডলার থেকে কমে ১ হাজার ৯২৯ ডলার হয়।

গত বছর আইএমএফ পূর্বাভাষ দিয়েছিল, ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ২০২১ সালে ২ হাজার ৩০ ডলার হবে এবং বাংলাদেশের জিডিপি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৯৯০ ডলার হবে। অর্থাৎ, ভারতের থেকে এগিয়ে গেলেও বাংলাদেশের সাফল্য ক্ষণস্থায়ী হবে।

তবে গত মঙ্গলবারে আইএমএফ প্রকাশিত সংশোধিত পূর্বাভাষে বাংলাদেশের এ বছরের মাথাপিছু আয় দেখানো হয়েছে ২ হাজার ১৩৮ ডলার এবং ভারতের ২ হাজার ১১৬ ডলার। আগামী ৫ বছরেও বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ভারতের থেকে এগিয়ে থাকবে বলেই পূর্বাভাষে বলা হয়েছে।

আইএমএফ জানিয়েছে, ২০২১ সালে ভারতের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে ৯ শতাংশ। এই সাফল্য সত্ত্বেও ভারত তাদের নিকটতম প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে মাথাপিছু আয়ে পেছনে ফেলতে পারছে না।

পূর্বাভাষ অনুযায়ী, স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি বেড়ে ৩ হাজার ২৫৩ ডলার হবে, যা ভারতের ৩ হাজার ১৮ ডলারের চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি।

৫ বছর পরে বাংলাদেশ ও ভারতের জিডিপি যথাক্রমে ৫৬৫ বিলিয়ন ও ৪ হাজার ৩৯৩ বিলিয়ন ডলার হবে।

বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, 'ভালো খবর হচ্ছে বাংলাদেশ মাথাপিছু জিডিপি মানদণ্ডে এগিয়ে যাচ্ছে।'

তিনি আরও যোগ করেন, 'এটি বিশ্বের বাকি দেশগুলো এবং আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে তুলনা করলেও সত্য। এর মাধ্যমে স্বাভাবিক সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিশীলতা এবং সংকটের সময় সহনশীলতার প্রকাশ পাচ্ছে।'

তবে মাথাপিছু আয়ের দিক দিয়ে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে বেশি বিত্তবান হয়েছে কী না, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন জাহিদ।

তিনি বলেন, 'এই প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ হবে যদি আইএমএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী মার্কিন ডলারে প্রকাশিত মাথাপিছু জিডিপির তুলনা করা হয়।'

'তবে মার্কিন ডলারে মাথাপিছু জিডিপির সঙ্গে রাষ্ট্রীয় মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতার তুলনা করা হলে, উপসংহার অনেকটাই ভিন্ন হবে', যোগ করেন তিনি।

পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি (পিপিপি) বা ক্রয়ক্ষমতা ভিত্তিক জিডিপি হিসাব করা হয় নমিনাল জিডিপিকে পিপিপি বিনিময় মূল্য দিয়ে ভাগ করে। এই বিনিময় মূল্য যুক্তরাষ্ট্রে মার্কিন ডলারের ক্রয়ক্ষমতার বিপরীতে কোনো একটি দেশের জাতীয় মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতার প্রকৃত পরিস্থিতি প্রকাশ করে।

২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও ভারতের পিপিপি বিনিময় মূল্য যথাক্রমে ডলার প্রতি ৩৩ টাকা এবং ২২ রূপি। সহজভাবে বলতে গেলে, যুক্তরাষ্ট্রে যে পণ্য বা সেবা পেতে ১ ডলার খরচ করাই যথেষ্ট, তা বাংলাদেশে পেতে হলে ৩৩ টাকা খরচ করতে হয়।

একই পণ্য বা সেবা পেতে ভারতে ২২ রূপি খরচ করতে হয়। অর্থাৎ, ভারতীয় মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা বাংলাদেশের টাকার ক্রয়ক্ষমতার চেয়ে ৩৩ শতাংশ বেশি।

আইএমএফের প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে জাহিদ জানান, পিপিপি বিনিময় মূল্যের ভিত্তিতে হিসাব করা হলে, ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ২০২১ সালে ৭ হাজার ৩১৯ ডলার, যা বাংলাদেশের ৫ হাজার ৭৩৩ ডলারের চেয়ে ২৭ শতাংশ বেশি।

পূর্বাভাষ অনুযায়ী, পিপিপি ডলারে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ২০২৬ সালের মধ্যে বেড়ে ১০ হাজার ৮৬৬ হবে এবং একই সময় বাংলাদেশে হবে ৮ হাজার ৮৫৯ ডলার।

জাহিদ আরও জানান, গড়ে ভারতের মাথাপিছু আয় তখনো বাংলাদেশের চেয়ে ২২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি থাকবে, তবে এই পূর্বাভাষ অনুযায়ী এই ব্যবধান কমে আসার কথা।

 'সুতরাং বাংলাদেশ ভারতের কাছাকাছি পর্যায়ে চলে আসছে, এ কথা বলা যায়', বলেন জাহিদ।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সাবেক গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত জানান, মহামারির মধ্যেও কৃষি, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি খাতে আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

অপরদিকে, জনসংখ্যা কম বৃদ্ধি পাওয়ায় মাথাপিছু জিডিপি বেড়েছে।

জায়েদ বলেন, 'আগামী ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যে মেগাপ্রকল্পগুলো চালু হলে দেশের অর্থনীতির ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে।'

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন জানান, ২০১২ সাল থেকে ভারতের মাথাপিছু খরচ কমছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মহামারির আগেই ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমে গেছিল, যার পেছনে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত দায়ী।

করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে ভারতের অর্থনীতিতে বড় আকারের মন্দা দেখা দেয়, কিন্তু বাংলাদেশ মাত্র দুই মাস লকডাউনের পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করার সুযোগ পায়।

জায়েদ বলেন, 'অর্থনীতিতে যতটুকু ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা হয়নি। সুতরাং আইএমএফের পূর্বাভাষকে বাস্তবসম্মত বলে বিবেচনা কর যায়।'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Blast heard in north Tehran, main road partially closed: AFP

Israel army says struck Iran centrifuge production, weapons manufacturing sites

21h ago