পেরুতে নলখাগড়ার দণ্ডে ঢুকিয়ে রাখা ২০০ মানব মেরুদণ্ড আবিষ্কার

পেরুতে নলখাগড়ার তৈরি দণ্ডের ঢুকিয়ে রাখা প্রায় ২০০টি মেরুদণ্ড আবিষ্কৃত হয়েছে। নতুন এক গবেষণা অনুযায়ী, মৃত্যুর পর মানব দেহাবশেষকে এভাবে সংরক্ষণের প্রক্রিয়া এ অঞ্চলে নজিরবিহীন।

সিএনএন জানিয়েছে, পেরুর দক্ষিণ উপকূলের কাছাকাছি অঞ্চল চিনচা উপত্যকায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কবরের সঙ্গে এই দণ্ডগুলো আটকানো অবস্থায় খুঁজে পেয়েছেন এক দল আন্তর্জাতিক গবেষক। হাড়গুলো যে সময়কার দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি তখন ইউরোপের ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিল।

গবেষকরা এই দণ্ডগুলোকে 'ভারটিব্রে অন পোস্টস' বা 'দণ্ডের ওপর কশেরুকা' নাম দিয়েছেন।

এ অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া ১৯২টি মেরুদণ্ড থেকে প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানতে পেরেছেন, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই মেরুদণ্ডের হাড়গুলো একজন ব্যক্তির দেহ থেকেই নেওয়া হয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি প্রত্নতত্ত্ব সংক্রান্ত জার্নাল অ্যান্টিকুইটিতে এই গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষকদের মতে, সংরক্ষণের জন্য মূলত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অপেক্ষাকৃত তরুণ সদস্যদের হাড় ব্যবহার করা হয়েছে। তারা আরও জানান, এই 'দণ্ডের ওপর কশেরুকা'গুলো ১৪৫০ থেকে ১৬৫০ সালের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে। সে সময় ইউরোপের ঔপনিবেশিক শাসনের পরিধি বাড়তে থাকায় ইনকা সাম্রাজ্যের সূর্য অস্ত যাচ্ছিল।

গবেষণা প্রধান জ্যাকব এল বংগার্স জানান, চিনচা উপত্যকার ইতিহাসে ওই সময়টিকে বেশ 'ঝামেলাপূর্ণ' বলা যায়, কারণ তখন মহামারি ও দুর্ভিক্ষ স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে গ্রাস করছিল।

ইউরোপীয়রা এসে পৌঁছানোর আগে, সেখানে চিনচাদের রাজত্ব ছিল। তারা ১০০০ থেকে ১৪০০ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন এবং শক্তিশালী ইনকা সাম্রাজ্যের সঙ্গেও মিত্রতা তৈরি করেন। তবে ইউরোপের ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো অঞ্চলটিতে খুঁটি গেড়ে বসার পর ৩০ হাজার মানুষের জনগোষ্ঠী ১৫৩৩ সাল থেকে ১৫৮৩ সালের মধ্যে ৯৭৯ তে এসে ঠেকে।

যুক্তরাজ্যের ইস্ট অ্যাংলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ্যার জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহকারী জ্যাকব তার আগের এক গবেষণায় পেরুর এই অঞ্চলে শত শত কবর লুণ্ঠনের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।

সংবাদ মাধ্যমের কাছে দেওয়া এক বার্তায় জ্যাকব জানান, ঔপনিবেশিক আমলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের কবর লুটের প্রবণতা পুরো চিনচা উপত্যকা জুড়ে চালু ছিল। লুটের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল কবরের ভেতর থেকে সোনা ও রূপার তৈরি উপকরণ চুরি করা এবং একই সঙ্গে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ধর্ম ও শেষকৃত্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কৃষ্টিকে ধ্বংসের চেষ্টা।

লুটের কারণে অনেক সময় মরদেহে বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়। গবেষকরা ধারণা করছেন, এই ক্ষতিগুলোকে মেরামতের চেষ্টায় হাড়গুলোকে দণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করা হয়ে থাকতে পারে। রেডিওকার্বন ডেটিং এর মাধ্যমে গবেষকরা আরও জানতে পেরেছেন, নলখাগড়ার দণ্ডে মেরুদণ্ড সংযুক্ত করার কাজটি মরদেহকে কবর দেওয়ার পরে করা হয়েছে।

প্রাচীন মিশরীয়দের মতো, চিনচা উপত্যকার অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্যেও মৃত্যুর পরে তাদের শারীরিক গঠন অক্ষত রাখার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অন্য এক গবেষণা অনুযায়ী, এ অঞ্চলের বাসিন্দারা মৃতদের বিশেষ পরিচর্যা করতেন। পার্শ্ববর্তী চিনচরো জাতির মানুষরাই মরদেহকে কৃত্রিম ভাবে মমি করার প্রযুক্তির উদ্ভাবক হিসেবে পরিচিত। মিশরের ফারাওরা মমিকরণ শুরুর ১ হাজার বছর আগের কথা সেটি।

ঔপনিবেশিক আগ্রাসনকারীরা পাহাড়ি আন্দিজ এলাকার মমিগুলোকে ধ্বংস করার পর নৃগোষ্ঠীর মানুষরা তাদের স্বজাতির মরদেহের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করতেন। সেগুলোকে জোড়াতালি দিয়ে তারা নতুন করে কবর বা কবরের মতো স্থাপনা তৈরি করতেন।

চিনচা উপত্যকায় খুঁজে পাওয়া দণ্ডগুলো হয়তো সেরকমই কোনো প্রচেষ্টার চিহ্ন। মৃত পূর্বপুরুষের ক্ষতিগ্রস্ত দেহাবশেষকে নতুন করে সাজিয়ে তাদের মৃত্যু পরবর্তী যাত্রাকে সুগম করার এ যেন এক মরিয়া প্রয়াস।

জ্যাকব জানান, সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে এ ধরনের আচারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু বহিঃশক্তির আগ্রাসনের মুখে এ ধরনের চর্চাগুলো হুমকির মুখে পড়ে থাকতে পারে।

'নতুন এই আবিষ্কার আমাদেরকে আরও ভালো করে জানিয়েছে যে এ ধরনের সংঘাত থেকে কবরও মুক্ত থাকে না', যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

6h ago