শিরোপা ধরে রাখার মিশনে কেন হতাশায় ডুবল যুব দল?

পুরো আসরে যুব দলের ব্যাটসম্যানরা করেন হতাশ

আকবর আলি উঁচিয়ে ধরেছিলেন শিরোপা। যুব বিশ্বকাপ জিতে প্রথমবার বিশ্ব মঞ্চে রাজার আসনে বসেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট। শিরোপা ধরে রাখার মিশনে পরের আসরেই দল ডুবল হতাশায়। এবার চ্যাম্পিয়ন না হতে পারলেও ভালো পারফরম্যান্স ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু রাকিবুল হাসানের দল করতে পারল না বলার মতো কিছুই। ক্যারিবিয়ান থেকে একদম হতাশা নিয়েই দেশে ফিরবে তারা।

কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে ৫ উইকেটে হেরে বিশ্বকাপ শিরোপা ধরে রাখার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় যুবাদের।  এর আগে টুর্নামেন্টের শুরুতে ইংল্যান্ডের কাছে বিধ্বস্ত হয়ে আসর শুরু করে তারা।

ইংল্যান্ড ও ভারত বড় দুই প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই ব্যাটিং ব্যর্থতায় টেনেটুনে একশো করতে পারে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচেই হয়নি কোন লড়াই। মাঝে দুই ম্যাচে অপেক্ষাকৃত অনেক দুর্বল দল কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারানো গেছে অনায়াসে। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের মান বিচারে  ওই দুই জয়কে বড় করে দেখার উপায় নেই।

দল ভাল না করার সঙ্গে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যেও নিজেদের মেলে ধরার কাজটাও হয়নি সেভাবে। পেস বোলার হিসেবে আলো কেড়েছেন রিপন মণ্ডল। আশিকুর রহমান কিছুটা জুতসই। তানজিম হাসান সাকিব আগের বিশ্বকাপ স্কোয়াডেই ছিলেন। তার সামর্থ্য জানা গেছে আগেই। তিনিও এবার আহামরি কিছু করেননি। অধিনায়ক রাকিবুল বাঁহাতি স্পিনে ছিলেন গড়পড়তা।

ব্যাটিংয়ের দিক থেকে একটি নামও আলাদা করে বলার উপায় নেই। কেন এবার ভুলে যাওয়ার মতো পারফরম্যান্স? বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদিন ফাহিম মনে করেন, এবারের দলটির ভালো করার কোন আভাস আগে থেকেই ছিল না, সেইসঙ্গে তাদের উপর ভর করেছিল প্রত্যাশার চাপ,   'বিশ্বকাপের আগেও ওরা সিরিজগুলো খেলল, তাতে তাদের দল হিসেবে সামর্থ্যবান মনে হয়নি।  খুব ভাল করছিল না আগে থেকেও। ভারতে গিয়ে যে সিরিজটা খেলেছে, ওটা ওদের (ভারত) লিডিং ক্রিকেটারদের দুটো ভাগ করা হলো। তাতে একটা ফল এসেছে। কিন্তু বিশ্বকাপের আগেও যে ভাল খেলছিল না তা। আত্মবিশ্বাসের অভাব নিয়েই খেলতে গেছে।'

'ইংল্যান্ডের সঙ্গে শুরুতে ধাক্কা খাওয়ার পর আত্মবিশ্বাস আরও নড়ে যায়। আর আমার মনে হয় গতবারের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার একটা চাপ এবারও ছিল। এটা ধরে নিয়েছিল যে ওদের চ্যাম্পিয়ন হতেই হবে বা এরকম। গতবার এরকম কোন চাপ ছিল না।'

বিপিএলের দল ফরচুন বরিশালের পরামর্শক হিসেবে কাজ করা বিসিবির গেম ডেভোলাপমেন্টের সাবেক এই কর্মকর্তা মনে করেন, খেলোয়াড় তৈরি থেকে ফলাফলের দিক মন দেওয়াতেই হয়েছে এমন বিপর্যয়,  'এটাকে একটা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে না দেখে রেজাল্টের দিকে বেশি মনযোগি হওয়াতেই আমরা ভাল খেলতে পারলাম না। অন্যরা কিন্তু এটাকে খেলোয়াড়দের তৈরি করার একটা ধাপ হিসেবে দেখে। আমাদের মানসিকতার কারণে যে চাপটা হয় সেটা খেলোয়াড় ডেভোলাপমেন্টের জন্য ভাল না।'

'ভারত কিন্তু আমাদের সঙ্গে সিরিজ খেলেছে দুই দলে ভাগ হয়ে। তাতে হারলেও তারা কিন্তু প্রস্তুতি নিয়েছে। ওরা যে অনেক ম্যাচ খেলেছে তাও কিন্তু না। ওদের মূল লক্ষ্যটা ছিল খেলোয়াড়দের ডেভোলাপমেন্ট, রেজাল্টের থেকে। আমাদের উলটো। সেটা চাপ হয়ে যায়।'

এবার ভালো না করার পেছনে করোনাভাইরাসের কারণে যথাযথ প্রস্তুতির ঘাটতি সামনে এনেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তবে করোনার প্রভাব ছিল সব দলের উপরই। এবারের যুব পর্যায়ে বিশ্বকাপের আগে সর্বোচ্চ ১২ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশই। যাতে এসেছে কেবল তিন জয়। বিশ্বকাপের হতাশার ফলের একটা আভাস ছিল সেখানেই।

বিসিবির জুনিয়র নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদ অবশ্য অন্ধকারে আলো খুঁজছেন, 'অবশ্যই ব্যাটিং পুরো টুর্নামেন্টে হতাশার কারণ ছিল। যেটার মূল্য দিতে হয়েছে। আমি কোন অজুহাত দেব না কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালের পিচটা খেলার মতো প্রস্তুত ছিল না। টস হয়ে গেছে নির্ধারক।'

'টুর্নামেন্ট ভালো না গেলেও কিছু ইতিবাচক জিনিস আছে। আমরা কিছু পেস বোলার পেয়েছি। যেমন রিপন মণ্ডল ১২ উইকেট নিয়েছে। পুরো আসরে ভাল করেছে। তানজিম হাসান সাকিব ও আশিকুর রহমানও খুবই প্রতিশ্রুতিশীল। তাদের গড়ে তুলতে পারলে একদিন বাংলাদেশের মূল দলে প্রতিনিধিত্ব করবে।'

Comments

The Daily Star  | English
rally demanding ban on awami league in Dhaka

Blockade at Shahbagh demanding AL ban

The demonstration follows a sit-in that began around 10:00pm last night in front of the Chief Adviser's residence

4h ago