ছাত্রদের বাস ভাড়া অর্ধেকের দাবি মেনে নিন

তেলের মূল্য বৃদ্ধি করার কয়েকদিনের মধ্যেই পরিবহন মালিকরা ঠিকই আন্দোলন করে সরকারের কাছ থেকে বাসে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার দাবি আদায় করেছে। যদিও পরবর্তিতে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ওপেক তেলের দাম আরও কমানোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে, তাতে তেলের দাম শিগগির আরেক দফা কমবে। কিন্তু তাতে কি পরিবহন ভাড়া আবার কমবে? সেটা হবে না। কারণ বাংলাদেশে একবার কোনো কিছুর দাম বাড়লে তা আর কখনো কমে না।
ছবি: স্টার

তেলের মূল্য বৃদ্ধি করার কয়েকদিনের মধ্যেই পরিবহন মালিকরা ঠিকই আন্দোলন করে সরকারের কাছ থেকে বাসে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার দাবি আদায় করেছে। যদিও পরবর্তিতে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ওপেক তেলের দাম আরও কমানোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে, তাতে তেলের দাম শিগগির আরেক দফা কমবে। কিন্তু তাতে কি পরিবহন ভাড়া আবার কমবে? সেটা হবে না। কারণ বাংলাদেশে একবার কোনো কিছুর দাম বাড়লে তা আর কখনো কমে না।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার যে বাস ভাড়া বাড়িয়েছে তাতে একজন ছাত্রের প্রতিমাসে বাসভাড়া বাবদ বাড়তি খরচ হবে দেড় হাজার টাকা। কোনো পরিবারে দুই জন শিক্ষার্থী থাকলে তাদের মাসে বাড়তি খরচ হবে তিন হাজার টাকা। একটি গরির, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারে কোথা থেকে আসবে এ বাড়তি অর্থ? এক্ষেত্রে তো লীগ-দলের সব পরিবারই ভূক্তভোগী হবেন। আমাদের দেশের আর্থিক কাঠামো তাই বলে। তাহলে তারা নির্বিকার কেন? দলান্ধতা ও সামান্য স্বার্থ-সুবিধা কি তাদের প্রতিবাদহীন করেছে?

ঢাকায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বাসে অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে আন্দোলন করছে। এ জন্য তাদের আন্দোলন করার কথা ছিল না। কারণ এ দাবি স্বাধীনতার আগে ১১ দফাতেও পরোক্ষভাবে ছিল। স্বাধীনতার পরও যতগুলো বড় ছাত্র আন্দোলন হয়েছে সেখানেও এ দাবি ছিল। প্রায় সকল ছাত্র্র সংগঠনের কর্মসূচিতেও কনসেশনের কথা লেখা আছে। কিন্তু আমাদের দেশে নীতিকথা, হক কথা শুধু প্রচার ও বলার বিষয়- তা চর্চা ও পালনের বিষয় না।

তিন দশক আগে ৯০ এর গণআন্দোলনের- ১০ দফার ৩ এর 'ক'তে ছিল, 'রেল, বাস, লঞ্চ, স্টিমারসহ সকল যানবাহনে ছাত্রছাত্রীদের ৫০ শতাংশ কনসেশন দিতে হবে। হল, হোস্টেল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিনসমূহে পর্যাপ্ত পরিমাণে সাবসিডি দিতে হবে। সরকারি উদ্যোগে ভর্তুকি দিয়ে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বইপুস্তক, খাতাকলম, কালিসহ সকল শিক্ষাউপকরণ স্বল্পমূল্যে সরবরাহ করতে হবে।' ৯০ সালে এ দাবি সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের ঘোষণা হলেও তা আসলে প্রণীত হয়েছিল ১৯৮২ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে। এবং এই দাবির সঙ্গে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ দেশের সব ক্রীয়াশীল সংগঠন যুক্ত ছিল।

