কবরস্থান যখন ছিনতাইকারীদের ঘাঁটি

ঢাকার কালশী কবরস্থান। ছবি: শাহীন মোল্লা

তখন ভোর প্রায় ৫টা। অন্যদিনের মতোই রিকশা চালক আসাদুল ইসলাম তার পল্লবীর বাসা থেকে অটোরিকশায় করে মিরপুরের বাউনিয়া বাঁধ এলাকার রিকশা গ্যারেজের দিকে রওনা হন। আসাদুল ছিলেন অটোরিকশার একমাত্র যাত্রী।

মিরপুর-১১ নম্বরে কালশী কবরস্থানের কাছে পৌঁছাতেই ৩ যুবক তার পথ আটকায়। ছুরির মুখে তার মোবাইল ফোন ও ৩০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। কিছু করার আগেই ছিনতাইকারীরা পাশের কবরস্থানে ঢুকে এক প্রকার অদৃশ্য হয়ে যায়।

হতাশ আসাদুল বলেন, রক্ত পানি করা টাকায় আমি মোবাইল সেটটি কিনেছিলাম। আমার সব টাকা চলে যায় ৪ সদস্যের পরিবারের পেছনে। নতুন একটা সেট কেনার টাকা জমাতে আমার অনেক সময় লেগে যাবে।

'ছিনতাই হওয়ার পর আমি ৫টার বদলে সকাল ৭টার দিকে বের হই। রাতেও আমি এই এলাকা দিয়ে যেতে ভয় পাই।'

আসাদুলের ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এই এলাকার অনেক বাসিন্দা, বিশেষ করে পোশাক শ্রমিকরা প্রায়ই ছিনতাইয়ের শিকার হন। স্থানীয়রা বলছেন, ছিনতাইকারীরা এলাকাটিকে 'হিটিং জোন' হিসেবে বেছে নিয়েছে। কারণ ছিনতাইয়ের পর কবরস্থানের ভেতর দিয়ে সহজেই পালিয়ে যাওয়া যায়।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, কবরস্থানটির দেয়ালের উচ্চতা ৩ থেকে ৫ ফুট। ফলে পুলিশ বা স্থানীয়রা ধাওয়া দিলেও ছিনতাইকারীরা লাফ দিয়ে কবরস্থানের ভেতরে ঢুকে যেতে পারে।

জুরাইন কবস্থান। ছবি: শাহীন মোল্লা

পল্লবী ১২ নম্বর সেকশনের বাসিন্দা মো. সুমন এই কালশী কবরস্থানকে ঘিরে তার অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, 'জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে এক রাতে আমি ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ি। তারা আমার কাছ থেকে মোবাইল সেটসহ ৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে আগস্ট মাসে সকাল ৬টার দিকে আমি আবার ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ি। এই দফায় তারা আমার মোবাইল সেট ছিনিয়ে নিয়ে কবরস্থানে চলে যায়।'

কবরস্থানের এক কর্মী জানান, রাতে এর বেশিরভাগ এলাকা অন্ধকার থাকে। ছিনতাইকারীরা এতে বাড়তি সুবিধা পায়। তিনি বলেন, ভেতরে লাফিয়ে পড়ার পর ছিনতাইকারীরা অন্ধকারের ভেতর দিয়ে এক পাশ থেকে আরেক পাশে চলে যায়।

এলাকাবাসীর ভাষ্য, পালানোর পথ ও লুকানোর জায়গা হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি কবরস্থানটিকে ছিনতাইকারীরা মাদকের স্পট হিসেবেও ব্যবহার করে।

এই চিত্র কেবল কালশীতে সীমাবদ্ধ নেই। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার কবরস্থানেও একই ঘটনা ঘটছে বলে জানা যাচ্ছে।

এই দুটি কবরস্থানে গিয়ে দেখা যায়, মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে কোনো নিরাপত্তা প্রহরী নেই। রায়েরবাজার কবরস্থান পাহারা দিচ্ছেন মাত্র একজন। অন্যদিকে মধ্যরাতে মিরপুর কবরস্থানে গিয়ে অন্ধকারের মধ্যে কিছু কিশোরকে মাদক সেবন করতে দেখা যায়।

১১৮ একর আয়তনের মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের জ্যেষ্ঠ মোহরার সানোয়ার হোসেন জানান, এর কয়েক জায়গায় কোনো সীমানা দেয়াল নেই। রায়েরবাজার কবরস্থানের চিত্রও একই রকম।

রায়েরবাজারের ৯৬ একর আয়তনের কবরস্থানটি পাহারার জন্য নিরাপত্তা প্রহরী আছেন মাত্র একজন। ফলে, এটি অরক্ষিতই রয়ে গেছে। আর অপরাধীদের জন্য একটি নিরাপদ জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশ এই কবরস্থানের ভেতরে গাছে ঝুলানো এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে।

রায়েরবাজার কবরস্থানের মোহরার আব্দুল আজিজের ভাষ্য, এতো বড় একটা জায়গার সবকিছু নজরদারিতে রাখা একজন মানুষের পক্ষে অসম্ভব।

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (মিরপুর ডিভিশন) মাহতাব উদ্দিন জানান, তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন এবং এর মধ্যে তারা কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছেন।

কবরস্থান এলাকাগুলোতে টহল আরও বাড়ানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'কবরস্থানগুলোতে আমরা টহল বাড়িয়েছি। রাতে এখন ২টি টহল দল টহল দিচ্ছে।'

একই সঙ্গে তিনি কবরস্থানগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য আনসার সদস্যসহ আরও নিরাপত্তা প্রহরী যুক্ত করার পরামর্শ দেন এবং উঁচু সীমানা দেয়াল তৈরির কথা বলেন।

ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান, কবরস্থানগুলোর সীমানা দেয়ালের উচ্চতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি তার সমাজকল্যাণ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেবেন।

অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

Stocks fall on poor performance of large companies

Indexes of the stock market in Bangladesh declined yesterday on rising the day before, largely due to the poor performance of Islami Bank Bangladesh along with the large-cap and blue-chip shares amid sales pressures..Large-cap refers to shares which account for large amounts in market capi

2h ago