আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসনে এখনো পিছিয়ে অনেক জেলা

কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য বিদেশে চাকরির সুযোগ বেড়েছে। তবে অধিকাংশ জেলায় নিয়োগ কার্যক্রমের অভাবে আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসন বেশ কম। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুসারে, ২০০৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে প্রায় ৮৭ লাখ ৬ হাজার কর্মী বিদেশে গেছেন।
এই হিসাব অনুযায়ী, দেশের প্রতিটি জেলা থেকে গড়ে ১ লাখ ৩৬ হাজার কর্মীকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। অথচ, এর মধ্যে প্রায় ৬৩ লাখ ৯১ হাজার জন কর্মী গেছেন ২০টি জেলা থেকে। এই ২০ জেলার মধ্যে ১৬টি চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের।
এই সময়ের মধ্যে রংপুরের ৮টি জেলার প্রতিটি জেলা থেকে নিয়োগকৃত শ্রমিকের সংখ্যা গড়ে মাত্র ১৯ হাজার ১৯৭ জন।
অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকেইউপি) চেয়ারপারসন শাকিরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষ প্রায়ই অভিবাসন খরচের জন্য ৩ থেকে ৫ লাখ টাকার ব্যবস্থা করতে পারে না। কারণ সেখানে টাকার নগদ-প্রবাহ কম এবং ব্যবসার সম্ভাবনা কমের কথা বিবেচনায় সেখানে সাব-এজেন্ট বা মধ্যস্থতাকারীদের সংখ্যাও অনেক কম।
বিএমইটির তথ্য মতে, সামগ্রিকভাবে ১৯৭৬ সাল থেকে চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৩৩ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে চাকরি পেয়েছেন।
এই খাত সংশ্লিষ্ট ও শ্রম অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা জানান, অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় অনেক জেলায় নিয়োগ কার্যক্রম কম হতে পারে।
বিদ্যমান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এজেন্সিগুলো মাঠপর্যায় থেকে কর্মী নিয়োগের জন্য সাব-এজেন্ট বা মধ্যস্থতাকারীদের ওপর নির্ভর করে।
তারা জানান, সাব-এজেন্টরা সাধারণত মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ এমন এলাকায় কাজ করেন না।
তাদের মতে সরকারকে জেলাভিত্তিক কর্মী নিয়োগে বিদ্যমান ভারসাম্যহীনতা দূর করতে হবে।
বিএমইটির তথ্য মতে, ২০০৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে নিয়োগকৃত শ্রমিকের সংখ্যার হিসাবে শীর্ষ ১০টি জেলা হলো—কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল, ঢাকা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ ও ফেনী।
ওয়ারবে ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন সৈয়দ সাইফুল হক জানান, দেশের লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বেশিরভাগই ওইসব জেলায় বা আশেপাশের এলাকার।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক ফিন্যান্স সেক্রেটারি ফখরুল ইসলামও সাইফুলের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো 'পিছিয়ে থাকা' জেলাগুলোতে সাব-অফিস খুলতে পারে, তবে তাদের লাভের বিষয়ে আবার ভাবতে হবে।
বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেন, 'জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো পিছিয়ে থাকা অঞ্চল থেকে কর্মী নিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।'
বায়রার ১ হাজার ৩০০টির বেশি তালিকাভুক্ত সদস্য আছে৷
বিএমইটির মতে, এ বছরের মে পর্যন্ত দেশে কমপক্ষে ১ হাজার ৪৩৪টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিক্রুটিং এজেন্সি ছিল।
ওকেইউপি চেয়ারপারসন শাকিরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উত্তরাঞ্চলের মানুষ অনেকক্ষেত্রেই বিদেশে যাওয়ার জন্য খরচের ৩ থেকে ৫ লাখ টাকার ব্যবস্থা করতে পারেন না।'
তিনি বলেন, 'যেহেতু এই অঞ্চলে টাকার নগদ প্রবাহ কম, তাই সাব-এজেন্ট বা মধ্যস্থতাকারীদের উপস্থিতিও সেখানে কম। কারণ তারা জানেন, সেখানে তাদের ব্যবসার সম্ভাবনা কম।'
তিনি জানান, খুলনা ও বাগেরহাট থেকে বিদেশে কম কর্মী যাওয়ার পেছনেও কারণ হচ্ছে দরিদ্রতা।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দারিদ্র্যপীড়িত জেলাগুলো থেকে আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসন কয়েক বছর ধরেই কম।'
তিনি বলেন, 'পরিস্থিতির উন্নতির জন্য শ্রমিকদের প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিতে হবে এবং প্রয়োজনে তাদের জন্য কোটা ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।'
'এ ছাড়া, পিছিয়ে থাকা অঞ্চলগুলো থেকে নির্দিষ্ট শতাংশ কর্মী নিয়োগের জন্য নিয়োগকারী সংস্থাগুলোকে একটি নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে,' তিনি যোগ করেন।
শরিফুল হাসান আরও বলেন, 'উত্তরাঞ্চলের মানুষের ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা কম থাকাও অভিবাসন সংখ্যা কম হওয়ার পেছনে একটা কারণ হতে পারে।'
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএমইটির মহাপরিচালক শহিদুল আলম বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা সম্প্রতি মাঠ থেকে সরাসরি কর্মী নিয়োগের জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অংশগ্রহণে চাকরি মেলার আয়োজন করছেন।
তিনি সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ইতোমধ্যে অক্টোবরে দেশের ১২টি এলাকায় এই ধরনের মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি জানান, পিছিয়ে থাকা এলাকায় রিক্রুটিং এজেন্সি খোলা এবং বিদ্যমান এজেন্সিগুলোকে সাব-অফিস খুলতে উৎসাহিত করাসহ আরও বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তারা।
অনুবাদ করেছেন সুমন আলী
Comments