অ্যাপল এয়ারট্যাগ কি নিরাপত্তাহীনতা বাড়াচ্ছে?

অ্যাপল এয়ারট্যাগ। ছবি: সংগৃহীত

মনে করেন, প্রতিদিনকার মতো বাড়ি থেকে বের হলেন বেশ পরিপাটি হয়ে। মনের অবচেতনে অহেতুক চিন্তার উদ্রেক না হওয়ার জন্য বরাবরের মতোই সবকিছু আবারও যাচাই করে নিলেন। খানিকটা নিশ্চিন্ত হলেন বটে। কিন্তু পুরোটা কি আদৌ হতে পারলেন? কে বলতে পারে হয়তো আপনার অগোচরে আপনাকে অনুরসরণ করছে অচেনা কোনো দুষ্কৃতকারী। আপনার লোকেশন জেনে হাজির হয়েছে বাড়ির দরজার ওপাশে। সুযোগের অপেক্ষায় আছে সবকিছু লুটপাট করবে বলে। ব্যাপারটা সিনেমার গল্পের মতো মনে হলেও বাস্তবে এর দেখা মিলেছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর নানা জায়গায়। ব্যবহার করা হচ্ছে অ্যাপলের এয়ারট্যাগ।
 
২০২১ সালের এপ্রিল মাসে টেক মার্কেট জায়ান্ট অ্যাপল বাজারে আনে 'এয়ারট্যাগ' নামে কোয়ার্টার সাইজের ট্র্যাকিং ডিভাইস। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সহজে খুঁজে পাওয়ার ধারণা থেকেই এয়ারট্যাগ উদ্ভাবন করে অ্যাপল। 

ছবি: সংগৃহীত

অনেকটা চাবির রিং সদৃশ ডিভাইসটি চাইলে আপনার বাড়ি, আলমারি কিংবা গাড়ির চাবিগুচ্ছের সঙ্গেও রাখতে পারেন। আবার চাইলে আপনার প্রতিদিনকার ব্যবহৃত ব্যাগপ্যাক বা ভ্যানিটি ব্যাগেও রাখতে পারেন। অ্যাপলের ফাইন্ড মাই অ্যাপের সঙ্গে ২৯ মার্কিন ডলার মূল্যের এই ডিভাইসটির সংযোগ থাকার শর্তসাপেক্ষে এর ব্যবহারকারী, ক্ষেত্রবিশেষে পরিবারের সদস্যরাও অ্যাপল ডিভাইস খুঁজে বের করতে পারেন অনায়াসে। যার ফলে ব্যাগের কিংবা ঘরের কোনো এক কোণে মোবাইল ফোন, ম্যাকবুক, এয়ারপড রেখে ভুলে গেলেও নিশ্চিন্তে থাকতে পারবে ব্যবহারকারীগণ। এমনটাই অ্যাপল প্রতিষ্ঠানের অভিমত। 

কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে ঠিক তার বিপরীত চিত্র। অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থে এয়ারট্যাগ ব্যবহার করে মানুষদের গতিপথ অনুসরণ এবং ব্যবহার না করা সত্ত্বেও অনেকের গাড়িতে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দেখা মিলছে এটির। তাদের মোবাইল ফোনে নোটিফিকেশন বার্তা জানান দিচ্ছে অজানা এয়ারট্যাগের মাধ্যমে তাদের অনুসরণ করার অবৈধ প্রচেষ্টা। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় এরূপ ঘটনার সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। একের পর এক মামলা জড়ো হচ্ছে দেশগুলোর রাজধানীসহ বিভিন্ন প্রদেশের থানাসমূহে। সম্প্রতি টিকটক, রেডিট ও টুইটারে এ বিষয়ক উদ্বেগের দেখা মিলছে গুণিতক হারে। 

ছবি: সংগৃহীত

কয়েকদিন আগে নিউইয়র্কের ওয়েস্ট সেনেকা পুলিশ বিভাগ একটি গাড়ির বাম্পারে এয়ারট্যাগের উপস্থিতি পায়। ঘটনা পর্যালোচনা করে সেখানকার বাসিন্দাদের সতর্ক করে দেয় তারা। পরবর্তী সময়ে অ্যাপলকে এয়ারট্যাগের মামলায় তথ্য প্রদানের জন্য হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বলে জানায় ওয়েস্ট সেনেকা পুলিশ। 

এছাড়া কানাডার স্থানীয় পুলিশ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী কমপক্ষে ৫টি ঘটনায় ২ হাজারের অধিক দামি গাড়িগুলোতে এয়ারট্যাগ পাওয়া যায়। যা লোকেশন ট্র্যাক করে চুরি করার উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।       

