প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা রানওয়ে বন্ধ, বিমানবন্দরে ভোগান্তিতে যাত্রীরা

স্টার ফাইল ছবি

গত ২ দিন ধরে রাতে ৮ ঘণ্টা করে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একমাত্র রানওয়েটি বন্ধ থাকায় অব্যবস্থাপনার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিল, গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে চালু হওয়া এই প্রক্রিয়ার কারণে ফ্লাইটের সময়সীমা ও যাত্রী সেবায় উল্লেখযোগ্য কোনো বিঘ্ন হবে না।

তবে যাত্রীদের অভিযোগ, বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বিমানবন্দরে নির্মাণাধীন ৩য় টার্মিনালে ট্যাক্সিওয়ের নির্মাণ ও সম্প্রসারণের কাজ করছে। এ কারণে রানওয়ে বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত প্রতিরাতে ৮ ঘণ্টা করে রানওয়ে বন্ধ থাকবে।

রানওয়ে বন্ধ থাকায় কমপক্ষে ১২টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সময়সীমা বদলাতে হয়েছে। এই ফ্লাইটগুলোর পরিচালনার দায়িত্বে আছে কাতার এয়ারওয়েজ, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, এমিরেটস, সৌদি এয়ারলাইন্স, টার্কিশ এয়ারলাইন্স ও মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স।

বিমানবন্দরের সূত্র থেকে জানা যায়, বর্তমানে প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা সময়সীমার মধ্যে ৮৫ থেকে ৯০টি ফ্লাইট আসা-যাওয়া করে এবং এসব ফ্লাইটে প্রায় ১০ হাজার যাত্রী চলাচল করেন।

বেশ কয়েকজন যাত্রী জানান, তারা জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেবার অভাবে বিলম্বের শিকার হয়েছেন।

তারা অভিযোগ করেন, টার্মিনালের ভেতরে ও বাইরে, এয়ারলাইন্সের প্যাসেঞ্জার চেকইন কাউন্টার, ইমিগ্রেশন ও বোর্ডিং ব্রিজসহ বিমানবন্দরের সর্বত্র অব্যবস্থাপনার ছাপ দেখা যাচ্ছে।

গত ২ দিনে বেশ কিছু ফ্লাইটে বিলম্বের কারণে চেকইন কাউন্টার, ইমিগ্রেশন ও অন্যান্য জায়গায় দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।

সৌদিগামী যাত্রী ইদ্রিস মিয়া বলেন, 'শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের বাড়তি প্রয়োজন পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এসব সমস্যার কারণে বেশ কিছু ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ের পরে যাত্রা শুরু করেছে। ফলে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।'

অপর সৌদিগামী যাত্রী মো. হারুন জানান, কর্তৃপক্ষকে এই ১৬ ঘণ্টার মধ্যেই চেকইন কাউন্টার, বোর্ডিং ব্রিজ, নিরাপত্তা চেকইন কাউন্টার, মালামাল লোড ও আনলোড করার বে ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং সেটা সব ফ্লাইটের জন্য। কিন্তু তারা এখনো এটি নিশ্চিত করতে পারেননি।

বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, বিমানবন্দর পরিচালনার কাজটি আজ রোববার থেকে শুরু করে আগামী ৫ দিন আরও কঠিন হবে। কারণ বিজয় দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ মহড়ার জন্য প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টা করে রানওয়ে বন্ধ থাকবে।

এর অর্থ আগামী ৫ দিন রাতের ৮ ঘণ্টার সঙ্গে এই বাড়তি সময় যোগ হয়ে প্রতিদিন মোট ১০ ঘণ্টা রানওয়ে বন্ধ থাকবে।

বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা স্বীকার করেন, তারা নতুন সময়সীমার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হিমশিম খাচ্ছেন।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে এই কর্মকর্তা বলেন, 'কিন্তু আমরা প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে ফ্লাইটের পরিচালনা নিরবচ্ছিন্ন রাখার উদ্যোগ নিয়েছি।'

বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার পর দেড় ঘণ্টায় ১৩টি ফ্লাইট ছেড়ে গেছে, যার কারণে বিমানবন্দরের পরিচালনায় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। কর্তৃপক্ষ যাত্রী ও ফ্লাইট পরিচালনাকারী সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় বাড়তি সেবা নিশ্চিত করতে পারেনি।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রায় ২ হাজার ৪০০ যাত্রীর ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া একবারে শেষ করতে না পারায় বেশ কিছু ফ্লাইট দেরি করে ছেড়েছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক ও গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসান জানান, নতুন সময়সীমার মধ্যে প্রথম কয়েকদিন ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে।

তিনি জানান, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে সব কাউন্টার চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন, যাতে যাত্রীরা সময় মতো ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেন।

বিভিন্ন উড়োজাহাজ সংস্থা কর্তৃপক্ষের কাছে অতিরিক্ত চেকইন কাউন্টার ও অন্যান্য সেবার দাবি জানিয়ে আসছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অপেক্ষাকৃত কম সময়ে যাত্রীদের চাপ সামলানোর জন্য এসব সেবা খুবই জরুরি।

কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, ঢাকার বিমানবন্দরের রানওয়ে বন্ধ থাকা অবস্থায় জরুরি অবতরণ ও উড্ডয়নের জন্য সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরের রানওয়ে ব্যবহার করা যাবে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

With acreage and output falling, is there any prospect for wheat in Bangladesh?

Falling wheat acreage raises questions about food security amid climate change

14h ago