মুক্তিযুদ্ধ

খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা: মোহাম্মদ আবু তাহের, বীর উত্তম

মুক্তিযুদ্ধে মোহাম্মদ আবু তাহের ছিলেন ১১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার। বীর উত্তম খেতাবে তার সনদ নম্বর ৯। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়।
মোহাম্মদ আবু তাহের,বীর উত্তম। ছবি: সংগৃহীত

(মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছরে দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা নিয়ে বিশেষ আয়োজন 'মুক্তিযুদ্ধের খেতাবপ্রাপ্ত যোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা'। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাধারণত আমরা ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের বীরত্ব সম্পর্কে জানি। কিছুটা আড়ালে ঢাকা পড়ে যান আমাদের বাকি খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা। দ্য ডেইলি স্টার উদ্যোগ নিয়েছে সেই জানা ও অজানা মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা নিয়মিত প্রকাশ করার। ক্রমানুসারে বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা নিয়েই চলছে ধারাবাহিক এই আয়োজন। পর্যায়ক্রমে বীর বিক্রম, বীর প্রতীক মিলিয়ে সর্বমোট ৬৭২ জন মুক্তিযোদ্ধার বীরত্বগাঁথা প্রকাশ করবে দ্য ডেইলি স্টার। আমাদের আজকের নবম পর্বে রইল মোহাম্মদ আবু তাহের, বীর উত্তম'র বীরত্বগাঁথা)

মুক্তিযুদ্ধে মোহাম্মদ আবু তাহের ছিলেন ১১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার। বীর উত্তম খেতাবে তার সনদ নম্বর ৯। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে মেজর আবু তাহের কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানে। ২৬ জুলাই রাতে বেশ কয়েক দফা চেষ্টার পর মেজর আবু তাহের, মেজর জিয়াউদ্দিন, ক্যাপ্টেন পাটোয়ারী ও মেজর এম এ মঞ্জুর সপরিবারে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। এরপর ২৭ জুলাই এই দলটি দিল্লি পৌঁছে। ৭ আগস্ট কলকাতায় পৌঁছান মেজর আবু তাহেরসহ বাকিরা। ১২ আগস্ট কর্নেল ওসমানীর নির্দেশে মেঘালয়ের তুরায় যান মেজর আবু তাহের।

সে সময়ে ওই এলাকায় মুক্তিবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর কমান্ডে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল। মেজর আবু তাহের গিয়েই সিদ্ধান্ত নিলেন, তাদের প্রথম বড় অপারেশন হবে কামালপুর বিওপিতে আক্রমণ। জামালপুরের ধানুয়া কামালপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর কামালপুর বিওপি ছিল ওই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পাকিস্তানি ঘাঁটি।

এর আগে ১২ নায়েব সুবেদার সিরাজের নেতৃত্বে ১৪৮ সদস্যের ইপিআর সেনা ও গণবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা মিলে কামালপুর বিওপি আক্রমণ করেছিলেন। কিন্তু সফল হননি। ৩১ জুলাই সেট পিস যুদ্ধেও কামালপুর বিওপি দখল করতে পারেনি মুক্তিবাহিনী। ওই যুদ্ধে ১ম ইস্ট বেঙ্গলের ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজসহ ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছিলেন।

মেজর আবু তাহেরের নেতৃত্বে কামালপুর বিওপির আক্রমণের সিদ্ধান্ত তাই চ্যালেঞ্জিং ও বিপজ্জনক ছিল। এই কামালপুর বিওপি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ছিল। কারণ একবার কামালপুর অতিক্রম করলে ঢাকা পৌঁছাতে ব্রহ্মপুত্র নদ ছাড়া কোনো বড় বাধা নেই। পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে করেই হোক বকশিগঞ্জ, জামালপুর ও ময়মনসিংহ নিজেদের দখলে রাখতে চেয়েছিল। সেজন্য এই ঘাঁটি দখলে রাখা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।   

তাই কামালপুরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ়ভাবে গড়ে তুলেছিল পাকিস্তানি বাহিনী।  আশেপাশের এলাকায় নজর রাখতে বাংকারগুলো ছিল মাটি থেকে বেশ কিছুটা উঁচুতে। আর বাংকারের বহির্ভাগে পুঁতে দেয়া হয়েছিল মাইন, কাঁটাতারের বেড়া, বুবি ট্র্যাপ ও  বাঁশের কঞ্চি। এরপরও মেজর আবু তাহের কামালপুর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিলেন।