সম্প্রতিকালে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভ্যানিয়ায় এক নারীর গাড়িতে গোপনে এয়ারট্যাগ রেখে পরে তাকে অনুসরণ করে এক ব্যক্তি। সিনেমা থিয়েটার থেকে বাড়ি অবধি লোকেশন করে হাজির হতে সক্ষম হয়। কিন্তু কোনো ক্ষতিসাধনের আগেই তার আইফোনে সেফটি এলার্ট পেয়ে কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে যান। ট্র্যাকিং হিস্ট্রি চেক করে দেখতে পান তার সিনেমা থিয়েটারে থাকার পুরো সময়জুড়ে ডিভাইসটি অ্যাকটিভ ছিল এবং তখনো তার আশেপাশেই ডিভাইসের কানেকশন দেখাচ্ছিল। তৎক্ষণাৎ জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালে অচেনা ব্যক্তির উপস্থিতি টের পেয়ে যান ভুক্তভোগী। সতর্ক হয়ে যাওয়ায় অপরাধী চলে গেলে ডিভাইসটিও ডিসকানেক্টেড হয়ে যায়।  

ছবি: সংগৃহীত

মিসিসিপ্পিতে ঘটা আরেকটি ঘটনায় অ্যাপল এয়ারট্যাগের অপ্রীতিকর ভোগান্তির শিকার হয়েছেন র‍্যাঙ্কিন কান্টির বাসিন্দা অ্যাম্বার নর্সওর্দি। তিনি জানান, তার ব্যবহৃত আইফোনে হঠাৎ করে এলার্মের মতো বিপ বিপ আওয়াজে একটি নোটিফিকেশন আসে। সেটি চেক করতে গিয়ে দেখেন কোনো অজানা একটি ডিভাইস তাকে অনুসরণ করছে কয়েক ঘণ্টা ধরে। বিকেলে পরিবারের সঙ্গে পার্কে থাকার সময় থেকে বাড়িতে অবস্থান করা পর্যন্ত সেটি কানেক্টেড দেখাচ্ছিল। তিনি ভয় পেয়ে থানায় অভিযোগ জানালে অ্যাপল সাপোর্ট থেকে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।   

গবেষকদের ধারণা অনুযায়ী, এয়াট্যাগের ব্লুটুথ টেকনোলজির লোকেশন ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করে আরও বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় প্রথমে ডিজিটাল সিগন্যাল নিকটবর্তী আইফোন অপারেটিং সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত ডিভাইসে পাঠালে এয়ারট্যাগ কানেক্টিভিটির স্থান সম্পর্কে নির্দেশনা পাওয়া যায়। কিন্তু শুধু নির্দেশনা পাওয়াই যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞগণ। 

এক্ষেত্রে অ্যাপল প্রতিষ্ঠানকে গ্রাহকদের নিরাপত্তা রক্ষার্থে আরও গুরুত্ব সহকারে কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। 

কিন্তু ততদিন পর্যন্ত নিজেদের জানমালের নিরাপত্তা নিজেদেরই জোরদার করতে হবে। এক্ষেত্রে এয়ারট্যাগের লোকেশন ট্র্যাকিং ডিসকানেক্ট করার জন্য যেসব কাজ করা যেতে পারে-

ছবি: সংগৃহীত

আইওএস ১৩ বা আইপ্যাড ১৪ এর মতো কনফিগারেশনের ডিভাইসের Go to Settings > account name > Find My > Find My iPhone/iPad এবং ডিসএবল Find My network।

ম্যাকওএস ১০.১৫ কনফিগারেশনের ডিভাইসের go to the Apple ID preference > iCloud link > the Options button> Find My Mac item এবং আনচেক Offline Finding বা Find My network। 

আপনার আশেপাশে কোনো এয়ারট্যাগের অবস্থান আছে কি না জানার জন্য আইওএস বা আইপ্যাডওএস এ ব্লুটুথ স্ক্যানার ব্যবহার করতে পারেন। তবে এটি সবসময় সঠিক ফলাফল না দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কেন না এয়ারট্যাগ যেহেতু নিজেই একটি ট্র্যাকার তাই এটি যাতে কেউ ট্র্যাক করতে না পারে সেজন্য বারবার ব্লুটুথ আইডি পরিবর্তন করতে সক্ষম। 

এছাড়া অযাচিত দুর্ঘটনা এড়াতে বাইরে বের হলে আপনার জামার পকেট, ব্যাগপ্যাক ও লাগেজ ইত্যাদি যাচাই করে নিতে পারেন। 

আপনার ব্যবহৃত গাড়িটি সার্বক্ষণিক নজরে রাখবেন। কেন না গাড়ির বেশ কয়েক জায়গায় এয়ারট্যাগ অবস্থান করতে পারে যেটি হয়ত আপনি কল্পনাও করতে পারেন না। পূর্বের ঘটনাগুলোতে গাড়ির সিটের মধ্যে তুলোর ভিতরে লুকিয়ে পুনরায় সেলাই করে রাখার নজিরও পাওয়া গেছে। তাই সর্বদা সতর্কতা অবলম্বনই হতে পারে এ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায়। 

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

7h ago