৩০০ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করল পাকিস্তান

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

বৃষ্টির বাধা এড়িয়ে অবশেষে খেলা মাঠে গড়ালে পেসারদের কল্যাণে দিনের শুরুতে ২ উইকেট তুলে নিল বাংলাদেশ। এরপর আর সাফল্য পেল না তারা। কেবলই হতাশা বাড়ল মুমিনুল হকদের। জোড়া আঘাত সামলে ফাওয়াদ আলম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়াল পাকিস্তান। দুজনই হাফসেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর এলো ইনিংস ঘোষণা।

মঙ্গলবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় সেশনের পানি পানের বিরতির পর প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে সফরকারী পাকিস্তান। ৯৮.৩ ওভার খেলে তারা ৪ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ঠিক ৩০০ রান।

ফাওয়াদ ৯৬ বলে ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন। ইনিংসের শেষ বলে হাফসেঞ্চুরির ব্যক্তিগত মাইলফলক স্পর্শ করেন এই বাঁহাতি। তার আগে ফিফটি তুলে নেওয়া উইকেটরক্ষক-ব্যাটার রিজওয়ান ৯৪ বলে করেন অপরাজিত ৫৩ রান। তাদের অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম উইকেট জুটির রান ১৮৪ বলে ১০৩।

৪ উইকেটে ২৪২ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে গিয়েছিল পাকিস্তান। খেলা ফের শুরু হলে চতুর্থ ওভারেই উইকেট পেতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু পেসার ইবাদত হোসেনের বলে লং লেগে রিজওয়ানের ক্যাচ ফেলে দেন তাইজুল ইসলাম। আগে দুবার রিভিউ নিয়ে বাঁচা এই ডানহাতি বেঁচে যান আরেক দফা। তখন তিনি ছিলেন ৩০ রানে। এরপর বাঁহাতি স্পিনার তাইজুলকেই লং-অন দিয়ে ছক্কা মেরে ফিফটিতে পৌঁছে যান তিনি। পরে তার সঙ্গী হন ফাওয়াদ।

দ্বিতীয় সেশনে তুলনামূলক দ্রুতগতিতে রান তুলেছে পাকিস্তান। ইনিংস ঘোষণার আগে ১৫.৩ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে তোলে ৫৮ রান। এসময়ে রান তুলতে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে পড়তে হয়নি ফাওয়াদ ও রিজওয়ানকে।

এর আগে প্রথম সেশনে খেলা হয় ১৯.৪ ওভার। পাকিস্তান ২ উইকেট খুইয়ে যোগ করে ৫৪ রান। আজহারকে ফেরান ইবাদত। পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবরকে বিদায় করেন আরেক পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ।

৬৩.২ ওভারে আগের ২ উইকেটে ১৮৮ রান নিয়ে চতুর্থ দিনে খেলতে নামে পাকিস্তান। খালেদ তার অসমাপ্ত ওভারটি করার পর আরেক প্রান্ত থেকে বোলিংয়ে আসেন ইবাদত। তার নিরীহ একটি ডেলিভারিতে উইকেট হারান আজহার। তার ব্যাট থেকে আসে ৫৬ রান। ১৪৪ বলের ইনিংসে ৮টি চার মারেন তিনি। আজহারের বিদায়ে ভাঙে পাকিস্তানের ২৪০ বলে ১২৩ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি।

শর্ট ডেলিভারি পুল করতে চেয়েছিলেন আজহার। তবে ব্যাটে-বলে সংযোগ হয়নি ঠিকঠাক। টপ এজ হয়ে বল উঠে যায় উপরে। সহজ ক্যাচটা লুফে নিতে ভুল করেননি উইকেটরক্ষক লিটন দাস।

স্কোরবোর্ডে আর ৪ রান যোগ হতে বিদায় নেন বাবর। তাকে ঝুলিতে পুরে তৃতীয় টেস্টে এসে শেষ হয় খালেদের অপেক্ষার। এই সংস্করণে নিজের প্রথম উইকেটের স্বাদ পান তিনি। নিঃসন্দেহে তার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে উইকেটটি।

অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢোকা বলটি কিছুটা নিচু হয়েছিল। বাবরের প্যাডে লাগার পর আম্পায়ার আঙুল উঁচিয়ে দেন আউটের সিদ্ধান্ত। রিভিউ নিয়েছিলেন সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার। তাতে কাজ হয়নি। বরং নষ্ট হয় সেটা। বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায়, লেগ স্টাম্প উপড়ে যেত। বাবর সাজঘরে ফেরেন ৭৬ রানে। তার ১২৬ বলের ইনিংসে চার ৯টি ও ছয় ১টি।

শূন্য রানে থাকা অবস্থায় রিজওয়ানকে আউটের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন আম্পায়ার। ইবাদতের ডেলিভারি তার প্যাডে লেগে এক ড্রপ খেয়ে পৌঁছেছিল লিটনের গ্লাভসে। তিনি রিভিউ নিলে দেখা যায়, বল ছুঁয়েছে ব্যাট।

পরে আরেকবার রিভিউতে জীবন পান এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। তখন রিজওয়ান ছিলেন ১২ রানে। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের ডেলিভারি অনেকখানি টার্ন করে অফ স্টাম্পের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ায় টেকেনি মাঠের আম্পায়ারের দেওয়া এলবিডব্লিউয়ের সিদ্ধান্ত।

রিজওয়ানের দুই রিভিউয়ের মাঝে আবেদন না করায় উইকেট থেকে বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। ইবাদতের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ফাওয়াদের ব্যাটের নিচের অংশ ছুঁয়ে জমা পড়ে লিটনের গ্লাভসে। কিন্তু বল ব্যাটে লাগেনি ভেবেনি আপিল করেননি কেউ। সেসময় ফাওয়াদের সংগ্রহ ছিল ১২ রান।

ভেজা উইকেটে সহায়তা মেলে পেসারদের। কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে সকালে বেশ ভালো বল করেন ইবাদত ও খালেদ। তাইজুল আক্রমণে আসার পর পান টার্ন। তবে প্রথম সেশনে সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজকে বোলিংয়ে আনেননি বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল। দ্বিতীয় সেশনে তারা বল হাতে পেলেও প্রভাব রাখতে পারেননি।

আগের দিন টানা বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দুই দলই হোটেল থেকে বের হয়নি। তবে বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় চতুর্থ দিন সকালেই ক্রিকেটাররা চলে আসেন মাঠে। তবে নির্ধারিত সময়ে খেলা শুরু হতে পারেনি। সকাল ১০টা ১০ মিনিটে মাঠ পরিদর্শন করে খেলা শুরু হওয়ার সময় জানিয়ে দেন আম্পায়াররা। আবার বৃষ্টি বাগড়া না দেওয়ায় ১০টা ৫০ মিনিটে মাঠে নামে দুই দল।

মিরপুর টেস্টের শুরু থেকেই হানা দিয়েছে বৃষ্টি। প্রথম দিনে বৃষ্টি ও আলোক স্বল্পতায় খেলা হয় ৫৭ ওভার। দ্বিতীয় দিনে থেমেথেমে চলা বৃষ্টির কারণে মাঠে গড়াতে পারে কেবল ৬.২ ওভার। আর তৃতীয় দিনের পুরোটাই গেছে বৃষ্টির পেটে। একটি বলও গড়াতে পারেনি মাঠে। আম্পায়াররা জানিয়েছেন, চতুর্থ দিনে ৮৬ ওভার বোলিংয়ের চেষ্টা করা হবে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান প্রথম ইনিংস: ৯৮.৩ ওভারে ৩০০/৪ ইনিংস ঘোষণা (আবিদ ৩৯, শফিক ২৫, আজহার ৫৬, বাবর ৭৬, ফাওয়াদ ৫০, রিজওয়ান ৫৩; ইবাদত ১/৮৮, খালেদ ১/৪৯, সাকিব ০/৫২, তাইজুল ২/৭৩, মিরাজ ০/৩৭)।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh asks India to halt border push-ins, cites security concerns

The move follows reports that BSF pushed in around 300 people into Bangladesh between May 7 and May 9

16m ago