আবারও উচ্ছেদ আতঙ্কে গাইবান্ধার সাঁওতাল জনপদ

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের জয়পুরপাড়া গ্রামে কাঠ নিয়ে যাচ্ছেন এক সাঁওতাল শিশু ও নারী। সরকার এই এলাকায় ১ হাজার ৮০০ একর জমিতে একটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল তৈরির পরিকল্পনা করছে। ফলে প্রায় দেড় হাজার পরিবার উচ্ছেদের হুমকিতে রয়েছেন। ছবি: মোস্তফা সবুজ

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে যে সাঁওতাল পল্লীতে ২০১৬ সালে আগুন দেওয়া হয়েছিল সেখানকার বাসিন্দারা আবারও ঘর হারানোর পথে। রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল স্থাপনের জন্য উচ্ছেদ হতে পারে এমন ১ হাজার ৫০০ পরিবারের মধ্যে তারাও আছেন।

আজ থেকে ৫ বছর আগে সাঁওতালদের একটি জমি থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৩ জন সাঁওতাল নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিলেন। আহতদের মধ্যে ৯ জন পুলিশও ছিলেন। সাঁওতালদের দাবি ছিল, তারা যে জমিতে বসবাস করছেন তা তাদের পূর্বপুরুষদের জমি। তবে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষের দাবি এটি তাদের জমি।

সংঘর্ষের পর সুবিধাবঞ্চিতদের বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়া হয়। ওই আগুনে বাগদা খামার নামে পরিচিত এলাকার প্রায় ২ হাজার ৫০০ সাঁওতাল ও বাঙ্গালি পরিবার তাদের সব হারায় বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রায় দেড় হাজার পরিবার এখনও সেখানে এবং নিকটবর্তী মাদারপুর ও জয়পুরপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। সরকার যে ইপিজেড প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে তা তাদের গৃহহীন করবে এবং তারা তাদের ফসলি জমি হারাবে।

বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল নজরুল ইসলাম গত ২৪ আগস্ট গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দেখা করেন। তবে বৈঠকে সাঁওতালদের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।

এই ইপিজেডের বিরুদ্ধে সাঁওতালরা নিয়মিত বিক্ষোভ করে আসছেন।

২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর ১ হাজার ৮৩২ দশমিক ২৭ একর জমিতে ইপিজেড প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। জমির মালিকানা দাবিকারী শিল্প মন্ত্রণালয় বেপজাকে জমি হস্তান্তর করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

গত বছর স্থানীয় প্রশাসন জমির আনুমানিক মূল্য ২১৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা নির্ধারণ করে।

ইপিজেডের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল কবির বলেন, 'বেপজাকে জমি হস্তান্তরের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।'

বেপজার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর জানান, ওই স্থানে শিগগির নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

যোগাযোগ করা হলে, সাহেবগঞ্জ-বাগদা খামার ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাঁওতালদের অন্য কাজের অভিজ্ঞতা নেই। তাদের শিক্ষা বা সম্পত্তি নেই। সরকার যদি তাদের আবার উচ্ছেদ করে, তাহলে তাদের থাকার কোনো জায়গা থাকবে না। আমরা এখানে ইপিজেড তৈরি হতে দিতে পারি না।'

তিনি আরও বলেন, 'জমি আমাদের, কিন্তু শিল্প মন্ত্রণালয় বেপজার কাছে বিক্রি করছে। আমরা যেকোনো উপায়ে এটা বন্ধ করবো।'

অনুবাদ করেছেন সুমন আলী

Comments

The Daily Star  | English
nahid-ctg

NCP attacked in Cox's Bazar for exposing the truth: Nahid

Hasnat says those who ruled Bangladesh in the past planned escape routes abroad

43m ago