অনুসরণীয় রাজনীতিবিদ ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী

নারায়ণগঞ্জের মেয়র নির্বাচনের ফলাফল দেখে অনেকেই অবাক হয়নি। রাজনীতিবিদ হিসেবে সেলিনা হায়াৎ আইভীর ভাবমূর্তি ভালো হওয়ার কারণেই তিনি টানা তৃতীয়বারের মতো নারায়ণগঞ্জের মেয়র নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বিশ্বাস।

প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমূর আলম খন্দকারকে তিনি বড় ব্যবধানে পরাজিত করেছেন।

ভোটারদের মন জয় করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইভী ন্যায়সঙ্গত অবস্থান বজায় রেখেছেন। সহজে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ার পরিবেশের মধ্যেই তিনি সতর্কতার সঙ্গে নিজেকে সব ধরনের অন্যায় থেকে দূরে রেখেছেন এবং জনগণের কল্যাণে মনোনিবেশ করেছেন।

মেয়র হিসেবে তার সময়ে করা রাস্তাঘাটের উন্নতিসহ অন্যান্য উন্নয়নের কথাগুলো নারায়ণগঞ্জবাসীর মুখে মুখে ফেরে। দুর্বৃত্তায়ন ও সামাজিক সহিংসতার বিরুদ্ধে তার অটল অবস্থান সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে। এবার তিনি সবুজ শহর গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সব মানুষের কাছে তার যে গ্রহণযোগ্যতা আছে, তা শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও বলেন। এটা তার জন্য বাড়তি পাওয়া।

উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে (নাসিক) প্রথমবারের মতো নির্বাচন হয়। সেবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে আইভী ১ লাখের বেশি ভোটে হারিয়ে মেয়র হন।

পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালে। সেবার তিনি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীকে পরাজিত করে টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র হন। আর এ বছরের ১৬ জানুয়ারি তৃতীয় মেয়র নির্বাচনে বিজয়ের পর তিনি আগামী ৫ বছর মানুষের জন্য 'অক্লান্ত' পরিশ্রম করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এ অভূতপূর্ব বিজয়ের জন্য স্বাধীন পর্যবেক্ষকরা রাজনৈতিক জীবনে আইভীর জনবান্ধব অবস্থানের কথা উল্লেখ করে তাকেই সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দিতে চান।

আতঙ্ক ও সহিংসতার আশঙ্কাকে নস্যাৎ করে নারায়ণগঞ্জ সিটির নির্বাচন উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় যে ভোটারদের ঘুষ দেওয়া, ব্যালট পেপার ছিনতাই, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন থেকে শুরু করে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করে আতঙ্ক সৃষ্টি করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে প্রায় সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনই কলুষিত হয়েছে।

দুঃখজনক হলেও সত্যি যে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংঘর্ষে সারা দেশে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

এ অবস্থায় নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে কোথাও অনিয়ম বা সহিংসতার সংবাদ না পাওয়া স্বস্তির বিষয়। এ নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণও ভালো ছিল।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ভোট পড়েছে ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।

আমরা বিশ্বাস করি, এমন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন প্রশংসার দাবিদার। তবে, এটা বলা দরকার যে বেশ কয়েকজন ভোটার, বিশেষ করে প্রবীণ ও নারী ভোটাররা ইভিএম ব্যবহারে আঙুলের ছাপ দিতে সমস্যায় পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

ত্রুটিপূর্ণ ইভিএম ও ইভিএম পরিচালনার অভিজ্ঞতার অভাবে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের গতি কম ছিল। আগামী দিনের নির্বাচনগুলোর আগে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের ইভিএমের ব্যবহার সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি।

আমরা সেলিনা হায়াৎ আইভীকে তার এ অসাধারণ বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানাই এবং বিশ্বাস করি, নির্বাচন কমিশন চাইলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

5h ago