আলেশা মার্টের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা কমিশনের মামলা

মোটরসাইকেলের বাজার অস্থিতিশীল করার অভিযোগ

বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশকে ব্যাহত করার অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন।

এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে প্রতিযোগিতা কমিশন স্ব-প্রণোদিত হয়ে আলেশা মার্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিল।

কমিশন বলছে, ২০২১ সালের জুন মাসে বাজাজ পালসার ব্যান্ডের ১৫০ সিসির মোটরসাইকেল বাজার মূল্যের চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম মূল্যে বিক্রি করেছে আলেশা মার্ট। এভাবে তারা বাংলাদেশের মোটরসাইকেলের বাজার অস্থিতিশীল করেছে।

আলেশা মার্ট বাজাজ পালসারের যে অথোরাইজ সেলার এস কে ট্রেডার্সের কাছ থেকে কম মূল্যে মোটার সাইকেল কেনার কথা বলেছে—সেই নামে কোনো প্রতিষ্ঠান খুঁজে না পাওয়ার কথা বলেছে কমিশন।

আলেশা মার্টের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর ১৬/২ এর ক ধারায় মামলা করা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, কতৃত্বময় হিসেবে গণ্য কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তার কর্তৃত্বময় অবস্থানের অপব্যবহার করতে পারবে না।

কমিশনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সব কিছু যাচাই-বাছাই করে প্রতিযোগিতা কমিশন মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৩১ জানুয়ারি মামলা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, 'আলেশা মার্টকে ৩১ জানুয়ারি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাদেরকে ১৬ ফেব্রুয়ারি কমিশনে উপস্থিত হয়ে অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে।'

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপার্সন মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, মার্কেটকে প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য অনলাইন বা অফলাইন যে ব্যবসা, যারাই করছে, তারা নিয়ম মেনে ব্যবসা করবে। কেউ নিয়মের বাইরে গিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না।

এ বিষয়ে আলেশা মার্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর আলম শিকদার বলেন, মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আপনার কাছ থেকেই বিষয়টি প্রথম শুনলাম। বিষয়টি জেনে আমি মন্তব্য করতে পারব।

গত ৩০ ডিসেম্বর আলেশা মার্টের ফেসবুক পেজে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাচ্ছি। আলেশা মার্ট কোথাও যাবে না। আমিও কোথাও যাব না। আপনারা সবাই টাকা ফেরত পাবেন।

তিনি বলেন, ৬ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের জরুরি বৈঠক আছে। বৈঠক শেষ হলে আপনারা 'ক্লিন গাইড লাইন' পেয়ে যাবেন।

সাড়ে ছয় থেকে সাত হাজার গ্রাহক পণ্য ও অর্থ ফেরত পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন বলেও তিনি জানান।

আলেশা মার্ট ছাড়াও প্রতিযোগিতা কমিশন এখন পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ সপ, কিউকম ডট কম, ধামাকা, আলাদিন প্রদীপ, আনন্দের বাজার, ফাল্গুনি শপ ডট কম, ই-অরেঞ্জ, আদিয়ান মার্ট, থলে, শ্রেষ্ঠ, দালাল প্লাস, টোয়েন্টিফোর টিকেটি ডটকমের বিরুদ্ধে স্ব-প্রণোদিত হয়ে অভিযোগ দায়ের করেছে।

আলেশা মার্ট ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে যাত্রা শুরু করে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ দেশের ব্যবসায়িক নেতা ও বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা।

আলেশা মার্ট বাংলাদেশের আলেশা হোল্ডিংসের একটি অঙ্গ সংস্থা। আলেশা হোল্ডিংস ২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করে।

২০২১ সালের জুলাইয়ের মাঝামাঝি রাজধানীর অভিজাত এক হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে আলেশা মার্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর আলম শিকদার বলেছিলেন, আলেশা মার্ট ছয় মাসে ৩৫০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। ভর্তুকির পুরোটাই দিয়েছে বড় ছাড়ে মোটরসাইকেল বিক্রি করে।

তিনি বলেন, ছয় মাসে অন্য পণ্য বিক্রি করে তারা ১৪০ কোটি টাকা মুনাফা করেছেন। ফলে ছয় মাসে নিট ভর্তুকি হয়েছে ২১০ কোটি টাকা। আর পণ্য বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার।

এদিকে গত বছরের ২ ডিসেম্বর সরকারের কাছ থেকে ৩০০ কোটি টাকার চলতি মূলধন সহায়তা চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে আলেশা মার্ট কর্তৃপক্ষ। গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়া ও নিজেদের কার্যক্রম পুনরায় চালু করতে তারা এই সহায়তা চেয়েছিল।

এরপর ১৫ ডিসেম্বর চিঠির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, আলেশা মার্টকে কোনো অর্থ–সহায়তা দেবে না সরকার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া আলেশা মার্টের আবেদনপত্র উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে আট লাখ ক্রয়াদেশ পায়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে করা ঋণ আবেদনের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি তিন হাজার ডেসিমেল জমি বন্ধকসহ প্রয়োজনীয় জামানতের আশ্বাস দিয়েছিল।

Comments

The Daily Star  | English

Rawhide market disappoints again despite govt price hike

The Ministry of Commerce had increased the price of cowhide in Dhaka by Tk 5-10 per square foot, setting the official rate at Tk 60-65

24m ago