১৫ আগস্ট প্রায় ১৫০ মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কামালপুর আক্রমণ করেন আবু তাহের। এ সময় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ছিল এলএমজি রাইফেল ও স্টেনগান। প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী এই যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর ১৫-১৬ জন সেনা নিহত হয়। ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হন।

এই আক্রমণের আগে কামালপুর কোনো সেক্টরের অধীনে ছিল না। এ সময় মেজর তাহের কর্নেল ওসমানীর কাছে এই এলাকাকে একটি সেক্টরে পরিণত করার আবেদন করলে তা মঞ্জুর হয়। একে ১১ নম্বর সেক্টর ঘোষণা করে মেজর আবু তাহেরকে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ১১ নম্বর সেক্টরের আওতাধীন এলাকা ছিল কিশোরগঞ্জ মহকুমা বাদে সমগ্র ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা এবং নগরবাড়ি-আরিচা থেকে ফুলছড়ি-বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত যমুনা নদী ও তীর অঞ্চল। এই সেক্টরে নিয়মিত বাহিনীর ৩ হাজার সেনা এবং গণবাহিনীর ১৭ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

 সেক্টর কমান্ডার হওয়ার পর মেজর আবু তাহের তার সেক্টরকে ৮টি সাব সেক্টরে বিভক্ত করেন। এই সাব সেক্টরগুলো হলো মানকার চর, মহেন্দ্রগঞ্জ, পুরাকাশিয়া, ডালু, বাগমারা, শিববাড়ি, রংড়া ও মহেশখালী। একইসঙ্গে তিনি মানকার চর থেকে ডালু পর্যন্ত সরাসরি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যান। অবশিষ্ট অংশ থাকে ভারতীয় বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার সান্ত সিংহের অধীনে।

সেক্টরে গিয়ে মেজর তাহের দেখলেন, মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন পাকিস্তানি ক্যাম্পের পয়েন্টে বিএসএফের নির্দেশে সরাসরি আক্রমণ চালাচ্ছে। মুক্তিবাহিনী বিশৃঙ্খল ও বিপর্যস্ত। এ সময় তিনি এই সেক্টরে মুক্তিবাহিনীকে পুরোপুরি বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে এবং দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের জন্য পুনর্গঠিত করতে লাগলেন। একইসঙ্গে তিনি সম্মুখ সমর বাদ দিয়ে গেরিলা পদ্ধতিতে আক্রমণ করার নির্দেশ দিলেন।

রংপুর ও বগুড়া ৭ নম্বর সেক্টরের অধীনে থাকলেও যোগাযোগের সুবিধার জন্য  অনেক অপারেশন মেজর আবু তাহেরের নির্দেশেই হয়। আগস্ট মাসে কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডার কাদের সিদ্দিকী মেজর তাহেরের নেতৃত্বাধীন ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে চলে আসেন। কেবল তাই নয়, মেজর আফসার উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন আফসার বাহিনীও ছিল মেজর তাহেরের সেক্টরের অধীনে। সেপ্টেম্বর মাসে ভারতীয় বাহিনীর  ৯২ মাউন্টেন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার হরদেব সিং ক্লেয়ার মেজর আবু তাহেরের সঙ্গে বৈঠক করে ১১ নম্বর সেক্টরের সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে একমত হন। এই ব্রিগেডে একইসঙ্গে ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট ও ২টি আর্টিলারি রেজিমেন্ট ছিল।

মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে জেড ফোর্স চলে গেলে রৌমারীকে মুক্ত রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ পাকিস্তানি বাহিনী তাদের চিলমারী ঘাঁটি থেকে রৌমারীতে গিয়ে যে কোনো সময়ে হামলা চালাতে পারে। তখন মেজর আবু তাহের চিলমারী অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন। ১১ অক্টোবর ১১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর তাহেরের নেতৃত্বে ৬০টি নৌকা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা রওয়ানা হন চিলমারীতে।  

