গৃহঋণের চাহিদা বাড়ছে

রিহ্যাব মেলায় দর্শনার্থীরা। ছবি: পলাশ খান/স্টার

বাংলাদেশে সচ্ছল জনগোষ্ঠীর আকার বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই) গৃহায়ণ ও আবাসন খাতে বন্ধকী ঋণের জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়বে বলে আশা করছে।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৫ দিনব্যাপী 'রিহ্যাব মেলা ২০২১' এ অংশগ্রহণকারী ব্যাংক ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে এমনটাই জানিয়েছেন।

সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও আলোচনায় প্রকাশ পায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ঋণ দেওয়ার সক্ষমতার দিক থেকে ৫ বছর আগের চেয়ে ৫ গুণ বেশি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।

মেলায় মোট ১৩টি ব্যাংক ও এনবিএফআই অংশগ্রহণ করছে। মেলা থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ ৬ কোটি টাকা গৃহ ঋণ নিতে পারছেন। ঋণ পুরোপুরি পরিশোধ না করা পর্যন্ত জমি বা ফ্ল্যাট বন্ধক অবস্থায় থাকে।

আইপিডিসি ফাইন্যান্সের হেড অব ডিস্ট্রিবিউশন রাহাত জামিল জানান, তারা ১০০ কোটি টাকার তহবিল নিয়ে ২০১৬ সালে গৃহঋণ দেওয়া শুরু করে। এ বছর এই তহবিলের পরিমাণ ৬৮৬ কোটিতে পৌঁছেছে।

তিনি উল্লেখ করেন, 'আমরা সেসব গ্রাহকদের গৃহঋণ দেই যাদের ন্যুনতম ও স্থায়ী মাসিক আয় ৪০ হাজার টাকা।'

মেলা উপলক্ষে আইপিডিসি ৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ হার সুদে গৃহঋণ দিচ্ছে এবং ইতোমধ্যে ৫ জন গ্রাহকের ঋণের আবেদন মেলা প্রাঙ্গণেই অনুমোদন পেয়েছে বলে জানান তিনি।

ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব মর্টগেজ অ্যান্ড ডেভেলপার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট সিরাজুস সালেকিন জানান, তারা মেলায় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হার সুদে গৃহঋণ দিচ্ছেন।

তিনি জানান, প্রতি মাসে বেতন পান এরকম ব্যক্তি, ব্যবসায়ী ও স্কুল শিক্ষক গৃহ ঋণ পেতে পারেন। সালেকিন জানান, যাদের মাসিক বেতন ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজারের মধ্যে, তাদেরকেই মূলত ব্র্যাক ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে।

তিনি আরও জানান, যেসব ভূমি মালিক দালান অথবা টিনের চালের অবকাঠামো নির্মাণ করতে চাইছেন, তারাও ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন।

'আমরা স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের ক্লায়েন্ট, যাদের নির্মাণাধীন প্রকল্প রয়েছে, তাদেরকে ঋণ দেই। আর সাধারণ ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের ক্লায়েন্টরা তাদের ফ্ল্যাট নিবন্ধন করার পর ঋণ সুবিধা নিতে পারেন', যোগ করেন সালেকিন।

সালেকিন গৃহঋণ সেবার বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন। কারণ আবাসন শিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের আর্থিক সামর্থ্য ও এ ধরণের ঋণের প্রতি আগ্রহও ক্রমশ বাড়ছে।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার সুজিত সাহা জানান, ন্যুনতম ৭৮ হাজার টাকা মাসিক বেতনের গ্রাহকরা ২৫ বছরের কিস্তিতে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত গৃহঋণ পেতে পারেন।

অন্য ব্যাংকের মতো স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকও সম্পত্তির মোট মূল্যের ৭০ শতাংশ ঋণ হিসেবে দেয়।

সুজিত জানান, তারা ৯ শতাংশ সুদে গৃহঋণ দেন। কিন্তু মেলা উপলক্ষে তারা দেড় শতাংশ ক্যাশ ব্যাক অফার দিচ্ছেন।

তিনি আরও জানান, গত ৫ বছর ধরে গৃহঋণ সেবার গ্রাহকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।

সুজিত জানান, বন্ধকী ঋণে ঝুঁকির পরিমাণ কম। কারণ গ্রাহকের আয়ের সঠিক পর্যালোচনা করার পরেই কেবল তাদের ঋণের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।

ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (লোনস) মোহাম্মদ দিদার হোসেন জানান, তারা ফ্ল্যাট কিনতে ইচ্ছুক গ্রাহকদের জন্য ঋণের স্পট অ্যাপ্রুভাল দিচ্ছেন।

তিনি জানান, তারা গ্রাহকের কাছ থেকে প্রচুর প্রশ্ন পাচ্ছেন।

এই প্রতিষ্ঠানটিও মেলা উপলক্ষে গৃহঋণের সুদের হার ৭ দশমিক ৯৯ থেকে কমিয়ে ৭ দশমিক ৫ এ নামিয়েছে এবং একই সঙ্গে তারা প্রসেসিং ফির ওপর ৫০ শতাংশ ছাড়ও দিচ্ছে।

দিদারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহক তার পোর্টফলিওর বিচারে সর্বোচ্চ ৬ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের রিটেল ব্যাংকিং ডিভিশনের কর্মকর্তা ম. কামরুজ্জামান জানান, যেসব গ্রাহকের স্থায়ী উপার্জন মাসে ৪০ হাজার টাকা, তাদেরকে প্রতিষ্ঠানটি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হার সুদে ঋণ দিচ্ছে।

তিনি জানান, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের চিন্তাধারা কিছুটা ভিন্ন। তারা ৭০ বছর বয়সী গ্রাহকদেরও ঋণ দিচ্ছেন। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই গ্রাহকের আর্থিক পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। প্রায় সব ব্যাংক ও এনবিএফআই সর্বোচ্চ ৬৫ বছর বয়সী গ্রাহককে ঋণ দেয়।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
Mirza Fakhrul on polls

Efforts on to make polls questionable and delayed: Fakhrul

Says Chief Adviser Yunus has assured BNP that the election will be held in February 2026

8h ago