এবার মিলল চরম বিব্রতকর হারের স্বাদ

Mahmudullah
কোয়ালিটি পেসে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর এই কাঁপুনি বলে দিচ্ছে গোটা দলের ছবি। ছবি: বিসিবি

টানা তিন হারে সেমিফাইনালের আশা কার্যত নিভে যাওয়ার পর চাপহীন এক ম্যাচের প্রত্যাশায় ছিল দল। কিন্তু কোথায় কী! উল্টো চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় মাহমুদউল্লাহরা উপহার দিলেন বিব্রতকর এক পরিস্থিতির। কাগিসো রাবাদা, আইনরিখ নরকিয়ার পেসের কোনো জবাবই দিতে পারলেন না তারা। মাত্র ৮৪ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পরই ম্যাচ অনেকটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাসকিন আহমেদ অন্ধকারে আলো হয়ে আনুষ্ঠানিকতায় খানিকটা দেরি করিয়েছেন।

মঙ্গলবার আবুধাবিতে বাংলাদেশকে অনেকটা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিল দক্ষিণ আফ্রিকা। মাহমুদউল্লাহদের মাত্র ৮৪ রানের পুঁজি ৩৯ বল আগে পেরিয়ে ৬ উইকেটে জিতেছে টেম্বা বাভুমার দল। এই হারে আনুষ্ঠানিকভাবেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

প্রোটিয়াদের জয়ে নায়ক তাদের বোলাররাই। বাংলাদেশকে ধসিয়ে দিতে মাত্র ৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে সফল নরকিয়া। প্রথমেই বাংলাদেশের ইনিংস নাড়িয়ে দেওয়া রাবাদা ২০ রানে নেন ৩ উইকেট।

মরা ঘাসে আচ্ছাদিত উইকেটে পেসারদের বাড়তি লাফানো বল, সিম মুভমেন্টে অসহায় দেখালো বাংলাদেশের ব্যাটারদের।  রাবাদার বাড়তি বাউন্সে হকচকিয়ে ক্যাচ দিলেন মুশফিকুর রহিম, নরকিয়ার বাড়তি বাউন্সে কোনমতে শরীর বাঁচিয়ে ধরা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসের ঝাঁজে বাংলাদেশের পুরো ইনিংসই এমন কাঁপাকাঁপির। স্রোতের বিপরীতে লড়ছিলেন লিটন দাস। থিতু হওয়া এই ব্যাটার ২৪ রান করে শিকার তাবরাইজ শামসির স্পিন বিষের।

বাংলাদেশের ইনিংসে সর্বোচ্চ রান অবশ্য আটে নামা শেখ মেহেদীর। ২৫ বলে করেন ২৭। দুই অঙ্কে যেতে পেরেছেন  আর একজনই। ২০ বলে ১১ করেন শামীম পাটোয়ারি। বাকি সবার স্কোর টেলিফোন ডিজিট।

উইকেটে ছিল মরা ঘাস। তাতে স্পিন দিয়ে আক্রমণ শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় ওভারেই অবশ্য এলেন কাগিসো রাবাদা। পরে ওই স্পেলে বাংলাদেশের ভিতও নাড়িয়ে দিলেন।

লিটন তার বল থেকে কাভার ড্রাইভে এক বাউন্ডারি পেলেও বাকিরা জবাব দিতে পারলেন না। মার্ক্রামের বাজে ফিল্ডিংয়ে কেশব মহারাজের বলে একটু বাউন্ডারি পাওয়া ছাড়া ধুঁকছিলেন নাইম।  প্রথম আগ্রাসী শট গিয়েই বিদায় তার। রাবাদাকে পুল করতে গিয়ে পার করতে পারেননি মিড অন।

Mushfiqur Rahim

ঠিক পরের বলে অসাধারণ এক ডেলিভারিতে বিদায় সৌম্য সরকারের। ক্রিজে আসা কোন ব্যাটসম্যানের জন্য প্রথম বলই এরকম ফেস করাটা কঠিন। সৌম্যও পারেননি। তাকে অবশ্য রিভিউ নিয়ে ফেরায় দক্ষিণ আফ্রিকা। মুশফিকও ফিরতে পারতেন মুখোমুখি প্রথম বলেই। অল্পের জন্য তার ক্যাচ ফিল্ডারের হাতে যায়নি। তাতে লাভ হয়নি। তিন বলেই সমাপ্তি তার। রাবাদার বাড়তি বাউন্সারে হকচকিয়ে ক্যাচ দেন স্লিপে। সেই ক্যাচ দারুণ রিফ্লেক্সে লাফিয়ে দুবারের চেষ্টায় ধরেন রিজা হেনড্রিকস। 

অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ক্রিজে এসেও ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাননি। ৯ বল টিকেছেন, পুরোটা সময়ই ধুঁকেছেন। মাত্র ৩ রান করে তিনি আনরিক নরকিয়ার লাফানো বল গ্লাভসে ছুঁইয়ে দেন ক্যাচ। ক্রিজে এসে মুখোমুখি প্রথম বলেই উদ্ভট এক শট খেলতে যান আফিফ হোসেন। ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস বল ছাড়ার আগেই ক্রিজ থেকে বেরিয়ে শট খেলতে যান তিনি। বুদ্ধিমান প্রিটোয়ারিয়াস দেননি জায়গা, বোল্ড হয়ে গোল্ডেন ডাকে ফেরেন আফিফ। ৩৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে এলোমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশ। রানের চাকাও তখন বেশ শ্লথ। ১০ ওভারে আসে কেবল ৪০ রান।

Liton Das
২৪ রান করেন লিটন

তরুণ শামীম পাটোয়ারিকে নিয়ে পরিস্থিতি সামালের চেষ্টায় ছিলেন লিটন। কিন্তু তার বিদায় স্পিন বিষে। টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বের এক নম্বর বোলার। মায়াবি এক  ফ্লাইটে লিটনকে বিভ্রান্ত করেন তিনি। ফ্লিক করতে যাওয়া লিটন এলবিডব্লিউতে কাবু। ৩২ বলে ২৪ রানে তিনি যখন ফিরছেন দ্বাদশ ওভারে দলের রান কেবল ৪৫। দুই অঙ্কে যাওয়া ব্যাটার শুধু তিনি।

এরপর শেখ মেহেদী হাসান-শামীম মিলে আনেন আরও ১৯ রান। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচে নামা শামীম বিপদজনক পরিস্থিতিতে আহামরি কিছু করতে পারেননি। শামসির বলে ক্যাচ দিয়েছেন ২০ বলে ১১ করে।

আটে নামা শেখ মেহেদী পরে একাই কিছু রান বাড়িয়েছেন। ইনিংসের একমাত্র ছক্কাও তার ব্যাটে। ১৯তম ওভারে নরকিয়াকে ক্যাচ দেওয়ার আগে করেন ২৫ বলে ২৭ রান।

৮৫ রান তাড়ায় নেমে তাড়া ছিল প্রোটিয়াদের। সেমির আশা বাড়াতে রানরেট ছিল তাদের মাথায়। প্রথম ওভারেই তাদের একটু হোঁচট দেন তাসকিন। তার কাট করে ভেতরে ঢোকা দারুণ এক বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন রিজা হেনড্রিকস। কুইন্টেন ডি কক তিন বাউন্ডারিতে কাজ দ্রুত সারার আভাস দেন। দক্ষিণ আফ্রিকার কিপার ব্যাটসম্যান তাড়াহুড়োর অপ্রোচেই শেখ মেহেদীর অফ সিফে লাইন মিস করে হন বোল্ড। টানা স্পেলে নিজের তৃতীয় ওভারে এইডেন মার্ক্রামকে স্লিপে ক্যাচ বানিয়ে দ্বিতীয় শিকার ধরেন তাসকিন। ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে ২ উইকেট তার।

রাসি ফন ডার ডুসেনকে নিয়ে বাকি কাজ সারতে কোন সমস্যা হয়নি বাভুমার। যদিও জয়ের ৫ রান আগে ছক্কা মারতে গিয়ে ফেরেন ২২ রান করা ডুসেন। ৩১ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন বাভুমা। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ:  ১৮.২ ওভারে ৮৪   (নাঈম ৯, লিটন  ২৪,  সৌম্য ০, মুশফিক ০, মাহমুদউল্লাহ ৩, আফিফ ০, শামীম ১১, শেখ মেহেদী ২৭, তাসকিন ৩, শরিফুল ০*, নাসুম ০;  মহারাজ ০/২৩, রাবাদা ৩/২০, নরকিয়া ৩/৮, প্রিটোরিয়াস ১/১১, শামসি ২/২১)

দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৩.৩ ওভারে ৮৬/৪   (ডি কক ১৬, হেনড্রিকস ৪, ডুসেন ২২, মার্ক্রাম ০, বাভুমা ৩১*; মিলার ৫*;  তাসকিন ২/১৮ , শরিফুল ০/১৫ , মেহেদী ১/১৯, নাসুম ১/২২, সৌম্য ০/৭)

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচ সেরা: কাগিসো রাবাদা। 

Comments

The Daily Star  | English
Ahsan Khan Chowdhury on national budget 2025

Budget falls short on raising industrial competitiveness

The government must prioritise boosting the competitiveness of all industries if it wants to create more jobs, capture a bigger share of global markets, and strengthen the economy.

12h ago