যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো এনএফটির বিনিময়ে বাড়ি বিক্রি

আগামী মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা গালফ কোস্টের একটি বাড়ি অভিনব উপায়ে বিক্রি হতে যাচ্ছে। সংবাদ সংস্থা এপি’র প্রতিবেদনে জানা গেছে, দেশটিতে প্রথমবারের মতো ডলারের বদলে নন ফাঞ্জিবল টোকেনের (এনএফটি) বিনিময়ে এ ধরনের লেনদেন হতে যাচ্ছে।
ছবি: রয়টার্স ফাইল গ

আগামী মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা গালফ কোস্টের একটি বাড়ি অভিনব উপায়ে বিক্রি হতে যাচ্ছে। সংবাদ সংস্থা এপি'র প্রতিবেদনে জানা গেছে, দেশটিতে প্রথমবারের মতো ডলারের বদলে নন ফাঞ্জিবল টোকেনের (এনএফটি) বিনিময়ে এ ধরনের লেনদেন হতে যাচ্ছে।

এনএফটি শব্দটা শুনলেই ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রসঙ্গ চলে আসে এবং তা সংগত কারণেই। এটি হচ্ছে এক ধরনের এনক্রিপশন প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সিকে সুরক্ষিত করা যায়। এনএফটি প্রয়োগের মাধ্যমে ডিজিটাল পণ্যকে এক ধরনের সনদ দেওয়া যায়। অর্থাৎ যার কাছে এই সনদ থাকবে, তিনিই সে পণ্যটির আসল মালিক হিসেবে পরিচিত হবেন। কেউ সে পণ্যের প্রতিলিপি (ডিজিটাল পণ্যের ক্ষেত্রে যেটি কপি পেস্ট করার মতোই সহজ কাজ) তৈরি করলেও 'এনএফটির' কল্যাণে খুব সহজেই বোঝা যাবে কে আসল আর কে নকল মালিক। অর্থাৎ, বাড়ি প্রসঙ্গে নকল বা জাল দলিল নিয়ে এসে কেউ মালিকানা দাবি করলেও খুব সহজেই তাদের দাবির সত্যতা যাচাই করা যাবে।

'নন ফাঞ্জিবল' শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে এমন কিছু, যেটি অনন্য এবং যাকে প্রতিস্থাপন করা যায় না। বিটকয়েন ফাঞ্জিবল, কারণ একটি বিটকয়েনের পরিবর্তে আপনি আরেকটি বিটকয়েন গ্রহণ করলেও আপনার কাছে একই জিনিসই থাকবে।

কিন্তু আপনি যদি চিত্রকরের আঁকা একটি পেইন্টিংয়ের পরিবর্তে আরেকটি পেইন্টিং গ্রহণ করেন, আপনার কাছে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বস্তু থাকবে। এ ক্ষেত্রে পেইন্টিংগুলোকে 'ফাঞ্জিবল' বলা যেতে পারে।

এ ক্ষেত্রে আরেকটি ধারণা প্রাসঙ্গিক হয়, যেটি হচ্ছে 'ব্লকচেইন'।

ব্লকচেইন হচ্ছে ডিজিটাল তথ্য সংরক্ষণের একটি প্রযুক্তি, যেখানে 'ব্লক' নামের কিছু সুনির্দিষ্ট জায়গায় তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। একটি ব্লকে অনেক বেশি তথ্য জমে গেলে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এর সামনে আরেকটি ব্লক তৈরি করে সেখানে নতুন তথ্য জমানো শুরু হয়। এভাবে একের পর এক 'ব্লক' যুক্ত হয়ে একটি চেইন তৈরি হয়। এভাবেই ব্লকচেইন নাম এসেছে।

প্রথাগত ব্যাংকের পরিবর্তে ব্লকচেইন প্রযুক্তি খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, কারণ এটি একেবারেই স্বচ্ছ একটি ডিজিটাল লেজার, যেটি সবার কাছে দৃশ্যমান। 'বিল্ট ইন' নামের একটি অনলাইন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান একে গুগল ডকস'র সঙ্গে তুলনা করেছে।

অর্থাৎ, ব্লকচেইন এমন একটি বিষয়, যেটি সবাই একইসঙ্গে দেখতে পায় (ভিউ করতে পারে) এবং এটাও জানতে পারে যে, কেউ সেখানে কোনো ধরনের পরিবর্তন (এডিট) করছেন কী না। তবে তার মানে এই না যে, কেউ চাইলেই ব্লকচেইনে ঢুকে তথ্য এলোমেলো করে ফেলতে পারবেন। এর বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে, কিন্তু এই প্রযুক্তি শতভাগ নিরাপদ ও সুরক্ষিত বলেই জানান বিশেষজ্ঞরা।

