সূত্রাপুর জমিদার বাড়ি: প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে বসবাস!

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকায় আছে নাম। আইন অনুযায়ী, যা সংরক্ষণের দায়িত্ব সরকারের। সেখানে সরকারি সংস্থারই কর্মচারীদের পরিবার বসবাস করছে। সংখ্যায়ও তারা ৫০ এর ওপর। সেই সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে নতুন ভবনও।
সূত্রাপুর জমিদার বাড়ি। ছবি: ফিরোজ আহমেদ/স্টার

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকায় আছে নাম। আইন অনুযায়ী, যা সংরক্ষণের দায়িত্ব সরকারের। সেখানে সরকারি সংস্থারই কর্মচারীদের পরিবার বসবাস করছে। সংখ্যায়ও তারা ৫০ এর ওপর। সেই সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে নতুন ভবনও।

এ চিত্র রাজধানীর সূত্রাপুরের ৩৩ রেবতী মোহন দাস রোডের সূত্রাপুর জমিদার বাড়ির। শতবর্ষী এ ভবনে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের অর্ধশতাধিক পরিবার দীর্ঘদিন ধরেই বসবাস করছে। তাদের বসবাসের সুবিধার্থে সেখানে তৈরি করা হয়েছে টয়লেট ও রান্নাঘর।

এর পাশাপাশি সেখানে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে দ্বিতল ব্যারাক এবং ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি রাখার জন্য তৈরি হয়েছে ছাউনিও। এসবের বাইরে সেখানে একটি ফায়ার সার্ভিস জাদুঘর নির্মাণেরও পরিকল্পনা করছে সরকার।

নাজির হোসেনের 'কিংবদন্তির ঢাকা' গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ব্রিটিশ আমলের জমিদার রায় বাহাদুর সত্যেন্দ্র কুমার দাস এ ভবনটি নির্মাণ করেন। তার বাবা রেবতী মোহন দাসের নামানুসারে ভবনটির সামনের রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে আর এম দাস রোড।

জমিদার বাড়িটি পাশাপাশি দুটি আলাদা ভবনের সমন্বয়ে তৈরি। যার মধ্যে দক্ষিণ প্রান্তের ভবনটি বেশি প্রাচীন। প্রায় ৫০ ফুট উঁচু প্রবেশ মুখে আছে ৩টি করিন্থিয়ান স্তম্ভ। এর দুই অংশে লতা-পাতামণ্ডিত অর্ধবৃত্তাকার কাঠামো এবং এর নিচে গোলাকার নকশা দেখা যায়। পুরো দালানে বিভিন্ন আয়তনের প্রায় ৩৫টি কক্ষ আছে। উত্তর পাশের তিনতলা ভবনটি রেবতী মোহন দাসের কোনো এক আত্মীয় নির্মাণ করেন বলে জানা যায়। এতেও ৫০ ফুট উঁচু প্রবেশ মুখ এবং প্রায় সমান সংখ্যক কক্ষ আছে।

দেশভাগের সময় জমিদারদের বংশধররা বাড়িটি ত্যাগ করে চলে যান। শত্রু সম্পত্তি হিসেবে যা সরকারের অধিকারে আসে। বর্তমানে ভবনটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এলাকাবাসীও বর্তমানে ভবনটিকে ফায়ার সার্ভিসের কোয়ার্টার হিসেবেই চেনেন এবং জানেন।

দক্ষিণ পাশের ভবনটির পাশে তৈরি করা হয়েছে দ্বিতল একটি ব্যারাক। সেই সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি রাখার জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি ছাউনি। এর বাইরে আরও একটি ছাউনি তৈরির পরিকল্পনাও আছে।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সূত্রাপুর স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম সিকদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফায়ার সার্ভিসের ৫২ জন কর্মচারী এখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। এখানে তারা দীর্ঘদিন ধরেই আছেন। তারা এখানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়েই বসবাস করছেন।'

নতুন ভবন নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, 'এ ভবনটি আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই নির্মিত হয়েছে। আমার জানা মতে, অনুমতি নিয়েই ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এটি আসলে প্রয়োজনেই নির্মিত হয়েছে।'

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকায় ভবনটির নাম থাকলেও, সূত্রাপুর জমিদার বাড়িতে কোনো সাইনবোর্ড দেখা যায়নি। বরং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বিনা অনুমতিতে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার না থাকা সংক্রান্ত একটি সতর্কীকরণ নোটিশ আছে।

এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (ঢাকা) রাখি রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওই এলাকায় কোনো ফায়ার সার্ভিসের কার্যালয় ছিল না। আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করে সূত্রাপুর জমিদার বাড়িতে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন করার অনুমতি দিয়েছিলাম। এ অনুমতি আমরা বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেই দিয়েছিলাম। সেই সঙ্গে জরুরি প্রয়োজনে কয়েকটি পরিবারকে থাকারও অনুমতি দিয়েছিলাম। এর বাইরে একটি ফায়ার সার্ভিস জাদুঘর করারও পরিকল্পনা আছে।'

বর্তমানে সেখানে ৫২টি পরিবার বাস করে- এ তথ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, 'এত ছোট জায়গায় এত পরিবার থাকার কথা নয়। তারপরও আমরা সেখানে পরিদর্শনে যাব।'

Comments

The Daily Star  | English

People with Hajj visas can only travel to Jeddah, Medina and Makkah: KSA

Saudi Arabia has recently announced new rules regarding the issuance of Hajj visas, specifying that the visa will only permit travel to Jeddah, Medina, and Makkah

55m ago