টেস্টে নাঈম শেখ: প্রধান নির্বাচকের ব্যাখ্যা কতটা যৌক্তিক?

naim sheikh & minhajul abedin nannu

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের নানান সিদ্ধান্তে শোরগোল হয়েছিল চড়া। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের আগে তাই ওই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার আওয়াজ শোনা গিয়েছিল জোরেশোরে। কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর ক্ষমতা কমিয়ে খালেদ মাহমুদ সুজনকে করা হয় টিম ডিরেক্টর। অথচ পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজেও দেখা গেল প্রক্রিয়া অনুসরণ না করার নজির। নির্বাচকদের কাছ থেকে মিলল অদ্ভুত সব ব্যাখ্যা।

পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের জন্য দেওয়া হয় ২০ জনের স্কোয়াড। টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে সাইফ হাসান ছিটকে যাওয়ায় এখন সেটি ১৯ জনের। এক টেস্টের জন্য এত বড় স্কোয়াড নিয়ে নির্বাচকদের ব্যাখ্যা শুধু পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টই নয়, নিউজিল্যান্ড সফর মাথায় রেখেই করা হয়েছে এতবড় স্কোয়াড। সেরকম হলে একসঙ্গে নিউজিল্যান্ড সফরের দলটাই তো দিয়ে দেওয়া যেত। 

তবে এসব কিছুকেই ছাপিয়ে গেছে টেস্ট স্কোয়াডে নাঈম শেখের অন্তর্ভুক্তি এবং এই বিষয়ে প্রধান নির্বাচকের ব্যাখ্যা।

গত কয়েক মাস ধরে জাতীয় দলের হয়ে টানা টি-টোয়েন্টি খেলছিলেন নাঈম। এই বাঁহাতি ওপেনারের টি-টোয়েন্টি পারফরম্যান্সই যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ। দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটেও  কোন পর্যায়েই তিনি পরীক্ষিত নন। সবশেষ প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছেন ১৮ মাস আগে। সেখানেও দুই ইনিংসে পান পেয়ার (০ ও ০)। মাত্র ৬টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে কেবল ১৬.৬৩ গড় তার।

লাল বলের ক্রিকেটে ঘরোয়া পর্যায়েও তিনি কেমন করবেন, সেই পরীক্ষাটা বাকি। তাকে হুট করে ডাকা হয়েছে টেস্ট দলে। এর কারণ ব্যাখ্যায় প্রধান নির্বাচক বলেন, ''নাঈম গত এক বছর ধরে ছোট সংস্করণের ক্রিকেটে খেলছে। ওর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলার অভিজ্ঞতা তৈরি হয়েছে। তাই ওকে টেস্ট দলে নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, আমাদের ওপেনাররাও বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। তাই টিম ম্যানেজমেন্ট চিন্তা করেছে ওকে দলে অন্তর্ভুক্ত করার। আর আমরা আশা করি, সুযোগ পেলে নাঈম টেস্টে ভালো করবে।'

অর্থাৎ নাঈমের টেস্ট দলে আসার যুক্তি হচ্ছে তিনি গত কয়েক মাসে বেশ কিছু টি-টোয়েন্টি খেলেছেন! টেস্ট ভিন্ন বলের খেলা, ভিন্ন পরিস্থিতির ক্রিকেট। সেখানে বোলারদেরও কৌশল থাকে আলাদা। দেশের ক্রিকেটের এক সময়ের কাণ্ডারি মিনহাজুলের তা না জানার কারণ নেই। তারপরও তিনি যে ব্যাখ্যা দিয়েছে  তা যথেষ্ট বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।

বলা চলে বাংলাদেশ দল যেন এখন পরীক্ষাগার, সেখানেই নতুন সংযোজন হবেন নাঈম। টি-টোয়েন্টিতে নাঈমের খেলার ধরণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে গত মাস ধরেই। তার হাতে শট কম। টি-টোয়েন্টি খেলেন মন্থর গতিতে। কিছু রান পেলেও তাতে দলের চাহিদা মেটে না, উলটো দল পড়ে যায় চাপে। এখন টি-টোয়েন্টি মন্থর খেলেন বলেই কি তাকে টেস্টে নিয়ে নেওয়া?

টি-টোয়েন্টিতে বোলাররা করেন ডিফেন্সিভ বোলিং, রান আটকে দেওয়া থাকে মূল কাজ। টেস্টে দেখা যায় আক্রমণাত্মক বোলিং। টি-টোয়েন্টিতে মন্থর খেলা কোন ব্যাটসম্যান টেস্টে সফল হয়ে যাবেন এই সিদ্ধান্তে আসা তাই মুশকিল। সাদা বল, লাল বলের মধ্যেও আছে ফারাক। ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা বুঝে ফিল্ড সাজানোর স্বাধীনতাও থাকে বোলারদের। টি-টোয়েন্টিতে গত কয়েকমাস ধরে খেলেছেন বলেই একজনকে টেস্টে বিবেচনা করার এমন নজির সারা দুনিয়াতেই বিরল। নাঈম টেস্টে নেমে পারফর্ম করে ফেললেও এই নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তাই থাকবে।

এবার জাতীয় লিগে তিন নম্বরে ৬ ম্যাচে ৬০ গড়ে ৬০৩ রান করেছেন ফজলে মাহমুদ রাব্বি। ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত এই নামকে বিবেচনায় নেননি নির্বাচকরা। প্রধান নির্বাচকের ব্যাখ্যা ঘরোয়া ক্রিকেট ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ফারাক থাকায় জাতীয় লিগের এসব পারফরম্যান্স তাদের বিচারে আসছে না। কিন্তু প্রশ্ন আসতে পারে, এসব ঘরোয়া ক্রিকেটেও যিনি এখনো নিজেকে প্রমাণই করতে পারেননি, তাকে দল নেওয়ার আসলে কারণ কি?

চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে দলের হয়ে কথা বলতে এসে কোচ ডমিঙ্গো জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের টেস্ট সংস্কৃতি তাকে করে হতাশ। দল নির্বাচন প্রক্রিয়া টেস্ট সংস্কৃতিরই একটা অংশ। নাঈমকে দলে নেওয়া এবং কারণ ব্যাখ্যায় সেই সংস্কৃতির দীনতাই যেন আবার তুলে ধরল।

এই পাকিস্তান সিরিজেই অবশ্য এমন অদ্ভুতুড়ে একাধিক সিদ্ধান্ত দেখা গিয়েছে। টেস্টের জন্য বরাবর বিবেচনায় থাকা সাইফকে হুট করে ডেকে এনে খেলিয়ে দেওয়া হয় টি-টোয়েন্টি। অনুমিতভাবেই তিনি সেখানে হন ব্যর্থ। টি-টোয়েন্টির জন্য যার নাম থাকে আলোচনায় সেই পারভেজ হোসেন ইমনকে শেষ টি-টোয়েন্টির আগে তড়িঘড়ি ডেকেও খেলানো হয়নি। নিয়মরক্ষার ম্যাচ খেলিয়ে দলের সেরা পেসার তাসকিন আহমেদকে ফেলা হয় ইনজুরি ঝুঁকিতে। হাতে সেলাই লাগায় যাকে বাংলাদেশ পায়নি প্রথম টেস্টে।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Yunus, Tarique will decide what they'll discuss, says Shafiqul

The CA's press secretary says there is no specific format for the meeting but anything, including the current political situation, election timeline announced by the chief adviser, reforms, and July Charter can be discussed

42m ago