সংস্কৃত থেকে পাস করলেও সংস্কৃত বলতে বা পড়তে পারেন না

ছবি: স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

প্রার্থীদের রেজাল্ট ঈর্ষণীয়, প্রায় সবাই প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। সবাই পাস করেছেন সংস্কৃত বিভাগ থেকে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, তারা সংস্কৃত পড়তে বা বলতে পারেননি। তাই একজনকেও শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করতে পারেনি নিয়োগ বোর্ড। ঘটনাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সংস্কৃত বিভাগের।

এ কারণে ওই বিভাগের পাঠ্যসূচি ও শিক্ষার্থীদের দক্ষতা পর্যালোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেলকে (আইকিউএসি) প্রতিবেদন জমাদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় এই নির্দেশ দেওয়া হয়।

গত ৭ অক্টোবর সংস্কৃত বিভাগে প্রভাষক পদে ১ জনকে নিয়োগদানের জন্য প্রার্থীদের ভাইভা নেয় নিয়োগ বোর্ড। জানা গেছে, মোট প্রার্থী ছিলেন ১৬ জন। তারা সবাই ঢাবির সংস্কৃত বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেছেন। তাদের মধ্যে ৩ জন ভাইভায় অংশ নেননি। বাকিরা ভাইভায় উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ৪ জন অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে আবেদন করেছিলেন। পূর্ণাঙ্গ রেজাল্ট না হওয়ায় তাদেরকে পরবর্তীতে আবেদন করতে বলা হয়।

নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন ঢাবির সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, সংস্কৃত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নমিতা মণ্ডল, অধ্যাপক ড. মাধবী রানী চন্দ এবং অধ্যাপক ড. অসীম সরকার।

'ভাইভায় প্রার্থীদের কেউ সংস্কৃত পড়তে বা বলতে পারেননি'- এ অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক ড. মাধবী রানী চন্দ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সবাই যে ভাইভায় খারাপ করেছে তা নয়, কেউ ভালো করেছে, কেউ খারাপ করেছে। তবে ভাইভায় তাদের শুধু সংস্কৃত পড়তে দেওয়া হয়েছিল, লিখতে দেওয়া হয়নি। অনেকেই কম-বেশি পড়তে পেরেছে, আবার কেউ কেউ পারেনি।'

এতো ভালো রেজাল্টধারী প্রার্থীদের এমন অবস্থা কেন?

অধ্যাপক ড. মাধবী রানী চন্দ বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান যে দিন দিন খারাপ হয়েছে, তা অস্বীকারের উপায় নেই। অনেকে মুখস্থ করে পরীক্ষায় ভালো করে। তাছাড়া, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা তো আছেই। বিভাগের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রে সংস্কৃতের পাশাপাশি ইংরেজিও থাকে। যে কারণে অনেকে ইংরেজি দেখেই প্রশ্নের মুখস্থ করা উত্তর লেখে। সংস্কৃত প্রশ্ন তারা পড়তে চায় না।' 

অধ্যাপক ড. অসীম সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেটি সঠিক নয়। ৪-৫ জন প্রার্থী ভাইভায় বেশ ভালোই করেছিল। তবে তাদের মধ্যে ৪ জন অ্যাপিয়ার্ড থাকায় পরবর্তীতে আবেদন করতে বলেছি। ৬ মাস পর বিভাগে আরও ২টি পদ খালি হবে। তখন তারা আবেদন করলে আমরা বিষয়টি ভেবে দেখব।'

তাহলে সংস্কৃত বিভাগের পাঠ্যসূচি ও শিক্ষার্থীদের দক্ষতা পর্যালোচনা করে আইকিউএসিকে প্রতিবেদন জমাদানের নির্দেশ কেন দিলো সিন্ডিকেট?

তিনি বলেন, 'আমাদের পাঠ্যসূচি যথাযথ এবং শিক্ষার্থীদের উপযোগীই আছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় নিয়মনীতি ফলো করেই পাঠদান করি। আইকিউএসি এ বিষয়ে পর্যালোচনা করতে আসলে আমরা যথাযথভাবেই তাদের সামনে আমাদের পাঠ্যসূচি তুলে ধরব। আমার বিশ্বাস- তখন এ বিষয়টি নিয়ে সবার নেগেটিভ ধারণা দূর হবে।'

আপনাদের পাঠ্যসূচি ও পাঠদান ঠিক থাকলে উচ্চশিক্ষা সম্পন্নদের মধ্য থেকে একজনও যোগ্য প্রার্থী পাননি কেন?

সংস্কৃত বিভাগের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, 'ভাইভায় আমরা সংস্কৃতে প্রশ্ন করেছি। দেবনগরী লিপিতে সংস্কৃত পড়তেও দিয়েছি। তারা অনেকেই পড়তে পেরেছে, বলতে পরেছে। তবে তারা যে শতভাগ পেরেছে আমি সে কথা বলছি না।'

লিখতে দেননি কেন?

অধ্যাপক ড. অসীম সরকার বলেন, 'লিখতে পারা সহজ। এটা সবাই পারে। পরীক্ষার সময় তো সবাইকে সংস্কৃত হরফেই লিখতে হয়েছে। তাই নিয়োগের ভাইভায় তাদের আর লিখতে দেওয়া হয়নি। তাছাড়া, প্রতিটি সেমিস্টারে তাদের ২ বার করে ভাইভা দিয়েই আসতে হয়েছে।'

এদিকে, সংস্কৃত বিভাগের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা হয়েছে জানলেও আইকিউএসি'র প্রতি সিন্ডিকেটের নির্দেশনার বিষয়ে কিছু জানেন না বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নমিতা মণ্ডল।

এ বিষয়ে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিয়োগ বোর্ড যোগ্য প্রার্থী পায়নি, সিন্ডিকেট সভায় এমন কোনো কথা বলা হয়নি। আমি জেনেছি, সিন্ডিকেট সভায় যে আলোচনা হয়েছে সেটি দোষের কিছু না। তবে পত্র-পত্রিকায় যা এসেছে, তা সঠিক নয়।'

যদিও সিন্ডিকেট সভা থেকে সংস্কৃত বিভাগের পাঠ্যসূচি ও শিক্ষার্থীদের দক্ষতা পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন জমাদানের মৌখিক নির্দেশনা পেয়েছেন বলে জানান আইকিউএসি'র পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রহমতউল্লাহ।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বিষয়ে সিন্ডিকেট সভা থেকে আমরা মৌখিক নির্দেশনা পেয়েছি। কিন্তু অফিসিয়াল কোনো চিঠিপত্র পাইনি। আগে চিঠিপত্র আসুক, তারপর কী করব, কীভাবে করব, কেন করব, সেটা জেনে নেব।'

'শুধু সংস্কৃত বিভাগ না, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাভিত্তিক সবগুলো বিভাগের পাঠ্যসূচি পর্যালোচনা করব', যোগ করেন তিনি।

অফিসিয়াল চিঠিপত্র কবে পেতে পারেন?

অধ্যাপক ড. মো. রহমতউল্লাহ বলেন, 'কবে পাব, এটা বলা মুশকিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা জানে।'

Comments

The Daily Star  | English

Govt relieves Kuet VC, Pro-VC of duties to resolve crisis

A search committee will soon be formed to appoint new candidates to the two posts

1h ago