নারীর চরিত্র হনন ও মামলা দুর্বলের হাতিয়ার ‘পূর্ব পরিচিত’

কক্সবাজারে ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ বলছে অভিযুক্তরা বেড়াতে যাওয়া সেই নারীর 'পূর্ব পরিচিত'। এর আগেও রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ, কলাবাগানে 'ও' লেভেলের শিক্ষার্থী ধর্ষণসহ বেশ কয়েকটি ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় অভিযুক্তরা 'পূর্ব পরিচিতি'।

এই 'পূর্ব পরিচিত' শব্দের তাৎপর্য কী বা এই শব্দটি কেন ব্যবহার করা হয় তা জানতে দ্য ডেইলি স্টার টেলিফোনে কথা বলেছে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ব্লাস্টের নির্বাহী পরিচালক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমানের সঙ্গে।

বদিউল আলম মজুমদার ও সারা হোসেন বলেছেন, ধর্ষণের ঘটনায় আসামি ও অভিযোগকারী 'পূর্ব পরিচিত' উল্লেখ করে নারীর চরিত্র হনন করা হয় এবং মামলার গতিপ্রকৃতি অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। জিল্লুর রহমান বলেন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা বোঝানোর জন্য 'পূর্ব পরিচিত' বিষয়টি সামনে আনা হয়।

সুজন এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, '"পূর্ব পরিচিত" বিষয়টি সামনে এনে প্রথমত মামলাটিকে দুর্বল করে দেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত এই শব্দের মাধ্যমে সহজেই অভিযোগকারীর চরিত্র নিয়ে অপবাদ দেওয়া যায়। এগুলো অনেক সময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়।'

তিনি বলেন, 'এমন মামলায় পুলিশের এই ধরনের শব্দ জনপরিসরে বলা উচিত না। তাদের অবশ্যই ভিকটিমের প্রতি সম্মান থাকা উচিত এবং তাদের পরিচয় গোপন রাখা উচিত। তারা কিসের ভিত্তিতে বলে তা আমার বুঝে আসে না। এটা বলার পর মামলার গুরুত্ব আর সেভাবে থাকে না। পুলিশ কেন এসব বলে তা তদন্ত হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।'

'এসব কারণে অনেক নারীকে ধর্ষণ করা হলেও তারা পুলিশের সাহায্য নিতে চান না বা অভিযোগ করতে চান না। কারণ তাদেরকে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় এবং উল্টো তাদের নামেই অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়,' তিনি যোগ করেন।

ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, 'একজন নারী আরেক জনের পূর্ব পরিচিত মানেই যে সেই ব্যক্তিকে নারীর শরীরের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে বা ধর্ষণের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে বিষয়টি এমন না। একজন নারী-পুরুষের পূর্ব পরিচয় থাকতেই পারে। ধর্ষণের ঘটনায় এই ধরনের শব্দ সামনে আনা মোটেই উচিত না।'

তিনি বলেন, 'এই "পূর্ব পরিচিত" শব্দের মাধ্যমে নারীর চরিত্র হনন করা হয় এবং সেই নারীর সঙ্গে আগেও শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে এবং পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে যৌন সম্পর্ক হয়েছে এটা বুঝানোর চেষ্টা করা হয়। এক্ষেত্রে ধর্ষণের ঘটনার পাশাপাশি মামলাটিও দুর্বল হয়ে যায়।'

সারা হোসেন বলেন, 'এসব কারণে ধর্ষণের পরে নারীরা আইনের আশ্রয় নিতে চান না। এখানে ভিকটিম ব্লেমিং বেশি করা হয়। আমাদের এসব বিষয়ের অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে। তাছাড়া এসব ঘটনায় পুলিশের এমন কথা বলা মোটেও উচিত না। তাদেরকে আরও সতর্ক হতে হবে।'

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, 'পারিপার্শ্বিক অবস্থা বুঝানোর জন্যই আমরা "পূর্ব পরিচিত" বিষয়টির কথা বলেছি। তবে এর সঙ্গে ধর্ষণের কোনো সম্পর্ক নেই। আইনের মতে, কারো অসম্মতিতে বা জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনই হলো ধর্ষণ। ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং অপরাধীদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।'

তিনি বলেন, 'আমরা আসামিদের ধরার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের বের করে আনা হবে। এই মামলায় জড়িতদের কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না।'

Comments

The Daily Star  | English

India pushes 123 individuals into Bangladesh

Border Guard Bangladesh (BGB) yesterday detained at least 123 individuals, including Rohingyas and Bangla-speaking individuals, after India pushed them into Bangladesh through Kurigram and Khagrachhari border points.

5h ago