যারা সরকারের ভৃত্য গোলামে পরিণত হতে পারে, তারাই আজ ভিসি পদের যোগ্য: আনু মুহাম্মদ
যারা সরকারের ভৃত্য গোলামে পরিণত হতে পারে তারাই আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদ ভিসি হওয়ার যোগ্যতা রাখে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
আজ বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি।
এসময় তিনি সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সার্বিক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখা যায়- যারা সরকারের ভৃত্য গোলামে পরিণত হতে পারে তারাই আজ ভিসি পদের জন্য যোগ্য হয়ে থাকে। যার উদাহরণ আজকের শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটমান পরিস্থিতি এবং তথাকথিত উপাচার্যের শিক্ষার্থীদের প্রতি আচরণ।'
'সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন কাউকে নিয়োগ দেন যে বিনা প্রশ্নে সরকার যা করে সেটাকে মেনে নেবে। উল্টো শিক্ষার্থীরা কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না, এমনকি শিক্ষকরাও কোনো প্রশ্ন করতে পারবেন না। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ধরনের উপাচার্য নিয়োগ দিচ্ছেন যারা সরকারের স্বার্থে কাজ করবে তাদের,' বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যদি জ্ঞানচর্চা প্রশ্ন উত্থাপনের দিকে যায়, যদি সৃজনশীলতার দিকে যায়, ক্ষমতাকে প্রশ্ন করার দিকে যায় তাহলে সেই জ্ঞান চর্চা করা যাবে না। তখন ক্যাম্পাসে ভয়ের শক্তি তৈরি করতে হবে। তা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নেতৃত্বে একটা করা হয়, আরেকটি করা হয় ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে। এ দুই শক্তি যাতে অবাধে কাজ করতে পারে, সেটার মূল পৃষ্ঠপোষকতা এবং সমর্থন দেয় সরকার। সুতরাং সরকার চায় এমন উপাচার্য যে সরকারের কথায় উঠবে এবং বসবে। শুধু তাই না। তার নিজের মধ্যে লোভ থাকবে, মেরুদণ্ডহীন থাকবে। এরকম একটা বোধ শক্তি থাকবে, যে বোধ শক্তি দিয়ে তার নিজস্ব কোনো ব্যক্তিত্ব থাকবে না। এ ধরনের ব্যক্তিত্ব হবে উপাচার্য।'
উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণের দাবি ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে অংশ নেন শিক্ষক, আইনজীবী ও সাংবাদিকরা। বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো এই সমাবেশের আয়োজন করে।
শাবিপ্রবি আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, 'শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন সারাদেশের লুটপাট, জুলুমের প্রতিচ্ছবি। শাবিপ্রবি ভিসি নিজেকে জমিদার মনে করেন। তিনি ক্ষমতার ডালে বাদুড়ের মতো উল্টে জড়িয়ে আছেন। ইনি একজন গ্রেনেডিয়ার, গ্রেনেড ভিসি৷ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে তিনি সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়েন। এই উপাচার্যকে সরানো না গেলে সারাদেশে এমন অনেক দুর্বৃত্ত উপাচার্য তৈরি হবে।'
সমাবেশে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা জুঁতি বলেন, 'স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের মৌলিক চাহিদা খাদ্যের জন্য অনশন দেখতে হচ্ছে। আমার বাচ্চাদের পুলিশ দিয়ে বেধড়ক মারা হচ্ছে।'
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা রিতু বলেন, 'শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকারের জন্য লড়াই করতে হয়। তারা ভালো খাবার পায় না, থাকার জায়গা পায় না। তাহলে কীভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিয়ে ভালো অবস্থানে থাকবে। একজন শিক্ষার্থীকে মেধাশূন্য করার সব ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাজানো আছে।'
বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবিরের সভাপতিত্বে এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. হারুনুর রশিদ, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুনয়ন চাকমা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন প্রিন্স, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি অনিক রায়, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সহসভাপতি সায়েদুল হক নিশান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ রায়সহ অনেকে।
Comments