মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ সেই সুরাইয়া কোলে চড়ে স্কুলে, অর্থাভাবে বন্ধ চিকিৎসা

মাগুরায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২ পক্ষে সংঘর্ষে মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ সুরাইয়া প্রাণে বেঁচে গেলেও বেড়ে উঠছে নানা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে। ৬ বছর বয়স হলেও হাঁটতে পারে না সে। তার একটি চোখ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে।

সুরাইয়ার বাবা-মা আশায় বুক বেঁধে আছেন, উন্নত চিকিৎসা পেলে সুরাইয়া হয়তো হাঁটতে পারবে। হয়তো তার চোখ প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে।

৬ সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সুরাইয়ার বাবা বাচ্চু মিয়া। মাগুরার নতুন বাজার এলাকায় চা বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালিয়ে মেয়ের উন্নত চিকিৎসার স্বপ্ন থেকে যায় অধরা। সুরাইয়ার জন্মের সময় আলোচিত সেই সংঘর্ষের পরে অনেক আশ্বাস পেলেও পরবর্তীতে সহযোগিতার হাতগুলো আর খুঁজে পাননি বাচ্চু।

সরকারি সহায়তার আশায় দপ্তরে দপ্তরে ঘুরলেও অর্জন শূন্য। সুরাইয়ার মা নাজমা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মেয়েটাকে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারলে হয়তো সে ভালো হতো। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। তার জন্য যে একটা হুইল চেয়ার কিনবো সেই সামর্থ্যটুকুও আমার নেই।'

সুরাইয়ার বাবা বাচ্চু মিয়া বলেন, 'সুরাইয়ার জন্মের পর তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আমাকে কথা দিয়েছিলেন যে সরকার সুরাইয়ার দেখাশোনার দায়িত্ব নেবে। আমি ২ বার মাগুরার ডিসির কাছেও গিয়েছি কিন্তু সাড়া পাইনি। ডিসি বলেছেন, সুরাইয়া তো এখন ভালো আছে।'

নিজের অসহায়ত্বের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় জড়িয়ে আসে বাচ্চুর গলা। তিনি আরও বলেন, 'আমরা গরিব মানুষ। আমাদের কথা কেউ শোনে না। শুধু টাকার অভাবেই মেয়েটার চিকিৎসা করাতে পারছি না। সুরাইয়ার জন্মের সময় অনেকই পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কেউ কথা রাখেনি। কাউকে পাশে পাচ্ছি না। সুরাইয়াকে সাভারে সিআরপিতে নিতে চাই কিন্তু টাকার অভাবে নিতে পারছি না।'

শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সুরাইয়াকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন বাচ্চু-নাজমা। মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান। সেই স্বপ্ন পূরণে এ বছর তারা সুরাইয়াকে স্কুলে ভর্তি করেছেন।

নাজমা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর সুরাইয়াকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠোনে ভর্তি করেছিলাম। আমাদের বাড়ি থেকে সেটি প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে। সেখানে সুরাইয়াকে কোলো করে নিয়ে যেতাম, আবার নিয়ে আসতাম।'

'আমাদের পাশে কেউ একটু দাঁড়ালে, মেয়েটার চিকিৎসার জন্য একটু উপকার করলে হয়তো আমার মেয়েটা সুস্থ হয়ে যেত', বলেন নাজমা।

একটু সহযোগিতা পেলে শিক্ষা জীবনে সুরাইয়া অনেক ভালো করতে পারবে এমনটিই ধারণা করছেন তার শিক্ষক। মাগুরা পুলিশ লাইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকশানা আক্তার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুরাইয়া আমাদের স্কুলের শিশু শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। তার শারীরিক নানা জটিলতা আছে। মায়ের কোলে সে স্কুলে ভর্তি হতে এসেছিল। তাদের একটি হুইলচেয়ারও নেই।'

তিনি বলেন, 'সুরাইয়ার শারীরিক জটিলতা থকালেও মেধা বা বুদ্ধি অনেক ভালো বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। উন্নত চিকিৎসা পেলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে বলে আমি আশা করি।'

রোকশানা আক্তার আরও বলেন, 'সুরাইয়া যাতে হীনমন্যতায় না ভোগে সে জন্য সব ব্যবস্থা করা হবে। তার শিক্ষার জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা হবে। স্কুলের পক্ষ থেকে তার প্রয়োজনীয় সব চাহিদা পূরণের চেষ্টা করবো আমরা।'

মাগুরা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আশাদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। সুরাইয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা আমার কাছে এলে আমি তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।'

২০১৫ সালের জুলাই মাসে আওয়ামী লীগের ২ পক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন অন্তঃসত্ত্বা নাজমা বেগম। সেই সঙ্গে গুলিবিদ্ধ হয় তার গর্ভের সন্তান। পরে মাগুরা সদর হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে তার অস্ত্রোপচার করা হয়। তখনই জন্ম হয় সুরাইয়ার। সংঘর্ষে বাচ্চু মিয়ার চাচা নিহত হন।

Comments

The Daily Star  | English

India pushes 123 individuals into Bangladesh

Border Guard Bangladesh (BGB) yesterday detained at least 123 individuals, including Rohingyas and Bangla-speaking individuals, after India pushed them into Bangladesh through Kurigram and Khagrachhari border points.

5h ago