বিষাক্ত ঢাকার বাতাস

Air Pollution.jpg
রাজধানীর বায়ুদূষণ। স্টার ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহর। আমরা যারা ঢাকায় থাকি বা ঢাকার বাতাসে নিঃশ্বাস নেই তাদের জন্য এটা নতুন কোনো খবর নয়। গত কয়েক সপ্তাহের একাধিক পরিসংখ্যানে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে ঢাকার অবস্থান।

এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) ঢাকা চীনের উহান বা ভারতের নয়াদিল্লিকে পেছনে ফেলেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখে আমরা হতবাক হয়েছি। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গত ৬ বছরে ঢাকায় মাত্র ৩৮ দিন বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়া গেছে!

স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফিয়ারিক পলিউশন স্টাডিজের ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত পরিচালিত এই সমীক্ষায় দেখে গেছে, এ সময়ে ঢাকার গড় একিউআই স্কোর ছিল ২১৯। একটি শহরের গ্রহণযোগ্য একিউআই স্কোর ০-৫০ এবং এ ক্ষেত্রে ঢাকার স্কোর 'অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর'।

সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় বায়ু দূষণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩০ শতাংশ দূষণ হয় অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে রাস্তা কাটা ও নির্মাণ কাজের কারণে। এরপর ইটভাটা ও কলকারখানার ধোঁয়ায় ২৯ শতাংশ এবং যানবাহনের কালো ধোঁয়ার কারণে ১৫ শতাংশ বায়ু দূষণ হয়েছে। কীভাবে আমরা নিজেদের এই ভয়ঙ্কর অবস্থায় নিয়ে গেছি, তা কল্পনারও বাইরে। আরও ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, এই অবস্থাটা আমরা মেনে নিয়েছি। বছরের পর বছর ঢাকার একিউআই মানের অবনতি হওয়া সত্ত্বেও আমরা বায়ু দূষণ রোধ এবং এর কারণগুলো বন্ধ করতে তেমন কিছুই করিনি।

গত বৃহস্পতিবার এক সম্মেলনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস স্বীকার করেছেন যে ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর এবং তারা 'এ সমস্যা থেকে উত্তরণে কাজ করছেন'। এই বিষাক্ত বাতাসে যারা নিঃশ্বাস নিচ্ছি তাদের অংশ হিসেবে আমরা আবার কবে বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নিতে পারব তা জানতে চাই এবং সময়রেখা উল্লেখ করে এ বিষয়ে জাতীয় পরিকল্পনার বিস্তারিত জানতে চাই।

গত বছর ২৪ নভেম্বর বায়ু দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর (ডিওই), ২ সিটি করপোরেশন ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে ছিল বর্জ্য বহনকারী যানবাহন, নির্মাণ সামগ্রী ও নির্মাণ কাজের স্থানগুলো ঢেকে রাখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এ ছাড়া বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে ঢাকার রাস্তায় পানি ছেটানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এটা স্পষ্ট যে এসব নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব নির্দেশনার বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণেও ব্যর্থ হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের ওপর নজরদারি কে করবে? প্রায় ২ কোটি মানুষের শহর ঢাকাকে বসবাসযোগ্য ও শ্বাস-প্রশ্বাসের উপযোগী করতে ধারাবাহিক ব্যর্থতার জন্য তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার সময় এসেছে।

১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, যখন বাতাসের মান ঢাকার মতো এমন খারাপ অবস্থায় পৌঁছায়, তখন পরিবেশ অধিদপ্তরের অবশ্যই স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে গণসতর্কতা জারি করার কথা। কিন্তু এমন কোনো সতর্কতা তারা এখনো জারি করেনি। 'এতে তাদের অবহেলার ইঙ্গিত পাওয়া যায়' উল্লেখ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বিষয়টিকে সামনে এনেছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর শুধু ঢাকাতেই ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং সারা দেশে ১ লাখ ৫৩ হাজার মানুষ মারা যায়। কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই বিষয়টিকে জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করে সে অনুযায়ী এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: A day of sharing for some, a day of struggle for others

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

46m ago