এই যুদ্ধে প্রায় অর্ধশত হানাদার সৈন্য ও ১৪ রাজাকার নিহত হয়। ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং আহত হন ২ জন মুক্তিযোদ্ধা। চিলমারী যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় ২০০ রাজাকার ও হানাদার সেনাকে জীবিত আটক করতে পেরেছিলেন। ১৩ অক্টোবর আবু তাহের আটক হানাদার সেনা ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ নিয়ে  মুক্তাঞ্চল রৌমারীতে ফিরে যান। এদিন রাতে রৌমারী মুক্তাঞ্চলের কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার ওয়ালী মাহমুদ ও পাঁচু মিয়ার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন মুক্তিযোদ্ধারা। মেজর আবু তাহেরের অধীনে কুড়িগ্রামের রৌমারী থানা বরাবর মুক্ত ছিল। এখানে তার নেতৃত্বে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প খোলা হয় এবং নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা এই ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষণ নেন।

১১ নম্বর সেক্টরে মেজর তাহেরের নেতৃত্বে কৃষক শ্রমিকদের নিয়ে আলাদা বিশেষ এক ট্রেনিং ক্যাম্প খোলা হয়। প্রাথমিকভাবে এই ক্যাম্পে ২৫০ জন কৃষককে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে যুদ্ধক্ষেত্রে এই মুক্তিযোদ্ধারা কখনো কখনো সামরিক প্রশিক্ষণ পাওয়া সেনাদের চেয়েও দক্ষতা দেখিয়েছিলেন।

অক্টোবরের শেষ দিকে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের বিশাল হাওর অঞ্চল ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে চলে আসে। ১৫ আগস্টের অপারেশনের পর মেজর তাহের পরিকল্পনা করলেন, কামালপুরে নিয়মিত আক্রমণ চালাতে হবে। তিনি গেরিলা অপারশনের মধ্য দিয়ে কামালপুরকে মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন।

২০ আগস্ট মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত হামলায় পাকিস্তানি পেট্রোল পার্টির ২ জন নিহত হয়। ৬ সেপ্টেম্বর রাতে কামালপুর বিওপির উত্তর পূর্ব দিক থেকে আক্রমণ, বকশিগঞ্জ থেকে রিজার্ভ পার্টির আগমনের পর তাদের উপর আক্রমণ এবং মুক্তিবাহিনীর পেতে রাখা অ্যান্টিপার্সোনাল মাইনের আঘাতে ৩৩ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হওয়াসহ একাধিক ঘটনা ঘটে। ২২ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী ফের আক্রমণ চালায় কামালপুরে। এটি ছিল সেটপিস যুদ্ধ। কিন্তু এবারো কামালপুরের দখল হাতছাড়া করেনি পাকিস্তানি বাহিনী।

১৩ নভেম্বর মেজর আবু তাহের অধীনস্থ কমান্ডারদের নিয়ে আলোচনায় বসলেন। ঠিক হলো এদিন রাত ১২টার পরে বা ১৪ নভেম্বর দিবাগত রাতে কামালপুর আক্রমণ  করা হবে। ১৪ নভেম্বর ছিল আবু তাহেরের জন্মদিনও। ১৩ নভেম্বর রাত ১১টায় রওনা হলেন সবাই। কামালপুরের আগেই বানরোড। তারও পেছনে মেজর তাহেরের কমান্ড পোস্ট। সেখানেই অবস্থান নিলেন কেউ কেউ। পাশেই ব্রিগেডিয়ার ক্লেয়ার, গোর্খা রেজিমেন্টে কর্নেল বারাখ, মারাঠা রেজিমেন্টের কর্নেল বুলবুল ও গার্টস রেজিমেন্টের  বারাট।

ঠিক করা হলো, আর্টিলারি ফায়ারের পর শুরু হবে অপারেশন। রাত তখন ১২টা। শেল পড়ছে কামালপুর বিওপির উপরে। মেজর তাহেরের নির্দেশে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার আর্টিলারি নিক্ষেপ করা হয়। পাকিস্তানি সেনারা তখন একটানা গুলিবর্ষণ করছে। নির্দেশ ছিল মুক্তিযোদ্ধারা চার্জ করবে 'জয় বাংলা' বলে। কিছুক্ষণ পর চারপাশ থেকে 'জয় বাংলা' চিৎকার। মেজর তাহেরের কাছে ছিল একটি  ওয়াকিটকি। সেখানে থেকে লেফটেন্যান্ট মিজান হঠাৎই বললেন, 'আমরা পাকিস্তানিদের প্রথম লাইনের বাংকার দখল করে নিয়েছি।' তখন আনন্দে 'জয় বাংলা' স্লোগান তুললেন মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে।

