ডোজকয়েন: মজা করতে গিয়ে বিলিয়নিয়ার হওয়ার গল্প

একটা ব্যবসা বা চাকরির জন্য কি কাঠখড়ই না পোড়াতে হয়। সেখানে নিছক মজা করতে গিয়ে বিলিয়নিয়ার হয়ে যাওয়াটা নিতান্তই কল্পনা নয় কি? মনে হতে পারে, এ আবার হয় নাকি! শুনতে বেশ অবাস্তব মনে হলেও এটিই হয়েছে, যতই হোক প্রযুক্তির ব্যাপার-স্যাপার বলে কথা! 
বিলি মার্কাস ও জ্যাকসন পালমার। ছবি: সংগৃহীত

একটা ব্যবসা বা চাকরির জন্য কি কাঠখড়ই না পোড়াতে হয়। সেখানে নিছক মজা করতে গিয়ে বিলিয়নিয়ার হয়ে যাওয়াটা নিতান্তই কল্পনা নয় কি? মনে হতে পারে, এ আবার হয় নাকি! শুনতে বেশ অবাস্তব মনে হলেও এটিই হয়েছে, যতই হোক প্রযুক্তির ব্যাপার-স্যাপার বলে কথা! 

২০১৩ সালের দিকে দুজন তুখোড় ইঞ্জিনিয়ার বিলি মার্কাস (আইবিএম) আর জ্যাকসন পালমার (এডোবি) অনেকটা মজা করেই তৈরি করেছিল ডোজকয়েন। 

ডোজকয়েন। ছবি: সংগৃহীত

বলে রাখা ভালো, যেকোনো উদ্যোগে চিন্তা-ভাবনার আদ্যোপান্ত উদঘাটন করার প্রাণপণ চেষ্টা করা হলেও ডোজকয়েনের বেলায় তা হয়নি। মূলত বিটকয়েনের আকাশচুম্বী সাফল্য দেখেই লাইটকয়েনের কোড কপি করে আর কিছু কিছু জায়গায় পরিবর্তন করে বিলি আর জ্যাকসন কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই রাতারাতি বানিয়ে ফেলেছিল আজকের ডোজকয়েন।
 
তখন বিটকয়েনের শেয়ারবাজার মূল্য ছিল মার্কিন ডলারে ১ বিলিয়নের মতো। আর তাদের উদ্দেশ্য ছিল এই বিটকয়েনকে ট্রল বা কটাক্ষ করা। তখন শিবা ইনু কুকুরের বেশ হাইপ চলছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। শিবা ইনু হচ্ছে সেই কুকুরের নাম যার ছবি দিয়ে এখনো মিম বানানো হয়। যেহেতু ডোজ কয়েনের উদ্দেশ্য ছিল মজা করা, তাই এই কুকুরের আইকন দিয়েই তারা বানিয়ে ফেলেন ডোজকয়েনের লোগো। 

শিবা ইনু হচ্ছে সেই কুকুরের নাম যার ছবি দিয়ে এখনো মিম বানানো হয়

তবে, আসল কাণ্ড তো শুরু হয় কিছুদিন পরে। ডোজকয়েনের মূলত কারেন্সির মতো বাস্তব জগতে কোনো মূল্য নেই। বিষয়টি জানার পরেও মানুষ হুজুগের বশে ইনভেস্ট করা শুরু করে। ফলে, মিম ইনভেস্টিং-এর নাম করে এই কয়েন সংগ্রহ করার হাইপ এত বেশি বেড়ে যায় যে ডোজকয়েনের প্রচলন হুহু করে বাড়তে থাকে। বিস্ময়কর শোনালেও সত্যি যে মাত্র এক সপ্তাহ পরেই বাস্তবিক মূল্যহীন এই ডোজকয়েনের দাম এতটাই বেড়ে যায় যে প্রকৃত মূল্যের থেকে তা ৩০০ গুণ হয়ে যায়।
 
এ থেকেই আন্দাজ করা যায়, বর্তমানে বিটকয়েনকে টেক্কা দেওয়ার অপার সম্ভাবনাও রয়েছে ডোজকয়েনের। সেটা দেওয়াটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। বেশ কয়েক দিক বিবেচনা করলে টেক্কা না দেওয়াটা অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। কেন? প্রথমত টেকনিক্যালি ডোজকয়েনের মাইনিং সিস্টেম বিটকয়েনের থেকেও দ্রুতগতির। যেখানে ডোজকয়েনের ট্রানজেকশন রেকটিফাই করতে মাত্র ১ মিনিট লাগে, সেখানে বিটকয়েনের লাগে প্রায় ১০ মিনিট। তাছাড়া বিটকয়েনে লাইফটাইম ক্যাপ থাকলেও ডোজকয়েনে এরকম কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। সহজভাবে বলতে গেলে, বিটকয়েন সর্বোচ্চ ২১ মিলিয়ন পর্যন্ত তৈরি করা যেতে পারে যদিও তা সময়সাপেক্ষ কিন্তু ডোজকয়েনের বেলায় তা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

ডোজকয়েন নিয়ে নিয়মিত টুইট করেছেন ইলন মাস্ক

 
তবে ডোজকয়েন আর যাই হোক, ক্রিপ্টোকারেন্সির তকমা যেহেতু আছে তাই এর মূল্য বৃদ্ধি বা হ্রাস হতে পারে যেকোনো সময়। যেমনটা হয়েছে টিকটক, রেডিটে এই কয়েনের হাইপের ফলে। তা ছাড়া সংবাদমূল্য হিসেবেও স্থান পেয়েছে ফোর্বস ও ফরচুনের মতো গণমাধ্যমে। ড্যালাস মাভরিকস, নিসান, ট্রাভালা, রবিনহুড ইত্যাদি কোম্পানি ডোজকয়েনের মাধ্যমে পেমেন্ট নেওয়া শুরু করেছে।

সম্প্রতিকালে ডোজকয়েনের মূল্য এভাবে বাড়তে থাকার ঘটনার 'টু দ্য মুন ক্যাম্পিং' ভাইরাল হয়ে যায়। আর এর রসদ জোগাতে যুক্ত হন স্বয়ং ইলন মাস্ক। তিনি ডোজকয়েন নিয়ে নিয়মিত টুইট করা শুরু করেন। এ বছর স্পেসএক্সের পেমেন্ট ডোজকয়েনের মাধ্যমে নেওয়ার পরিকল্পনাও জানিয়েছেন ইলন মাস্ক। এখন পর্যন্ত ডোজকয়েনের দাম বেড়েছে ৫ লাখ শতাংশের অধিক। তার মানে ডোজকয়েনের জনপ্রিয়তা চাঁদে গিয়ে ঠেকেছে বলাই যায়!

তথ্যসূত্র:

ফোর্বস অ্যাডভাইজর
ইকোনোমিক অবজারভেটরি.কম
গুড রিটার্নস

Comments

The Daily Star  | English
Workers rights vs corporate profits

How some actors gambled with workers’ rights to save corporate profits

The CSDDD is the result of years of campaigning by a large coalition of civil society groups who managed to shift the narrative around corporate abuse.

11h ago