ধূলো জমেছে শবদাহের বৈদ্যুতিক চুল্লিতে

১৯৯৩ সালে রাজধানীর পোস্তগোলা শ্মশানঘাটে মরদেহ দাহ করার জন্য স্থাপন করা হয় বৈদ্যুতিক চুল্লি। পরিবেশবান্ধব উপায়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মরদেহ দাহ করার জন্য তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশন এই চুল্লি স্থাপন করেন।
শুরুতে মাস তিনেক চালু থাকার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে এ চুল্লি। ছবি: স্টার

১৯৯৩ সালে রাজধানীর পোস্তগোলা শ্মশানঘাটে মরদেহ দাহ করার জন্য স্থাপন করা হয় বৈদ্যুতিক চুল্লি। পরিবেশবান্ধব উপায়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মরদেহ দাহ করার জন্য তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশন এই চুল্লি স্থাপন করেন।

শুরুতে মাস তিনেক চালু থাকার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে এ চুল্লি। একই সঙ্গে ১৩ বছর আগে বৈদ্যুতিক চুল্লিটিকে গ্যাসে রূপান্তরিত করা হলেও, সেটি একদিনের জন্যও ব্যবহার করা হয়নি।

১৮৭৬ সালে তৎকালীন ঢাকার প্রভাবশালী জমিদার বাবু গোবিন্দ চন্দ্র দত্ত পোস্তগোলা মহাশ্মশানের জন্য বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে জমি দান করেন। তৎকালীন স্থানীয় ধণাঢ্যরা শ্মশানটি পরিচালনার জন্য অর্থ দিতেন।

স্থাপনের পর প্রথমে ঢাকা পৌরসভা, পরে সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়নে এ মহাশ্মশান পরিচালিত হয়। ১৯৯৩ সালে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে পোস্তগোলা মহাশ্মশানে পরিবেশবান্ধবভাবে মরদেহ দাহ করার জন্য বৈদ্যুতিক চুল্লি স্থাপন করা হয়। প্রায় ৩ কোটি টাকা খরচ করে এই বৈদ্যুতিক চুল্লি স্থাপন করা হয়।

চালু হওয়ার ৩ মাস পরেই বৈদ্যুতিক চুল্লির ভেতরের কয়েল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে বৈদ্যুতিক চুল্লিটি গ্যাসে রূপান্তরিত করা হয় ২০০৮ সালে। তবে গ্যাসের সংযোগ না থাকায় এটি একদিনের জন্যও চালু করা হয়নি।

চুল্লিটির বর্তমান চিত্র

পোস্তগোলা মহাশ্মশান ঘাটে ৩টি চিতা রয়েছে। যার মধ্যে একটি উন্মুক্ত স্থানে, বাকি ২টি ছাউনির নীচে। এর পাশের ভবনের নীচে মরদেহ স্নান করানোর স্থান। এটির দ্বিতীয় তলায় চুল্লিটি রয়েছে।

কক্ষের ভেতরে বিশালাকৃতির চুল্লি। এর সামনে মরদেহ ভেতরে প্রবেশ করার লাইন। যেটি ধরে মরদেহ চুল্লিতে প্রবেশ করানো হয়। পাশে আরেকটি চুল্লি স্থাপনের জন্য স্থান নির্ধারণ করা রয়েছে। এর একটু পাশেই বৈদ্যুতিক সংযোগের কক্ষ। সেখানে বৈদ্যুতের লাইন দেওয়ার জন্য ২টি যন্ত্র রয়েছে।

উপরে বর্ণিত সবকিছুই এখন ধূলায় ধূসরিত। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না করায় প্রতিটি যন্ত্রের গায়ে ধূলার আস্তরণ, জং ধরেছে অনেক জায়গায়। এর বাইরেও চুল্লিটি অব্যবহৃত থাকায় সেখানে শ্মশানের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রীও সেখানে রাখা হয়েছে।

১৯৯৩ সালে বৈদ্যুতিক চুল্লি স্থাপনের সময় কর্মরতদের মধ্যে বর্তমানে শুধুমাত্র ভারত লাল ডোম রয়েছেন।

তিনি বলেন, 'চালু হওয়ার পর মাস তিনেক এটি চালু ছিল। ৩৫টির মতো মরদেহ এখানে দাহ করা হয়। এরপরে কয়েল নষ্ট হয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আর চালু হয়নি।'

এ বিষয়ে পোস্তগোলা মহাশ্মশানের মহরার অমরেশ মণ্ডল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '১৯৯৩ সালে চালু হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই এটি নষ্ট হয়ে যায়। ২০০৮ সালে এটিকে গ্যাসে রূপান্তরিত করা হয়। কিন্তু গ্যাস সংযোগ না থাকায় একদিনের জন্যও চালু হয়নি।'

তিনি আরও বলেন, 'বৈদ্যুতিক চুল্লি স্থাপনটি সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না। কারণ, এতে মরদেহ ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে দাহ হলেও মেশিন গরম হতেই সময় লেগে যেতো প্রায় ৪ ঘণ্টা। এতে কোনো জেনারেটর সংযোগ ছিল না। ফলে মরদেহ দাহ হওয়ার সময় যদি বিদ্যুৎ চলে যায়, তাহলে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করা সম্ভব ছিল না।'

এ বিষয়ে পোস্তগোলা মহাশ্মশানের দায়িত্বে থাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সহকারী সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা শামছুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি সংস্কারের বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।'

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সমাজকল্যাণ ও বস্তিউন্নয়ন কর্মকর্তা আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিটি করপোরেশন অঞ্চলভিত্তিক নানা সড়ক-স্থাপনা সংষ্কারের জন্য একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তার মধ্যে পোস্তগোলা মহাশ্মশানও রয়েছে।'

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (অঞ্চল-৫) সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, 'পোস্তগোলা মহাশ্মশানের সংস্কারের জন্য আমরা একটি মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। সেখানে আমরা বৈদ্যুতিক চুল্লি বা গ্যাস চুল্লির অপশন রেখেছি। কিন্তু এই শ্মশানে দিনে গড়ে ২টি মরদেহ দাহ করা হয়। সে হিসেবে এই বৈদ্যুতিক চুল্লির ব্যবহার ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে। কারণ, চুল্লি হিট হতেই অন্তত ৩ ঘণ্টা লেগে যায়। এতে প্রচুর বিদ্যুৎ বিল আসবে। ফলে বর্তমানে দাহ করতে যে খরচ হয়, তার থেকে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি খরচ হয়ে যাবে। তারপরও আমরা এই অপশনটি মহাপরিকল্পনায় রেখেছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Gaza still bleeds

Death toll nears 42,000; rallies worldwide calls for ceasefire

3h ago