মমতার বিজয়ের নেপথ্যে ‘দিদিকে বলো’ ও ‘দুয়ারে সরকার’

কলকাতায় পৌর নির্বাচনে প্রাথমিক ফলাফলে তৃণমূলের জয় ও বিজেপির পরাজয়ের সংবাদ সবার জানা। ফলাফলের এমন পূর্বাভাস দিয়েছিলেন বিশ্লেষকরাও। তবে তৃণমূল যে বিজয় পেয়েছে তা না কি দলের নেতা-কর্মীদেরও ভাবনার অতীত। তাই প্রশ্ন জাগে তৃণমূলের এই বিশাল বিজয়ের নেপথ্যের কারণ কী?
পৌর নির্বাচনে রাজ্যে ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে শুধু যে বিজয়ীর সংখ্যাই বেড়েছে তা নয়, বেড়েছে ভোটের সংখ্যাও। গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের বরাত দিয়ে ভারতের গণমাধ্যম জানায়, তৃণমূল কংগ্রেস কলকাতায় ১৪৪ ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩৪টিতে জয় পেয়েছে। ভোট পেয়েছে প্রায় ৭২ শতাংশ।
২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনে তৃণমূল জয় পেয়েছিল ১১৪টি ওয়ার্ডে আর ভোট পেয়েছিল ৫০ দশমিক ৬ শতাংশ। সেই হিসাবে এ বার দলটির ভোট বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি। ভোটের ফলাফলে দেখা যায়, মমতার দলের প্রতি ভোটারদের শুধু আগ্রহই নয়, বেড়েছে আস্থাও।
গত পৌর নির্বাচনে যে বামফ্রন্ট ১৫ ওয়ার্ডে জয় পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিল, সেই দলটিই এবারের নির্বাচনে জয় পেয়েছে মাত্র ২ ওয়ার্ডে। গতবার ৭টি ওয়ার্ডে জয় পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকা বিজেপি এবার পেয়েছে ৩ ওয়ার্ডে জয়। কংগ্রেসের জয়ের সংখ্যা ৫ থেকে কমে হয়েছে ২।
এ প্রসঙ্গে টানা যেতে পারে গত এপ্রিলের বিধান সভা নির্বাচনের কথা। সেসময় পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির 'জোয়ার' আসার কথা বলেছিলেন অনেকেই। কিন্তু, ২৯৪ আসনের বিধানসভায় তৃণমূল পায় ১১৫ এবং বিজেপি পায় ৭৭ আসন।
এরপর, বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয় পৌর নির্বাচনে এর 'প্রতিশোধ' নেওয়া হবে। কিন্তু, তার আগেই দল ছাড়েন বিজেপির রাজ্য শাখার কয়েকজন শীর্ষ নেতা। দলীয় নেতাকর্মীদের মনোবলে ভাঙন ধরে। পৌর নির্বাচনে প্রার্থী খুঁজে পেতে হিমশিম খায় কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলটি।
বিজেপির দলীয় কোন্দলই কি তাদের ভোটারের সংখ্যা কমিয়েছে?
সংবাদ বিশ্লেষণে জানা যায়, গত বিধানসভা নির্বাচনে কলকাতা পৌর এলাকায় যে ১০ ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়েছিল পৌর নির্বাচনে সেগুলোতে জয়ের আশায় নেমেছিল দলটি। কিন্তু, সেখানেও তাদের আশানুরূপ ফল মেলেনি।
বিশ্লেষকদের মতে, গত বিধানসভা নির্বাচনের পর তৃণমূল নেত্রীকে বিশেষ মনোযোগ দিতে দেখা যায় পৌর নির্বাচনের দিকে। তাই ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণে তিনি বাড়িয়ে দেন জনসম্পৃক্ততার কাজ।
রাজ্য সরকারের নেওয়া 'দিদিকে বলো' ও 'দুয়ারে সরকার' কর্মসূচি দুটিকে জোরদার করা হয়। 'দিদিকে বলো' কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ মানুষ তাদের অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে জানাতে পারেন। কর্মহীনদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি 'দুয়ারে সরকার' তাদের কাজ খুঁজে পেতে সহযোগিতা করছে। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মমতা তৃণমূলকে জনগণের কাছে নিয়ে গেছেন। জনগণ মমতা-তৃণমূলকে নিজেদের আপন মনে করেছে। যার প্রমাণ পৌর নির্বাচনের এই বিপুল বিজয়।
ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী নীলাদ্রি সরকার মনে করেন, তৃণমূলের জনপ্রিয়তা ততটা বাড়েনি। রাজ্যে বিরোধীদলগুলোর 'অধঃপতন'র কারণে নির্বাচনের ফল এমন হয়েছে।
আজ বুধবার তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে টেলিফোনে বলেন, 'বিরোধীদলে কোনো পরীক্ষিত নেতা নেই। তাই অগত্যা ভোটারদের তৃণমূলকেই ভোট দিতে হয়।'
'গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধীদল হিসেবে উঠে আসে। কিন্তু, নিজেদের কোন্দল ও বিভিন্ন ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতার প্রতিফলন হয়তো ভোটের বাক্সে পড়েছে।'
তার মতে, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের কারণে দলটির প্রতি বিরক্ত হয়ে অনেকে হয়ত বিজেপিকে বিকল্প হিসেবে দেখেছেন।
নির্বাচনে বামফ্রন্টের অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, 'তৃণমূলের সন্ত্রাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল বাম দলগুলোর। শীর্ষ নেতারা দলীয় কর্মীদের তৃণমূলের সন্ত্রাসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেননি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপিও তেমন প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। এ কারণেই হয়তো বামেরা তাদের পুরনো ভোটারদের কাউকে ফিরে পেয়েছে।'
Comments