এই দাবি আদায়ের কথা ছিল ছাত্রদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করা ছাত্রদের ট্রেড ইউনিয়ন ছাত্র সংগঠনগুলোর। কিন্তু তারা কোথায়? তারা এই আন্দোলনে নেই কেন? তাহলে তাদের কাজ কী? তারা যদি ছাত্রদের স্বার্থের পক্ষে না দাড়ায়, তাহলে এই সাইনবোর্ডের দরকার কী? ১০ দফায় স্বাক্ষর ও প্রণয়নকারীদের একটি প্রধান সংগঠন ছিল ছাত্রলীগ। সেই ছাত্রলীগ আজ সাধারণ ছাত্রদের পরিবহন কনসেশনের ন্যায্য আন্দোলনে বিভিন্ন জায়গায় হামলা করছে। যে কাজ স্বৈরাচার করতে পারেনি, সেই কাজ করছে তারা।

২০১৮ সালে দেশ-বিদেশে আলোচিত নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে ৯ দফা দাবি প্রদান করা হয়েছিল। সরকার সে সময় তা মেনে নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তও জানিয়েছিলেন। সাধারণ শিক্ষার্থীর সে ৯ দফার ৭ নং দাবি ছিল, 'শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।' সরকার সে সময় এ দাবি মানার নীতিগত সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন কিন্তু তা কার্যকরে কোন পদক্ষেপ নেননি। সেটার কারণ কী? কোনো কিছুর তাৎক্ষনিক আইনি কাঠামো তৈরি না হলে তার আসলে কোনো ভিত্তি থাকে না। সে জন্যই ছাত্ররা সে সময় মাঠ ছাড়তে চায়নি। তারা এখন বুঝতে পারছে সেটা ছিল শাসকের দাবি না মানার কৌশল ও ছলচাতুরি। সরকার আবারো সেই এক কৌশল নিয়ে ছাত্রদের ঘরে ফেরার কথা বলছে। কিন্তু এবার দাবি আদায়ের আইনি কাঠামো না হওয়া অবধি মাঠ ছেড়ে যাওয়া হবে আরেকটি বড় ভুল।

বাসে ছাত্রদের হাফ-পাস দাবি আদায়ের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঢাকায় পরিবহন দুর্ঘটনায় নিহত নটরডেম কলেজের ছাত্র নাঈমের ইস্যু। এই পরিবহন দুর্ঘটনায় নিহত দুই ছাত্রের মৃত্যু থেকে তিন বছর আগে আলোচিত নিরাপদ সড়ক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল যা আবার ক্রমে গড়ে উঠছে। বাংলাদেশে ৫ কোটির উপর শিক্ষার্থী আছে যারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে। পরিবহন মালিক-শ্রমিক মিলে বাংলাদেশে ১ কোটিও হবে না। পরিবহন মালিকরা যদি সরকারের কাছ থেকে মুহুর্তেই তাদের দাবি আদায় করতে পারে, তাহলে ছাত্ররা কেন পারে না? প্রধান ছাত্র সংগঠনগুলো কি তবে ক্ষমতা রক্ষা ও দখলের হাতিয়ার ছাড়া অন্য কিছু নয়? অথচ এই ছাত্ররাই দেশের ভাষা-স্বাধীনতা-গণতন্ত্রের সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু আজ তারা সামান্য ছাত্র স্বার্থের পক্ষে দাড়াতে পারছে না। তাদের সে ব্যর্থতার স্থান দখল করছে সাধারণ ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা স্বতস্ফুর্ত ছাত্র স্বার্থ আন্দোলন।

ড. মঞ্জুরে খোদা: গবেষক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক ছাত্রনেতা

Comments

The Daily Star  | English
Increased power tariffs to be effective from February, not March: Nasrul

Improving summer power supply: Govt pays half the subsidy power ministry needs

The Finance Division last week disbursed Tk 1,500 crore in subsidy against the power ministry’s demand for the immediate release of Tk 3,000 crore to boost electricity supply during the summer months.

8h ago