অ্যান্টিবায়োটিকের অতি ব্যবহারে স্বাস্থ্যখাতে বিপর্যয়

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

সম্প্রতি এক সমীক্ষায় জানা গেছে, দেশের সব জরুরি ও বহুল ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ৫০ শতাংশেরও বেশি কার্যকারিতা হারিয়েছে। এতে দেশের পুরো জনগোষ্ঠী যে কোনো ধরনের মহামারির বিরুদ্ধে অরক্ষিত থেকে যেতে পারে।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকাভুক্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৫টি ওষুধ ক্রমশ অকার্যকর হয়ে পড়ছে বলে ২০১৭ থেকে ২০২১ এর মধ্যে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) পরিচালিত এই সারভেইলেন্স গবেষণা থেকে জানা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা গতকাল একটি অনুষ্ঠানে বলেন, 'এই গবেষণা থেকে যে বার্তা পাওয়া গেছে, তা হচ্ছে পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক।' এই অনুষ্ঠানে ১০টি প্রাধান্য পাওয়া প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে ২১টি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের কার্যকারিতার ব্যাপারে আলোচনা করা হয়।

ওষুধগুলো মূত্রনালীর সংক্রমণ, সেপ্টিসেমিয়া, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া এবং ক্ষত সংক্রমণের মতো রোগের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াগুলোর বিরুদ্ধে পরীক্ষা করা হয়েছিল।

৯টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালিত এই সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্যাকটেরিয়াগুলোর ৯ শতাংশ পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত সব অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে সহনীয়।

ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং পরজীবীর মতো অণুজীবকে ধ্বংস করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতাকে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) বলা হয়।

ফ্লোরা বলেন, 'এএমআর অন্য এক ধরনের মহামারি। আমাদের এমন হওয়া উচিত নয় যে—রোগ নির্ণয় হলো, সেই রোগের ওষুধও আছে কিন্তু সেটা রোগ সারাতে পারছে না।'

ওয়ান হেলথ বাংলাদেশের জাতীয় সমন্বয়কারী নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ জানান, ডেটা দেখে মনে হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার প্র্যাকটিশনারদের দ্বারা পরিচালিত হয়।

'আমাদের এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে। পেশাদারদের শক্তিশালী উদ্যোগ নিতে হবে। এএমআর জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতি উভয়ের জন্যই একটি চ্যালেঞ্জ,' তিনি যোগ করেন।

অ্যান্টিবায়োটিকগুলোকে মূলত তিনটি সেটে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। এগুলো হচ্ছে, প্রাথমিক পর্যায়ের সংক্রমণের জন্য 'অ্যাক্সেস গ্রুপ', উচ্চ সহনশীল ব্যাকটেরিয়ার জন্য 'ওয়াচ গ্রুপ' এবং পরিশেষে সব বিকল্প ব্যর্থ হলে 'রিজার্ভ গ্রুপ।'

২১টি অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে ৭টি অ্যাক্সেস গ্রুপ, ৯টি ওয়াচ গ্রুপ এবং ২টি রিজার্ভ গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। এদের মধ্যে ১৫টি ক্রমশ অকার্যকর হয়ে পড়ছে বলে পরীক্ষায় উন্মোচিত হয়েছে।

২০২১ সালে ওয়াচ গ্রুপের ওষুধ সেফটাজিডিম ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ২০১৭ সালে এর অকার্যকারিতার হার ছিল ৬২ শতাংশ।

একই সময়সীমার মধ্যে ওয়াচ গ্রুপের বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা বেড়েছে, যেমন সেফিক্সিম (৫২ থেকে ৫৮ শতাংশ), সেফেপিম (৫৭ থেকে ৬১ শতাংশ), সেট্রিয়াক্সোন ৫২ থেকে ৬৫ শতাংশ), সিপ্রোফ্লোক্সাসিন (২০ থেকে ৪০ শতাংশ) ও কার্বাপেনেম (২০ থেকে ৪০ শতাংশ)।

একই সময়ে অ্যাক্সেস গ্রুপের ওষুধ ডক্সিসাইক্লিন ও টেট্রাসাইক্লিনের উপযোগিতা বেড়েছে। তাদের অকার্যকারিতার হার কমে যথাক্রমে ৪৭ থেকে ৩৯ শতাংশ এবং ৫৮ থেকে ৫৪ শতাংশ হয়েছে।

আইইডিসিআরের লিড ইনভেস্টিগেটর ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান জাকির হোসেন হাবীব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এর পেছনে কারণ হতে পারে এই ওষুধগুলোর কম ব্যবহার। চিকিৎসকরা মূলত ওয়াচ ও রিজার্ভ গ্রুপের ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন।'

অ্যাক্সেস গ্রুপের ওষুধের মধ্যে উপযোগিতা হারিয়েছে এ রকম ওষুধ হচ্ছে নাইট্রোফিউরানটয়েন, সালফামেথোক্সাজোল-ট্রাইমেথোপ্রিম, অ্যাম্পিসিলিন, অ্যামোক্সিসিলিন-ক্লাভুলানেট ও জেন্টামাইসিন। তবে পেনিসিলিনের উপযোগিতা সামান্য বেড়েছে।

রিজার্ভ গ্রুপের ওষুধ অ্যাজট্রিওনামের অকার্যকারিতা ৫৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬১ শতাংশ হয়েছে এবং লিনেজোলিডের ক্ষেত্রে তা ৩৭ শতাংশে অপরিবর্তিত রয়েছে।

বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এসেনশিয়াল ড্রাগস অ্যান্ড মেডিসিনের কারিগরি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ রামজি ইসমাইল বলেন, 'আমরা ফার্স্ট-লাইন অ্যান্টিবায়োটিক (অ্যাক্সেস গ্রুপ) হারিয়ে ফেলছি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় লাইন অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ব্যয়বহুল এবং টক্সিক।'

তিনি আরও জানান, নতুন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের ক্ষেত্রে গবেষণার পাইপলাইনে শুধুমাত্র অল্প কিছু আশাব্যঞ্জক বিকল্প রয়েছে।

এএমআরের সঙ্গে মোকাবিলায় ইসমাইল 'ওয়ান হেলথ' দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বনের আহ্বান জানান। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ওয়ান হেলথে ভালো উন্নতি করেছে।

ওয়ান হেলথে স্বীকার করা হয় মানুষ যে পরিবেশে থাকে এবং সে পরিবেশের অন্যান্য প্রাণীদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির সঙ্গে তার নিজের স্বাস্থ্যের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।

কোনো কোনো দেশে চিকিৎসার চেয়ে খাদ্য উৎপাদনে অ্যান্টিবায়োটিক বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে।

'আমাদের এই ফ্র্যাজাইল ওষুধের অপব্যবহারে অবদান রাখে এমন সমস্ত আচরণকে চিহ্নিত করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে,' তিনি যোগ করেন।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Not going anywhere till the job is done: Adviser Wahiduddin Mahmud

When asked about the chief adviser's resignation the adviser said, 'But he did not say he was leaving'

45m ago