লাবনী পয়েন্টে নারী পর্যটকদের জন্য ‘বিশেষ এলাকা’

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে নারী পর্যটকদের জন্য আজ বুধবার সকালে 'বিশেষ এলাকা' উদ্বোধন করেছে জেলা প্রশাসন। ৬০০ ফুটের এই 'বিশেষ এলাকায়' শুধু নারী ও শিশুরা প্রবেশ করতে পারবেন।
নারী পর্যটকদের এই 'বিশেষ এলাকা' বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমাইয়া শিফাত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা যখন নারী অধিকার, সমতা, অগ্রগতি নিয়ে কথা বলছি তখন এই "বিশেষ এলাকা" নারীদের পেছনে ঠেলে দেবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে "বিশেষ" শব্দটি ব্যবহার করে নারীদের আধুনিকতার বিপরীতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নারীদের আবারও ৪ দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ করার চেষ্টা চলছে। নারী ও পুরুষ যখন একসঙ্গে থেকে এগিয়ে যাওয়ার কথা ঠিক তখনি পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে এবং নারীদের আলাদা করা হচ্ছে।'
দেশের একটি পর্যটন কেন্দ্রে নারীদের জন্য 'বিশেষ এলাকা' করা হলেও অন্যগুলোতে কী করা হবে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, 'এভাবে নারীদের নিরাপদে রাখা সম্ভব নয়। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। তবে যে বিষয়টি সবচেয়ে প্রয়োজন তা হলো, আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সবার মধ্যে লৈঙ্গিক শিক্ষা থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরিবারকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে হবে।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অদিতি সবুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা যে লৈঙ্গিক সমতার কথা বলি, টেকসই উন্নয়নের কথা বলি, নারীদের এই বিশেষ এলাকা তৈরি করে সেই সমতা বা উন্নয়ন কখনই সম্ভব না। বিশেষ এলাকার কথা বলে নারীদের সেই আদিম যুগে ফেরানো হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'নারী ও পুরুষ পাশাপাশি থেকে কাজ করতে পারলেই প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব। নারী যাতে পুরুষের সঙ্গে থেকেই সবকিছু করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। যথাযথভাবে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। নারীদের পেছনে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে।'
শহীদ আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি, উন্নয়নের কথা বলছি, নারীর অধিকার ও সমতার কথা বলছি তখন সমুদ্র সৈকতে নারীদের জন্য "বিশেষ এলাকা" কার মাথা থেকে আসে তা বুঝতে পারছি না। নারীদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ এলাকা করতে হবে! বিষয়টি আসলেই অপ্রত্যাশিত। এমন উদ্ভট চিন্তা কীভাবে মাথায় আসে তা মেলাতে পারছি না। এর মাধ্যমে মূলত নারী-পুরুষ আলাদা করা হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'অবকাঠামো উন্নয়নই প্রকৃত উন্নয়ন না। অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেখিয়ে নারীদের নিরাপত্তা, সমতা, অগ্রগতি সম্ভব না। সবার আগে প্রয়োজন চিন্তা চেতনার বিকাশ ঘটানো। তবেই নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন হবে, উন্নয়ন হবে।'
সম্প্রতি কক্সবাজারে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় সমালোচনার পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নারী পর্যটকদের জন্য 'বিশেষ এলাকা' করার ঘোষণা আসে।
যদিও 'বিশেষ এলাকা' সম্পর্কে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অনেক আগেই বিশেষ এই এলাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। করোনার কারণে এতদিন করা হয়নি। এখানে নারী পর্যটকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক নারী ট্যুরিস্ট পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন থাকবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের এই উদ্যোগ যাতে সফল হয় সেজন্য আমরা বিশেষভাবে প্রচারণা চালাচ্ছি। মাইক দিয়ে সর্বসাধারণকে এই এলাকা সম্পর্কে বলা হচ্ছে। মূলত নারী পর্যটকের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই এই "বিশেষ এলাকা" করা হয়েছে। এখানে নারীরা নিজেদের মতো করে সময় কাটাতে পারবেন।'
Comments