কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থা

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার কারণে তফসিলি ব্যাংকগুলো তাদের বকেয়া ঋণের কিস্তির অর্থকে আয় হিসেবে দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে। এর ফলে আমরা অতিশয় ক্ষুব্ধ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথাকথিত 'শিথিল নীতি' অনুসারে, ঋণগ্রহীতারা যদি তাদের প্রদানযোগ্য কিস্তিগুলোর মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ পরিশোধ করে, তাহলে তাকে খেলাপি হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না।
এর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাকি ৮৫ শতাংশ অপরিশোধিত ঋণের কিস্তিগুলোকে ব্যাংকের মুনাফা হিসেবে স্থানান্তরের অনুমতি দিয়েছে, যা আদতে তারা পরিশোধ করেনি।
প্রকৃতপক্ষে, অপরিশোধিত সুদের পুরো অর্থ কোনোভাবেই ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হবে না। সুতরাং এটা করে ব্যাংকগুলো একটি অবাস্তব ইতিবাচক চিত্র আঁকছে, যা প্রতারণাপূর্ণ।
এ ছাড়া, অপরিশোধিত ঋণের কিস্তিকে আয় হিসেবে দেখিয়ে ব্যাংকগুলো তাদের মুনাফা বৃদ্ধি করছে। যার ফলে ব্যাংকের মালিক ও শেয়ারহোল্ডারদের প্রদেয় লভ্যাংশ বেড়ে যাচ্ছে।
ফলে, একদিকে ব্যাংকের সম্পদ কমবে, অন্যদিকে তাদের শেয়ারের দাম বাড়াতে পারে; যদিও এমন হওয়ার কোনো বাস্তব কারণ নেই।
সুতরাং, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের ফলে পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি নষ্ট হচ্ছে।
স্বল্পমেয়াদে এই সিদ্ধান্তের ফলে মনে হতে পারে, এটা ব্যাংকগুলোর জন্য এক ধরনের জিত। কিন্তু, সেই বিজয়টি অত্যন্ত স্বল্পস্থায়ী হবে। কারণ, ব্যাংকগুলো তাদের আয় বাড়তি দেখাচ্ছে এবং সেটা প্রকৃত কোনো লাভের মাধ্যমে নয়।
গত বছর, কোভিড-১৯-এর কারণে শাটডাউন আরোপ করায় বিশ্বব্যাপী ব্যাংকিং খাত সংকটে পড়ে। যেখানে আমরা দেখতে পাই বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের দেশের ব্যাংকগুলোর জন্য নীতিমালা কঠোর করতে। আমাদের এখানে বিপরীত ঘটনা ঘটতে দেখছি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতির কারণে অন্যান্য ব্যাংকের বিধি-বিধানগুলোও হ্রাস পেতে পারে। যা দীর্ঘমেয়াদে এই খাতকে আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে। যদিও কাগজে-কলমে সবকিছু ঠিকঠাক এবং ভালো বলে মনে হচ্ছে।
এই খাতটি কীভাবে কাজ করছে তার সঠিক চিত্র ঋণগ্রহীতা, আমানতকারী, বিনিয়োগকারী ও শেয়ারহোল্ডারদের দেওয়ার জন্য ব্যাংকিং খাত যে কঠোর হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণ করছে তা নিশ্চিত করা নিয়ন্ত্রকদের কাজ। আমরা বুঝতে পারি না বাংলাদেশ ব্যাংক কেন ঠিক বিপরীত কাজটি করছে।
এ জাতীয় নীতির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে তারা কী অর্জনের আশা করছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আবারও প্রভাবিত করতে এটি বহিরাগত কোনো অনুঘটকের কাজ কি না, যেমনটি তারা অতীতে প্রায়শই করেছেন।
বছরের পর বছর আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার অবনতি দেখছি। এটি তার নিজস্ব নিয়ম-কানুন ভেঙেছে। ফলে এই খাতের শৃঙ্খলা আরও খারাপ হয়েছে এবং এই খাতের স্থিতিশীলতা ক্রমশ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত সর্বশেষ এই নীতি এমন অস্থিতিশীলতা বাড়ানো ছাড়া আর কিছুই করেনি।
আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ধরনের নীতির নিন্দা না করে পারি না। এই খাতের দীর্ঘমেয়াদী ভবিষ্যতের জন্য এবং সাধারণভাবে দেশের অর্থনীতির জন্য অবিলম্বে এই নীতি সংশোধনের আহ্বান জানাই।
Comments