স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই

ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতিক, কলামিস্ট নির্মল সেন লিখেছিলেন, 'স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই'। স্বাধীনতার পরপরই দেশে হই চই ফেলে দেয় কথাটি।

গতকাল শুক্রবার ভোরে ঝালকাঠিতে অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লেগে যে মৃত্যু বিশ্ববাসী দেখল, তা কি স্বাভাবিক ছিল? প্রায় ১ হাজার যাত্রী নিরাপদে বাড়ি ফেরার নিশ্চয়তা নিয়ে লঞ্চে উঠে ঘুমিয়ে পড়েন। সেই লঞ্চে আগুন লাগে মাঝনদীতে। লাফিয়ে নেমে গেলেই বাঁচার নিশ্চয়তা ছিল না। কিংকর্তব্যবিমূঢ় মানুষ দগ্ধ হয়ে মারা যান, দগ্ধ ও আহত হন। এই মৃত্যু কি কারো কাম্য ছিল? সহজ উত্তর, না।

মানুষের বেঁচে থাকার আকুতি হার মেনেছে বীভৎস আগুনের কাছে। অনেক স্বপ্ন আর সম্ভাবনা আগুনের উত্তাপে দলা পাকিয়ে গেছে। অকল্পনীয়, বীভৎস, করুণ এই মৃত্যু।

আগুনের লেলিহান শিখা শুধু লঞ্চটিকেই ভস্ম করেনি, ভস্ম করে দিয়েছে অনেক স্বপ্ন। মুহূর্তেই সন্তান হারিয়েছে তার মা, মা হারিয়েছে সন্তান। শত শত মানুষের কান্নায় বিষখালী নদীর তীর ভারী হয়ে উঠে। কে কাকে দোষ দেবে? নাকি সবটাই কপাল? নাকি গরিবের কপাল পুড়েছে বলে কারো কোনো দায় নেই?

জ্বলন্ত লঞ্চ থেকে চালক, টেকনিশিয়ানরা উধাও হয়ে গেছেন। প্রায় ১ ঘণ্টা ভেসে লঞ্চটি গাবখানের বিষখালীর দিয়াবারির কূলে ঠেকলে অনেকেই নদীতে ঝাঁপিয়ে পরে প্রাণ বাঁচান। কিন্তু এখনো অনেক মানুষ অপেক্ষায় আছেন তাদের স্বজনের। তারা জানেন না তাদের স্বজন আগুনে পুড়ে গেছেন নাকি পানি ডুবে গেছেন। তারা স্বজনের মরদেহ চান। কিন্তু কে ফিরিয়ে দেবে তাদের মরদেহ? কে দেবে তাদের সান্ত্বনা?

লঞ্চটি যাত্রা শুরুর পরেই সমস্যা হচ্ছিল, বার বার থেমে যাচ্ছিল, সাইলেন্সর দিয়ে আগুন বের হচ্ছিল। তারপরেও লঞ্চটি মাঝনদী দিয়ে তীব্র গতিতে গন্তব্যে ছুটছিল। লঞ্চটির রিপোর্ট অনুযায়ী ৩১০ জন যাত্রী নিয়ে এটি চলছিল। কিন্তু সেই রিপোর্ট যে সত্য নয় তা জলজ্যান্ত সত্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এভাবেই কী লঞ্চ মালিকরা সব সময় মিথ্যা তথ্য দিয়ে আসছেন?

যাত্রীদের বক্তব্যে জানা যায়, লঞ্চটিতে যাত্রী ছিল প্রায় ১ হাজার। অনেকেই সিট না পেয়ে ছাদেও অবস্থান নিয়েছিলেন। লঞ্চের নাকি ফিটনেস ছিল ২০২২ সাল পর্যন্ত ছিল। তাহলে এই কি ফিটনেসের নমুনা যেখানে অগ্নি নির্বাপণের কোনো ব্যবস্থাই ছিল না?

তেলের ব্যারেল যেমন বিস্ফোরণ হয়েছে, তেমনি এয়ারকন্ডিশনারসহ সব দাহ্য বস্তুতে আগুন লেগে পুরো লঞ্চটিই একটি বিস্ফোরকে পরিণত হয়। অর্থাৎ লঞ্চটির ত্রুটি দেখার কেউ ছিল না।

ফায়ার ব্রিগেড সদস্যরা জানান, আগুনের তীব্রতায় তারা লঞ্চটির কাছাকাছি যেতে পারছিলেন না। অনেকে কেবিনের ভেতরেই ভস্ম হয়ে গেছেন। এক মা ও তার সন্তানকে পাওয়া যায় এক কেবিনের ভেতরে জড়িয়ে ধরে চলে গেছেন চিরনিদ্রায়। আগুনে পুড়ে লঞ্চে লেপ্টে থাকা মরদেহগুলো এক বীভৎস দৃশ্য তৈরি করেছে। আমাদের অবহেলা আর উদাসীনতায় অগণিত মানব সন্তানের বলিদান।

আজ সকাল পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া ৩৭টি মরদেহের মধ্যে মাত্র ৪ জনকে শনাক্ত করা গেছে এবং তাদের মধ্যে ৪ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিদের পরিচয় নিশ্চিত করতে হয়তো ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে। আরও দীর্ঘতর হবে স্বজনদের মরদেহ ফিরে পাওয়ার অপেক্ষা।

ইতোমধ্যে এ ঘটনায় একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু যে অবহেলা, উদাসীনতা আর লোভের সংস্কৃতি লঞ্চের প্রয়োজনীয় সক্ষমতা না থাকার পরও সেটি নামিয়ে দেয় রোজগারের জন্য, সেই তদন্ত কে করবে? কে নেবে এতোগুলো মানব সন্তানের মৃত্যুর দায়? তাহলে কি অস্বাভাবিক মৃত্যুই থেকে যাবে আমাদের গন্তব্য? জলে হোক বা স্থলে, এই গণমৃত্যুই কি আমাদের ভবিতব্য?

Comments

The Daily Star  | English

Leather legacy fades

As the sun dipped below the horizon on Eid-ul-Azha, the narrow rural roads of Kalidasgati stirred with life. Mini-trucks and auto-vans rolled into the village, laden with the pungent, freshly flayed cowhides of the day’s ritual sacrifices.

18h ago