বাবার জন্য কাঁদছে শিশু আধিত্য

মায়ের কোলে আধিত্য। গত চার দিন ধরে বাবাকে দেখার বায়না ধরলেও মা লাকি রানী সাহা ছেলেকে কোনো উত্তর দিতে পারছেন না। ছবি: স্টার

প্রতিদিন বাবার সঙ্গে ভাত খেত চার বছরের আধিত্য। গত শুক্রবার রাত থেকে বাবাকে না দেখে এখনও শিশুটির কান্না থামেনি। বাবাকে ছাড়া কিছু খাওয়ানোও যাচ্ছে না। কিন্তু ছোট্ট আধিত্যের বাবা যে আর কোনো দিন ফিরে আসবে না, তার সাথে ভাত খাবে না, খেলবে না, আদর করবে না একথা তাকে কেমন করে বোঝাবো- সোমবার দুপুরে কান্নায় ভেঙে পড়ে কথাগুলো বলছিলেন আধিত্যের মা ও সদ্যপ্রয়াত যতন সাহার স্ত্রী লাকি রানী সাহা (৩৫)।

গত শুক্রবার বিকালে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের নরোত্তমপুরের শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণ গৌর নিত্যানন্দ মন্দির (ইসকন মন্দির) এবং বিজয়া সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন যতন। ওই হামলায় নির্মমভাবে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

কুমিল্লা জেলার তিতাস উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত মনরঞ্জন সাহার ছেলে যতন সাহা জাইকার একটি প্রজেক্টে চট্টগ্রামে কাজ করতেন।

যতন সাহার বোন মুক্তরানী সাহা ভাইকে নিয়ে বলেন, 'খুব সাদামাটা আর হাসিখুশি মানুষ ছিল যতন। প্রতি বছর দুর্গাপূজায় নরোত্তমপুরে আমার বাড়িতে আসত। বিয়ের পর স্ত্রী আর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে দুর্গাপূজায় এবারই প্রথম এসেছিল। কিন্তু পূজার সেই আনন্দ আর থাকেনি। এমনটা হবে কোনোদিন ভাবতে পারিনি। ওর মুখটা আর দেখতে পাবো না এটা মনকে বোঝাতেই পারছি না।'

স্বামীকে হারিয়ে শোকে মুহ্য স্ত্রী লাকি রানী সাহা। বলেন, আমাদের সংসারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ছিলেন আমার স্বামী যতন সাহা। তাকে নির্মমভাবে বিনাকারণে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার তো কোনো দোষ ছিল না। শিশু সন্তানকে নিয়ে চোখে মুখে কেবল অন্ধকার দেখছি।'

সেদিন কী ঘটেছিল তার বর্ণনা দেন যতনের ভগ্নিপতি উৎপল সাহা। বলেন, 'শুক্রবার দুপুর ৩টার একটু আগে ১ থেকে ২ হাজার লোক গনিপুর গালর্স হাইস্কুলে হামলা চালায়। এরপর চার দিক থেকে বিজয়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দির এবং ইসকন মন্দিরে হামলা চালায়। এসময় ইসকন মন্দিরের লোকজনের সঙ্গে যতনও ইসকন মন্দিরের গেইটে গেলে তাকে পিটিয়ে পা ভেঙ্গে দেয়া হয়। এর কিছু পরে হামলাকারীরা এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কিল ঘুষি লাথি মেরে আহত করে। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন কল করেও পাওয়া যায়নি। এরপর তাকে ইসকন মন্দিরের অদূরে রাবেয়া হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে বেগমগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্স ও পরে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

উৎপল সাহা বলেন, ৩ ঘণ্টা ব্যাপী এ সন্ত্রাসী হামলার সময় কোনো পুলিশ বিজিবি কিংবা র‌্যাব সদস্যরা এগিয়ে আসেননি। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এবং বেগমগঞ্জ থানার ওসি, ডিবি, ইউএনও,  এসপি ও ডিসিকে একাধিকবার কল করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ইসকন মন্দির ও বিজয়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে হামলা এবং অগ্নি সংযোগের ঘটনায় চৌমুহনী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনকে কল করেও তাদের সহযোগীতা পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, 'হামলার ঘটনার চার দিন পেরিয়ে গেলেও সর্বত্র আতংক বিরাজ করছে। বর্তমানে চৌমুহনীতে যে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে তারা কতদিন থাকবে? পুলিশ চলে যাওয়ার পর হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর যে পুনরায় হামলা হবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে?'

Comments

The Daily Star  | English
rally demanding ban on awami league in Dhaka

Blockade at Shahbagh demanding AL ban

The demonstration follows a sit-in that began around 10:00pm last night in front of the Chief Adviser's residence

4h ago