শীতে চাঙা গিজারের বাজার

ঢাকার গ্রিন রোডের একটি দোকানের ডিসপ্লেতে গিজার। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: রাশেদ সুমন

এক সময় ধনাঢ্যদের বিলাসিতার উপকরণ হিসেবে পরিচিত ঠাণ্ডা পানি গরম করার যন্ত্র গিজার এখন বাংলাদেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের মধ্যেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

এ ছাড়া, এটি এখন আর নগরকেন্দ্রিক পণ্য হিসেবে সীমাবদ্ধ নয়। বরং দেশজুড়ে এর চাহিদা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলে, যেখানে শীতকালে দেশের অন্য যে কোনো অঞ্চলের চেয়ে বেশি ঠাণ্ডা পড়ে।

বাড়তে থাকা আয়, জীবনযাত্রার পরিবর্তন, বিদ্যুতের সহজলভ্যতা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে পল্লী এলাকাগুলোতেও গিজারের ব্যবহার বাড়ছে।

গিজারের প্রধান স্থানীয় উৎপাদকদের মধ্যে অন্যতম ওয়াল্টন হোম অ্যাপ্লায়েন্সের ব্র্যান্ড ম্যানেজার আশিকুল হাসানের মতে, সার্বিকভাবে এই বাজারের মূল্যমান প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

'বাজার বড় হচ্ছে', যোগ করেন তিনি।

ওয়ালটনের এ বছরের গিজারের মজুতের পুরোটাই বিক্রি হয়ে গেছে।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের পরিবারের সদস্যরা গিজারের ব্যবহারে এগিয়ে আছেন। বিভাগীয় শহরগুলো এই পণ্যের মূল বাজার।

আশিকুল জানান, নতুন নির্মাণ করা বাড়িগুলোতে গিজার স্থাপনের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন বিভাগের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের আয়ত্তের মধ্যে চলে এসেছে গিজার। ফলে এই পণ্যের বিক্রিও বেড়েছে।

তিনি বলেন, 'নগরে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি পল্লী অঞ্চল, বিশেষত দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের মধ্যেও এর চাহিদা বাড়ছে।'

এখনো বাজারে আমদানি করা বিদেশি ব্র্যান্ডের পণ্যের চাহিদা বেশি। তবে স্বল্প মূল্যের কারণে স্থানীয় উৎপাদকরাও ভালো করছেন।

স্থানীয় গিজারের দাম ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে এবং আমদানি করা ব্র্যান্ডের মূল্য ৯ থেকে ১১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে।

বর্তমানে বাজারে প্রায় ১৩ ধরনের গিজার পাওয়া যায়। এগুলোর ধারণক্ষমতা ২০ থেকে ৯০ লিটারের মধ্যে। বিক্রয় মৌসুম মূলত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে। বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৩০ শতাংশ বলে জানিয়েছেন এ খাতের সংশ্লিষ্টরা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাজমুন নাহার সম্প্রতি তার পরিবারের জন্য একটি আমদানিকৃত গিজার কিনেছেন, যেটির মূল্য ১১ হাজার ৫০০ টাকা এবং ধারণ ক্ষমতা ৩০ লিটার।

জেলার একজন টেকনিশিয়ান রঞ্জিত বর্মণ জানান, তিনি এ পর্যন্ত এই মৌসুমে ১৭টি গিজার স্থাপনের কাজ করেছেন।

ঢাকার কাজীপাড়ার কবির মিয়া জানান, তিনি এই শীতে ১০০টি গিজার স্থাপন করেছেন, যার সবগুলোই বিদেশ থেকে আমদানি করা।

তবে রংপুর অঞ্চলে এই মৌসুমে গত কয়েক বছরের তুলনায় গিজারের বিক্রি কমে গেছে। এ বছর শীতকাল দেরি করে আসাই এ জন্য দায়ী।

ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ড এলাকার সোহাগ স্যানিটারির মালিক মোহাম্মদ সোহাগ জানান, তিনি এই শীতে ৫০টি গিজার বিক্রি করেছেন। এর মধ্যে মাত্র ৭ বা ৮টি গিজার স্থানীয়ভাবে নির্মিত। বাকিগুলো সব আমদানি করা।

এর আগের বছর (২০২০) তিনি ৮০টি গিজার বিক্রি করেন।

ঠাকুরগাঁও শহরের মঞ্জিল স্যানিটারির মালিক আনিসুর রহমান এই মৌসুমে প্রায় ১০০টি গিজার বিক্রি করেছেন। তবে এর আগের মৌসুমে বিক্রির পরিমাণ ছিল ২০০।

তিনিও দেরি আসা শীতকে গিজারের বিক্রি কম হওয়ার জন্য দায়ী করেন। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের শীত এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় কম।'

পঞ্চগড় শহরের মতিন এন্টারপ্রাইজের মালিক মো আব্দুল মতিন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গিজার বিক্রি করেন। সাধারণত এই জেলার গ্রাহকরা পানি গরম করার জন্য স্থানীয় পণ্য ব্যবহার করেন বলে জানান তিনি।

তিনি চলমান শীত মৌসুমে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা দামের প্রায় ৭০টি গিজার বিক্রি করেছেন।

বাটারফ্লাই মার্কেটিং লিমিটেডের জোনাল সেলস ম্যানেজার গোলাম মর্তুজা জানান, এই মৌসুমে আগের কয়েক বছরের তুলনায় বিক্রি কমে গেছে।

তিনি জানান, বাটারফ্লাই দেশের উত্তরাঞ্চলে, রংপুর বিভাগের ৮টি জেলার সব শোরুমে সম্মিলিতভাবে তাদের ইকো প্লাস ব্র্যান্ডের প্রায় ২৮০টি গিজার বিক্রি করেছে। বর্তমান মৌসুমে বিক্রি হওয়া গিজার থেকে তাদের আয় প্রায় ২৮ লাখ টাকা। গত মৌসুমে তারা ৩০০টি গিজার বিক্রি করেছিলেন। 

ডিসেম্বরে ওয়াল্টন তাদের ৪৩টি বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে ৮ লাখ টাকা দামের ৯২টি গিজার বিক্রি করেছে। অপরদিকে, প্রাণ-আরএফএলের বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানান, প্রতিষ্ঠানটি এই অঞ্চলের শোরুমের মাধ্যমে প্রায় ৬০ লাখ টাকা দামের প্রায় ৭৫০টি গিজার বিক্রি করেছে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Pilots faked flying records

CAAB inquiry finds, regulator yet to take action

11h ago