ব্রহ্মপুত্রের বুকে সড়ক, উদ্দেশ্য বালু পরিবহন

ব্রহ্মপুত্রের বুক চিরে তৈরি হচ্ছে সড়ক। ছবি: সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নে কর্তিমারী নৌ-ঘাটে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে তৈরি করা হচ্ছে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সড়ক। ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বালু উত্তোলন করে তা ট্রাক্টর দিয়ে পরিবহন করার জন্য সড়কটি তৈরি করছেন বালু ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

ঘাটের ইজারাদার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, সড়কটি তৈরি করতে ৩ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হবে। যার যোগান দিচ্ছেন নদ থেকে অবৈধভাব বালু উত্তোলনকারী ও ট্রাক্টর মালিকরা। 

এ ব্যাপারে কর্তিমারী নৌ-ঘাটের ইজারাদার আব্দুল্লাহ আল মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সড়কটি নির্মিত হলে ব্রহ্মপুত্রের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। সমস্যা হবে নৌকা চলাচলের ক্ষেত্রেও। 

ছবি: সংগৃহীত

এই ইজারাদারের অভিযোগ, সড়ক নির্মাণ শেষ হলে এর ওপর দিয়ে ৪০টি ট্রাক্টরে বালু পরিবহনের পরিকল্পনা করেছেন বালু ব্যবসায়ী ও ট্রাক্টর মালিকদের একটি চক্র। তিনি বলেন, 'এই চক্রটির কাছে আমরা সবাই অসহায়। তারা আর্থিকভাবে শক্তিশালী। কেউ প্রকাশ্যে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।' 

স্থানীয় কৃষক মজিবর রহমান বলছেন, প্রতি বছর নদের বুক থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার কারণে বন্যার সময় ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। এতে বসতভিটা হারিয়ে নি:স্ব হয়েছেন নদতীরবর্তী অনেক পরিবার। এছাড়া নদের ভাঙনে ধসে গেছে চাক্তাবাড়ি-ধনারচর-রাজিবপুর বেড়িবাঁধের একাংশ। গত কয়েক বছরে নদের বুকে বিলীন হয়েছে কয়েকটি মসজিদসহ শত শত হেক্টর আবাদি জমি। 

আরেক কৃষক মোবারক আলীর (৬০) বক্তব্য, নদের বুকে সড়ক নির্মাণ হলে চর থেকে ফসল বাড়িতে নিয়ে আসতে তাদের সুবিধাই হবে। কিন্তু বালু ব্যবসায়ীরা সড়কটি তৈরি করছেন তাদের নিজেদের স্বার্থে। 

নদের বুকে সড়ক নির্মাণের কারণ জানতে চাইলে রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়ন ট্রাক্টর মালিক সমিতির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, 'চরে স্থানীয় কৃষকদের বিপুল পরিমাণ জমি আছে। চরের জমি থেকে বাড়িতে ফসল আনার সুবিধার জন্যই সড়কটি তৈরি করা হচ্ছে। এ জন্য কৃষকদের কাছ থেকে কোনো খরচ নেওয়া হচ্ছে না।'

জাহিদুল ইসলাম মনে করেন, তীর থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে বালু তুললে কোনো ক্ষতি হয় না। তিনি জানান, সড়কটি নির্মাণে ৩ লাখ টাকার বেশি খরচ হবে। খরচের টাকা উঠিয়ে আনতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের পরিকল্পনা করেছেন তারা।  

এ বিষয়ে রৌমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল ইমরান জানান, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। তিনি বলেন, 'এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments