পানির দাম: ‘সরকার মনে হয় নাগরিকদের সহ্যসীমা পরীক্ষা করছে’

ঢাকা ওয়াসাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাপ দিয়েছে সরকার। এই চাপ সামলাতে পানির দাম বাড়াতে যাচ্ছে ওয়াসা।

পানির দাম বাড়ানো নিয়ে গতকাল সোমবার ঢাকা ওয়াসার বিশেষ বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা আজ মঙ্গলবার টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন 'গতকাল বোর্ড সভায় পানির দাম বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু বাড়ানো হবে কি না বা কত শতাংশ বাড়ানো হবে সে বিষযে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।'

তিনি বলেন, 'ওয়াসাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাপ দিচ্ছে সরকার। বর্তমানে আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। কিন্তু আমাদের উৎপাদন মূল্য প্রায় ২৫ টাকা। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের ওপর একটা চাপ আছে যে, আমাদের নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে। পানি বিক্রির মূল্য দিয়ে চলতে হবে।'

তিনি বলেন, 'বেশিরভাগ বোর্ড সদস্যই জানিয়েছে পানির দাম এখন বাড়ানো ঠিক হবে না। তাছাড়া বোর্ডের হাতে দাম বাড়ানোর ক্ষমতা নেই। দাম বাড়াবে সরকার। তারা কত শতাংশ বাড়াবে সেটি তাদের বিষয়। এ বছরের জন্য কত শতাংশ বাড়ানো হবে সেটি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কত শতাংশ বাড়ানো হবে সে বিষয়ে একটা প্রস্তাব এসেছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য কোনো ফিগার বলতে চাচ্ছি না।'

তিনি বলেন, 'আমাদের একটা লক্ষ্য আছে উৎপাদন মূল্যে যাওয়া। কিন্তু সেটি কত বছরে যাবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে।'

এ বিষয়ে ডেইলি স্টার কথা বলেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ও রাজধানীর জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমানের সঙ্গে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, 'প্রত্যেক নাগরিকের আয় বাড়াতে হবে। আয় না বাড়া পর্যন্ত পানির দাম বাড়ানো স্থগিত রাখতে হবে।'

তিনি বলেন, 'সরকার জুলুমবাজি শুরু করেছে। সবকিছুর দাম বাড়াচ্ছে। সরকারের জুলুমবাজির বিরুদ্ধে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে দাম কমাও, জীবন বাঁচাও দিবস পালন করা হবে।'

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার মনে হয় সবকিছুর দাম বাড়ানোর একটা মিশন গ্রহণ করেছে। সরকার মনে হয় নাগরিকদের সহ্য সীমা পরীক্ষা করছে।'

তিনি বলেন, 'দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ব্যয়। মানে বেশি ব্যয় হচ্ছে, অপচয় হচ্ছে, দুর্নীতি হচ্ছে। ওয়াসার পানির মান নিয়ে প্রশ্ন আছে, তাদের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন আছে। ওয়াসার এমডির বিভিন্ন সিদ্ধান্ত এবং তার যে প্রকল্প বাছাইয়ের ধরন সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন আছে। ওই সমস্ত জায়গায় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ হলো দুর্নীতি ও অপচয়। প্রত্যেক ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটছে।'

তিনি বলেন, 'সরকার বর্তমানে জনগণের বিরুদ্ধে এক ধরনের যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। মানুষের সাধ্য থাকুক আর না থাকুক সরকার নিজেদের মতো জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছে।'

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওয়াসার পানির দাম বাড়ানো কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। করোনায় সাধারণ মানুষের আয় কমেছে। অন্যদিকে সবকিছুর দাম বাড়ানো হচ্ছে। এই মুহূর্তে ওয়াসার পানির দাম বাড়ানো হলে মানুষের জন্য তা অসহনীয় হয়ে পড়বে।'

তিনি বলেন, 'ওয়াসার দুর্নীতির অভিযোগ ব্যাপক। তারা দুর্নীতি করে খরচ বাড়াবে আর সেটির বোঝা চাপিয়ে দিবে জনগণের ওপর, সেটি হতে পারে না।'

রাজধানীর জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান যিনি ২০১৯ সালে ওয়াসার এমডিকে এক অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ওয়াসার পানি দিয়ে শরবত খাওয়ার চ্যালেঞ্জ জানিয়ে। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যখন ওয়াসার পানি মানুষ পান করেত পারে না তখন তারা কীভাবে দাম বাড়ানোর ধৃষ্টতা দেখায় তা আমার মাথায় আসে না। আমি এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এই দাম বাড়ানোর উদ্যোগ প্রতিহত করার চেষ্টা করবো।'

Comments

The Daily Star  | English

Pakistan PM Shehbaz Sharif starts emergency security meeting

26 killed in Pakistan, 8 killed in Indian Kashmir in shelling from both sides

8h ago