রাত তখন ৩টার মতো। মিজানের সঙ্গে মেজর তাহেরের যোগাযোগ হচ্ছে না। ওয়াকিটকিতে মেজর তাহের বার বার জিজ্ঞেস করছেন, 'মিজান, তুমি কোথায়?' ওপাশে কোনো সাড়া নেই। তিনি চিন্তিত হয়ে গেলেন। এদিকে ভোর হয়ে আসছে। হঠাৎ মেজর তাহের কমান্ড পোস্ট থেকে উঠে ব্রিগেডিয়ার ক্লেয়ারকে বললেন 'আমি ফ্রন্টে যাব।' ক্লেয়ার অবাক হয়ে বলেন, 'কেন!' জবাবে মেজর তাহের বলেন, 'আমি আমার ছেলেদের দেখতে চাই।'  শেলের আঘাতে পাকিস্তানিদের বাংকারগুলো ভেঙে গেছে এরইমধ্যে। পাকিস্তানি সেনারা বের হয়ে আখখেতে লুকাচ্ছে।

মেজর তাহের পজিশন নিয়ে নিয়ে এগোলেন। বান সড়কের ঢালে এসে বসলেন ২ পা ভাঁজ করে। এক পাশে তার ভাই ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল, অন্য পাশে  বাহার, পেছনে ৩-৪ জন পজিশনে। মেজর তাহের কলফ স্টিক দিয়ে পাকিস্তানিদের দেখালেই ওদিকে গুলি করছেন বেলাল। এরমধ্যেই হঠাৎ একটা আওয়াজ হলো।  বেলাল খেয়াল করলেন, মেজর  তাহের বেলালের ওপর পড়ে যাচ্ছেন। দেখলেন তার বাম পা প্রায় বিচ্ছিন্ন। কোনোমতে ঝুলে আছে। মেজর তাহের নিস্তেজ হয়ে গেছেন। একটানা রক্ত পড়ছে। হঠাৎই ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল ভুল বুঝে ওয়াকিটকিতে বলে ফেললেন, 'কর্তা (আবু তাহেরের কোড) ইজ ডেড।'

পাকিস্তানি সেনারা তখন এগিয়ে আসার চেষ্টা করছে। মেজর  তাহেরের এই ভয়াবহ অবস্থা দেখে মুক্তিযোদ্ধারা তাকে তুলে নিলেন। কিন্তু এভাবে তো বেশি দূরে নেওয়া যাবে না। বেলাল ভারতীয় বাহিনীর একটি জিপ আনলেন তখন। আবু তাহেরের তখনো মনোবল ভাঙেনি। এরইমধ্যেই আনোয়ার চলে আসলেন। তাকে দেখেই  মেজর তাহের বললেন, 'দেখো, আমার মাথায় ওরা আঘাত করতে পারেনি। তোমরা কামালপুর মুক্ত করবে। আমি ফিরে এসে যেন দেখি কামালপুর মুক্ত হয়েছে।' এরপরই চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে মেজর তাহেরকে প্রথমে তুরা এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য  গৌহাটিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

মোহাম্মদ আবু তাহেরের জন্ম আসামের বাদারপুরে ১৯৩৮ সালের ১৪ নভেম্বর।  পরে আসাম থেকে তার পরিবার নেত্রকোনা পূর্বধলায় চলে আসে। চট্টগ্রামের প্রবর্তক স্কুল থেকে প্রাইমারি, কুমিল্লার ইউসুফ স্কুল থেকে মাধ্যমিক, সিলেটের এমসি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং একই কলেজ থেকে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পড়ার পর ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬২ সালেই কমিশনপ্রাপ্ত হন তিনি। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে কাশ্মীর ও শিয়ালকোট সেক্টরে অসামান্য বীরত্বের জন্য একমাত্র বাঙালি অফিসার হিসাবে 'মেরুন প্যারাস্যুট উইং' সম্মাননা পেয়েছিলেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের পরে মোহাম্মদ আবু তাহের প্রথমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরে মতবিরোধের এক পর্যায়ে  সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করে বামপন্থী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই এক রায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয় আবু তাহের, বীর উত্তমকে। 

তথ্যসূত্র:

 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: ১০ম খণ্ড

বাংলাপিডিয়া

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টর ভিত্তিক ইতিহাস: সেক্টর ১১ 

 

আহমাদ ইশতিয়াক

[email protected]

Comments

The Daily Star  | English

History of student protests in the USA

American campuses -- home to some of the best and most prestigious universities in the world where numerous world leaders in politics and academia have spent their early years -- have a potent history of student movements that lead to drastic change

2h ago