সাভারের ‘গোলাপরাজ্যে’ ছত্রাক সংক্রমণ, দিশেহারা চাষী

ফুলের ব্যবসায় করোনাইরাস মহামারির অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ছত্রাকের সংক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন 'গোলাপরাজ্য' হিসেবে পরিচিত সাভারের শ্যামপুর, মৈস্তাপাড়া, সাদুল্লাপুর, বাগনীবাড়ি, ভবানীপুর ও বিরুলিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামের গোলাপচাষীরা।

ছত্রাকের কারণে গোলাপের গাছসহ ফুলের কলি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও এই বিপর্যয় ঠেকাতে পারছেন না চাষীরা।

সাভার উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুসারে, এলাকার প্রায় দেড় হাজার কৃষক বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষে জড়িত। এখানকার প্রায় ২৭৫ হেক্টর জমিতে গোলাপের চাষ হয়।

গ্রিক পুরাণে বর্ণিত আছে, দেবী আফ্রোদিতির জন্মের সময় পবিত্রতা ও বিশুদ্ধতার প্রতীক হিসেবে তার শরীর ছিল সাদা গোলাপে আচ্ছাদিত। পরে প্রেমিক অ্যাডোনিসের রক্তে সেটা হয়ে ওঠে রক্তলাল। সেই থেকে প্রেমের প্রতীক লাল গোলাপ। গত কয়েক বছর ধরে ফুলের মৌসুমে গোলাপের সুগন্ধ আর চোখ জুড়ানো দৃশ্য নিয়ে সেজে থাকা গোলাপগ্রামগুলো দেখতে ঢাকার আশপাশ থেকে অনেকেই দল বেঁধে চলে আসেন। তবে ছত্রাকের কারণে এবার বাহারি বাগানের সেই দৃশ্য মেলা দুষ্কর।

শ্যামপুর গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া (৬৫) গত ২ যুগ ধরে গোলাপের চাষ করে আসছেন। তিনিসহ তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও গোলাপচাষে যুক্ত।

ওয়াদুদ মিয়া জানান, এবার ৭৫ শতাংশ জমিতে গোলাপের চাষ করেছেন তিনি। কিন্তু প্রায় সবটাই ছত্রাকের সংক্রমণে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, 'ছত্রাকের কারণে গোলাপ গাছের কলি মরে ঝরে পড়ছে। ছত্রাকনাশক ছিটিয়ে কিংবা পরিচর্যা করেও কাজ হচ্ছে না। বাগান পরিচর্যা বাবদ এখন পর্যন্ত লাখ টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। কিন্তু ১ টাকার ফুলও বিক্রি করতে পারি নি।'

এলাকার গোলাপচাষীদের কাছ থেকে জানা যায়, ডিসেম্বরের শুরু থেকে মার্চ মাসের পুরোটাই গোলাপের মৌসুম। এ সময়কালে বাগানগুলো ফুলে পরিপূর্ণ থাকে। পয়লা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে বিক্রিও হয় প্রচুর। কিন্তু এবার আর সেই পরিস্থিতি নেই।

ওয়াদুদ মিয়ার বাগান থেকে কিছুটা দূরে আরেক গোলাপচাষী উমেদ আলীর বাগান। তিনি জানান, তিনি এবার ৭০ শতাংশ জমিতে গোলাপের চারা লাগিয়েছিলেন। কিন্তু ডিসেম্বরের শেষের দিকে পুরো বাগানের গাছ নষ্ট হয়ে যায়। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'এই সমস্যার কথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের জানিয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি। ছত্রাক ঠেকাতে তারা যা যা করতে বলেছেন, তা করেও কোনো লাভ হয়নি।'

আরেক গোলাপচাষী সোবহান মিয়ার ভাষ্য, চলতি মৌসুমে বাগান পরিচর্যায় সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের খরচ বাবদ ৫৭ হাজার টাকা খরচ করেছেন তিনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১টি গোলাপও বিক্রি করতে পারেননি। অথচ গত বছর পয়লা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসের আগে তিনি ৮০ হাজার টাকার গোলাপ বিক্রি করেছিলেন।

সোবহান মিয়া বলেন, 'যে ক্ষতি আমাদের হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠা কঠিন। তাই সরকারের পক্ষ থেকে কিছুটা সহযোগিতা পাওয়া গেলে ভালো হয়।'

এদিকে বাগান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চাষীদের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন বাগানে কাজ করা শ্রমিকরাও। কাজ না থাকায় তাদের অধিকাংশকে বেকার বসে থাকতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদের ভাষ্য, চাষীরা গোলাপ বাগানে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও সার ব্যবহার করে থাকেন। যে কারনে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ছত্রাকের সংক্রমণ হয়েছে। এ ছাড়া এই মৌসুমে আবহাওয়াও খারাপ ছিলো। মাঝে বৃষ্টি হয়েছে। সেটাও ছত্রাক সংক্রমণের কারণ হতে পারে।

নাজিয়াত আহমেদ বলেন, 'আমরা বাগান পরিদর্শন করে কৃষকদের বাগানে পানি দেওয়া বন্ধ রাখতে বলেছি। বাগান আগাছামুক্ত করে গোলাপ গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে বলেছি। এছাড়া কিছু ছত্রাকনাশক ছিটানোর পরামর্শও দিয়েছি।'

এই সমস্যার সমাধানে স্থানীয় গোলাপচাষীদের নিয়ে একটি আলোচনা সভাও করা হয়েছে বলে জানান নাজিয়া।

এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, 'এরমধ্যে ঢাকা বিভাগীয় কর্মকর্তারাও গোলাপ গ্রামগুলো পরিদর্শন করেছেন। তাদের পরামর্শ অনুসারে আক্রান্ত গাছ ও ফুলের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। আমরা চাষীদের পাশে আছি। তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার ব্যাপারেও আলোচনা চলছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Disrupting office work: Govt employees can be punished within 8 days

The interim government has moved to amend the Government Service Act-2018 to allow swift disciplinary action against its employees who will be found guilty of disrupting official activities.

7h ago