কিছু বিশেষ ধরনের ব্লকচেইন আছে, যেমন ইথারিয়াম ব্লক চেইন। ইথার নামের ক্রিপ্টোকারেন্সির (বিটকয়েনের পর সর্বাধিক জনপ্রিয়) তথ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি এটি নন-ফাঞ্জিবল টোকেন বা এনএফটি তৈরি ও বিনিময়ের সুযোগ দেয়।

বস্তুত, যেকোনো কিছুকেই এনএফটিতে রূপান্তর করা যায়। একমাত্র শর্ত, এই 'কিছু'টাকে ডিজিটাল হতে হবে বা তার একটি ডিজিটাল রূপ থাকতে হবে। বাড়িকে সরাসরি এনএফটি বানানো যাবে না, কিন্তু বাড়ির দলিলের সফট কপিকে এনএফটির সঙ্গে যুক্ত করা যায় এবং নেপথ্যে এর ব্যবস্থাপনা করবে ব্লকচেইন। এমনকি, একটি গানের রেকর্ডিংও এনএফটি হতে পারে। একটি ডিজিটাল ছবিও এনএফটি হতে পারে। মজার বিষয় হলো- বর্তমানে ডিজিটাল ছবির ক্ষেত্রে এনএফটির বাজার খুবই জনপ্রিয়। শিল্পীরা দ্রুত এই প্রযুক্তিতে ঝুঁকে পড়ছেন, কারণ প্রথাগত পন্থায় তৈরি ও বণ্টন করা ডিজিটাল ছবিগুলো খুব সহজেই কপি করে অবৈধভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। এনএফটি যুক্ত ছবির ক্ষেত্রে বিষয়টা প্রায় অসম্ভব।

যখনই আপনি এনএফটি কিনবেন, আপনি একটি প্রত্যয়নপত্র বা সত্যতার সনদ পাচ্ছেন। সবাই ব্লকচেইনে দেখবে আপনি ওই ডিজিটাল পণ্যের প্রকৃত মালিক। অন্য কারও কাছে সে পণ্য থাকলে সেটি নকল বা প্রতিলিপি।

ফ্লোরিডার গালফ কোস্টের ৪ শয়নকক্ষযুক্ত বাড়িটি বিক্রির সময় ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক রিয়েল এস্টেট প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান প্রোপি একটি ডিজিটাল টোকেনের (এনএফটি) সঙ্গে এর মালিকানা স্বত্ব বা দলিল সংযুক্ত করে অনলাইন নিলামের আয়োজন করবে। ৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার থেকে নিলাম শুরু হবে।

গত বছর একইভাবে ইউক্রেনে এনএফটির বিনিময়ে একটি বাড়ি বিক্রি হয়েছে। প্রথমে বাড়িটির জন্য একটি লিমিটেড লায়াবিলিটি কোম্পানি (এলএলসি) তৈরি করা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, একটি এনএফটি তৈরি করা হয়েছিল। এরপর একটি আইনি কাগজপত্র তৈরি করা হয়, যেখানে বলা হয়েছিল, যার কাছে এই এনএফটি থাকবে, তিনিই হবেন এই এলএলসির মালিক। তারপর এনএফটির নিলাম হয় এবং বিজেতার কাছে এই এলএলসির স্বত্ব দিয়ে দেওয়া হয়। পরিশেষে নিলামে জয়ী ব্যক্তি সম্পত্তির মালিক হন।

অর্থাৎ, এনএফটির মধ্যে বাড়ির মালিকানা স্বত্ব জুড়ে দেওয়ার কারণে বাড়ির মালিক খুব সহজেই সেটি বিক্রি করতে পারবেন। যেকোনো ডিজিটাল লেনদেনের মতোই বিষয়টি সহজ হবে। আবাসন ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফার ভ্যাসিলাকিস জানান, এটি হবে বাড়ি এবং বাড়ির সঙ্গে আবাসন প্রতিষ্ঠান বিক্রি করার মতো বিষয়।

তিনি আরও জানান, ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারের ওঠা-নামার কারণে কিছু ঝামেলার সৃষ্টি হতে পারে। ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এনএফটির সঙ্গে যুক্ত বাড়ির মূল্যে আদৌ কোনো পরিবর্তন আসবে কি না, বা আসলেও সেটি কী ধরনের, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়, যোগ করেন ক্রিস্টোফার।

Comments

The Daily Star  | English

Heat stress jeopardises dairy industry

There are around 2.5 crore cows and 13 lakh to 14 lakh farmers in the country. Of the farmers, 3.5 lakh own large farms, according to the Dairy Farm Owners Association in Bangladesh.

1h ago