শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি, উপচার্যের পদত্যাগ দাবি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে উপচার্যের পদত্যাগ দাবি করেছেন তারা।
উপাচার্যের পদত্যাগসহ ৩ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। ছবিটি গতকাল সোমবার, তোলা। ছবি: শেখ নাসির/স্টার

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে উপচার্যের পদত্যাগ দাবি করেছেন তারা।

আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়। বিবৃতিতে সই করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ জন শিক্ষক।

এতে বলা হয়, শাবিপ্রবিতে যা ঘটেছে, তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে কেবল যে উপাচার্য ব্যর্থ হয়েছেন তাই নয়, বরং শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলার নির্দেশ দিয়ে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন তিনি। আন্দোলনের মুখে প্রভোস্ট পদত্যাগ করলেও, শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা ইতোমধ্যে ঘটে গিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারাবাহিকতায় শাবিপ্রবিতেও প্রশাসনের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করছে পুলিশ। লাঠিচার্জ থেকে শুরু করে সাউন্ড গ্রেনেড ইত্যাদি নানা উপায় অবলম্বন করে পুলিশ শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত করেছে, হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে অনেককে।

শিক্ষক নেটওয়ার্ক জানায়, 'অথচ একটি ছোট পরিসরে, ন্যায্য কিছু দাবিতে, এক শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দিয়ে ঘটনার শুরু। সিরাজুন্নেসা হলের ছাত্রিরা ডাইনিংয়ে খাবারের মানোন্নয়ন, ইন্টারনেটের দ্রুতগতি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সমস্যা সমাধানের মতো ন্যায্য তিনটি দাবি জানায় হল প্রাধ্যাক্ষের কাছে। প্রাধ্যাক্ষের কাছে আশানুরূপ সাড়া না পেয়ে, উল্টো দুর্ব্যবহার পেয়ে এবং ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়ে তারা উপাচার্যের কাছে দাবি জানাতে যায়। তাদের সঙ্গে সংহতি জানায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার বিকেলে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে। এরপর পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও তাদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়ে। এতে বিক্ষুব্ধ হয় সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ উপাচার্যকে অফিস থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। পুলিশের লাঠিপেটা এবং শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেডে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। গত রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা করে দেন। সেই সঙ্গে সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে হল ছাড়তে শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দেন।

'তবে নির্দেশনা উপেক্ষা করে তিনটি ছাত্র হল ও দুটি ছাত্রী হলের অনেক শিক্ষার্থী হলে থেকে যায়। তারা এখন উপাচার্যের পদত্যাগের এক দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। আর তাদের সাথে সংহতি জানিয়ে ও শাবিপ্রবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে।'

বিবৃতিদাতারা বলেন, 'বাংলাদেশে, বিশেষত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যারা পরিচালনা করেন, তারা আচার-আচরণে প্রায়শই শাসকের ভূমিকায় আবির্ভূত হন এবং শিক্ষার্থীরা যেন প্রজা এমন আচরণ করেন। তাদের শাসন এক পর্য়ায়ে স্বৈরশাসনে রূপ নেয়, আন্দোলনকারীদের দমন করতে কখনো ক্ষমতাসীন দলের সংগঠন ছাত্রলীগ, কখনোবা পুলিশকে লেলিয়ে দেন তারা। অথচ উপাচার্য়-প্রভোস্ট এসব পদে শিক্ষকরাই থাকেন। নিজের পদ-গদি রক্ষার জন্য এরা শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত করতে পিছপা হন না। গোয়েন্দাদের সাহায্য নিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের নজরদারি করেন, মামলা ঠুকে দেন, রক্তাক্ত করেন। দলীয় রাজনীতিকদের মতো শিক্ষার্থীদের কাউকে শিবির, কাউকে মৌলবাদী, কাউকে জঙ্গি এসব অভিধা দিয়ে থাকেন।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নানান সমস্যা জানিয়ে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বাজেট অপ্রতুলতার কারণে অনেক সেবাই মানোত্তীর্ণ নয়, আর দুর্নীতি-অব্যস্থাপনা তো আছেই। হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা মানবেতর জীবনযাপন করে, সেখানে রয়েছে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের দাপট-নিপীড়ন। এসব নিয়ে শিক্ষার্থীরা তো কথা বলবেই। এসব নিয়ে আন্দোলন করা তাদের নাগরিক অধিকার।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক জানায়, আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে উপচার্য়ের পদত্যাগ চাই। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে তাদের হয়রানি বন্ধ করার দাবি জানাই। পাশাপাশি শাবিপ্রবিতে আবাসনসহ শিক্ষাসংক্রান্ত সব সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করারও দাবি জানাই। আর আমাদের সবসময়ের দাবি পুনর্ব্যক্ত করতে চাই, উপাচার্যসহ সব শিক্ষক নিয়োগে দলীয় পরিচয়কে তুচ্ছ করে মেধা ও শিক্ষাগত যোগ্যতাকে প্রধান করে তুলতে হবে।

বিবৃতিতে সই করেন--জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মানস চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রোফেশনালসের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক প্রিয়াংকা কুন্ডু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইংরেজি) সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মো. সাদেকুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও প্রোডাকশন কৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরিফুজ্জামান রাজীব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক লিপন মন্ডল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খোরশেদ আলম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা মুক্তা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদুল সুমন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, গ্লোবাল সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ, নিউ ইয়র্কের বিশ্বসাহিত্য ও ইন্টারডিসিপ্লিনারি স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক আজফার হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মার্জিয়া রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পারভীন জলী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক সিত্তুল মুনা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সাদিকা হক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল ফজল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীমা আক্তার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক গৌতম রায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক সুস্মিতা চক্রবর্তী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী শুসমিন আফসানা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আর রাজী, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক বিজ্ঞান ও ভাষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাহুল ভট্টাচার্য্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌভিক রেজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজলী সেহরীন ইসলাম, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক তাসমিয়াহ তাবাসসুম সাদিয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসরিন খন্দকার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৌম্য সরকার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুবর্ণা মজুমদার।

Comments

The Daily Star  | English

Love road at Mirpur: A youthful street

Certain neighbourhoods in Dhaka have that one spot where people gather to just sit back and relax. For Mirpur, it’s the frequently discussed street referred to as “Love Road”.

2h ago