আনসার আল ইসলাম: পরবর্তী লক্ষ্য নাস্তিক, হিন্দুত্ববাদ ও বিদেশি মিশন 

এই মুহূর্তে দেশের ভেতরে কোনো হামলা চালানোর পরিকল্পনা না থাকলেও গোপনে সদস্য নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাচ্ছে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম।

এই মুহূর্তে দেশের ভেতরে কোনো হামলা চালানোর পরিকল্পনা না থাকলেও গোপনে সদস্য নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাচ্ছে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম।

কাউন্টার টেরোরিজমের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, জঙ্গি সংগঠনটির নিয়োগ এবং প্রাথমিক প্রশিক্ষণ অনলাইনে করা হয়। সরাসরি দেওয়া হয় সংগঠনটির সামরিক শাখার উন্নত প্রশিক্ষণ। এ জন্য দেশের কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চল বেছে নেওয়া হয়।

এ ছাড়া, সাম্প্রতিক একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দেখা গেছে আনসার আল ইসলামকে ভারতীয় উপমহাদেশে আল-কায়েদার বাংলাদেশি শাখা (একিউআইএস) বলা হয়। তারা তাদের লক্ষ্যের একটি তালিকা চূড়ান্ত করছে। কিন্তু এখনই হামলা চালানোর কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে নাস্তিকদের তারা 'সফট টার্গেট' এবং হিন্দুত্ববাদ ও বিদেশি মিশন প্রচারকারী সংগঠনগুলোকে 'হার্ড টার্গেট' হিসাবে নির্ধারণ করেছে। ডেইলি স্টার সেই প্রতিবেদনটির একটি কপি পেয়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, এক সময়ের আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) হিসেবে পরিচিত আনসার আল ইসলামের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আক্রমণ করার কোনো পরিকল্পনা নেই। কারণ সংগঠনটি বিশ্বাস করে, এই ধরনের আক্রমণগুলোর পাল্টা আক্রমণ আসবে, ব্যাপকভাবে ধরপাকড় চলবে। ফলে তাদের শক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংগঠনটি সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় ঘাঁটি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। সংগঠনটির চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো গাজওয়া-ই-হিন্দ (ভারত বিজয়)-এর মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।

সংগঠনটি কাশ্মীরকে একটি সম্ভাব্য আশ্রয়স্থল এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে নতুন সদস্য নিয়োগের উৎস হিসেবে দেখে, বলে উল্লেখ আছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আনসার আল ইসলামের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের একটি দল পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার হয়ে আফগানিস্তান ও কাশ্মীরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তবে তারা সফল হয়েছে কি না তা উল্লেখ করা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ৩ যুবক সম্ভবত আফগানিস্তানে পৌঁছেছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে।

এ বিষয়ে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, 'আনসার আল ইসলামের এখন হামলা চালানোর মতো কোনো সাংগঠনিক শক্তি নেই।'

তিনি বলেন, 'সংগঠনটির শারীরিক কার্যক্রম তেমন একটা নেই। এটির শুধু অনলাইন উপস্থিতি রয়েছে।' এ ছাড়া সংগঠনটির অনলাইন কার্যক্রমের নেতৃত্বদানকারী কিছু শীর্ষ নেতাকেও সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বলেও জানান।

পুলিশের তথ্য মতে, অ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) ৫৬টি অভিযানে আনসার আল ইসলামের ৩১ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। সিটিটিসি ইউনিট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, ঢাকা ও এর আশেপাশের জেলা থেকে বেশিরভাগ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিটিটিসি কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, একটি গোপন মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে জঙ্গি সংগঠনের উচ্চপদস্থরা সম্প্রতিকালে ঢাকা ও আশেপাশের জেলায় সব নিয়োগ বন্ধ রাখতে বলেছে।

তিনি জানান, উচ্চপদস্থরা অন্যান্য জেলাগুলোতে আরও নজর দিতে বলেছে, কারণ সেগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি তুলনামূলকভাবে কম।

সিটিটিসি ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার আহমেদুল ইসলাম বলেন, 'গ্রেপ্তার হওয়া কয়েকজন সদস্য থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তারা আনসার আল ইসলামের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।'

সূত্র জানিয়েছে, কিছু ই-কমার্স ব্যবসা এবং আইটি ফার্ম সংগঠনটিকে তহবিল দিচ্ছে। তারা তাদের মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কিছু মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করছে।

সিটিটিসি ইউনিটের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা সেসব ফার্ম ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

পুলিশের তথ্য অনুসারে, এলজিবিটি অধিকার কর্মী জুলহাজ মান্নান এবং তার বন্ধু খন্দকার মাহবুব রাব্বি তনয় জঙ্গি সংগঠনটির টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হন। রাজধানীর কলাবাগানে ২০১৬ সালে তাদের হত্যা করা হয়।

সিটিটিসির আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, 'সংগঠনটির প্রধান এখন বিদেশে অবস্থান করছেন। এর সামরিক শাখা পরিচালনা করছেন সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে মেজর (বরখাস্ত) জিয়া এবং তিনি বাংলাদেশের কোথাও লুকিয়ে আছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'সংগঠনটি ৩-৪ জনকে একই বাড়িতে থাকতে দেয় না।'

ডাটাবেস অনুসারে, গত বছরে এটিইউ প্রায় সন্দেহভাজনভাবে ৫ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে, তারা অনলাইনে কার্যক্রম পরিচালনা করতো।

এটিইউ প্রধান মো. কামরুল আহসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, 'তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন এবং সংগঠনটির কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'যখনই আমরা জঙ্গিদের কোনো গতিবিধি দেখি, আমরা তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাই।'

অনুবাদ করেছেন সুমন আলী

Comments

The Daily Star  | English

Horrors inside the Gaza genocide: Through a survivor’s eyes

This is an eye-witness account, the story of a Palestinian in Gaza, a human being, a 24-year-old medical student, his real human life of love and loss, and a human testimony of war crimes perpetrated by the Israeli government and the military in the deadliest campaign of bombings and mass killings in recent history.

8h ago