করোনা ও জাপান সরকারের দায়বদ্ধতার একটি দৃষ্টান্ত

উপহার হিসেবে জাপান সরকারের পাঠানো খাদ্যসামগ্রী। ছবি: সংগৃহীত

করোনায় আক্রান্ত হওয়া তো এখন প্রায় স্বাভাবিক একটি বিষয়। তা নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। তবুও করোনা নিয়েই দু-একটি কথা বলা দরকার বলে মনে করছি। নাগরিকের প্রতি সরকারের দায়িত্ব বা নাগরিক অধিকার নিয়ে জাপানে অনেক সত্য গল্প আছে। ধনী-গরীব নির্বিশেষে অন্য যে কোনো দেশের ক্ষেত্রে যা প্রায় অবিশ্বাস্য।

ঠাণ্ডা-জ্বর নিয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি টোকিওর  একটি হাসপাতালে গেলাম। কর্তৃপক্ষ করোনা টেস্ট করার অনুরোধ জানালেন। সম্মতি দিলাম। আরটি-পিসিআর টেস্ট করা হলো।  পরের দিন সকালে ফোনে  জানানো হলো যে, আমি করোনা পজিটিভ। আগামী  ১০ দিন বাসা থেকে বের না হওয়ার অনুরোধ জানানো হলো। স্বাস্থ্য বিভাগের পরবর্তী নির্দেশনার জন্যও অপেক্ষা করতে বলা হলো। ১০ মিনিট পর মোবাইলে বিভিন্ন নির্দেশনা সম্বলিত একটি এসএমএস আসলো।

দিন গড়িয়ে পড়ন্ত বিকেলে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ফোন আসে। বিলম্বের কারণ উল্লেখ করে টেলিফোন করা ব্যক্তি প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নেন জাপানি রীতি অনুযায়ী । ফোনে প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে অক্সিমিটার এবং থার্মোমিটার আছে কি না জানতে চাইলেন। বললাম, নেই। তখন অতি বিনয়ের সঙ্গে তিনি জানতে চাইলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এগুলো পাঠালে আমার আপত্তি আছে কি না।

আপত্তি নেই জানালে আরেকটু অপেক্ষা করার অনুরোধ জানালেন তিনি। কেন অক্সিমিটার এবং থার্মোমিটার তাৎক্ষণিকভাবে পাঠানো যাচ্ছে না, তার কারণও ব্যাখ্যা করলেন। অনুরোধ করলেন, অতিরিক্ত চাপ ও কর্মী স্বল্পতার জন্য এগুলো পাঠাতে দেরি হওয়ার জন্য যেন কিছু মনে না করি।

একদিন পর বিকেলে পার্সেলটি আসে। করোনার কারনে সাইন না নিয়ে দরজার সামনে পার্সেল রেখে কলিংবেল চেপে ডেলিভারিম্যান চলে যান । দরজা খুলতেই বিস্ময়। পাঠানোর কথা ছিল অক্সিমিটার ও থার্মোমিটার। কিন্তু দরজার সামনে দেখি ঢাউস আকৃতির আরও ৩টি বাক্স! ভুল দেখছি না তো। ডেলিভারিম্যান ভুল করে অন্য কারো বাক্স রেখে গেল না তো? ফোন করলাম স্বাস্থ্য বিভাগে। তারা আবারও বিনয়ের সঙ্গে জানালো, টোকিও মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্ট থেকে উপহার হিসেবে আমার জন্য এগুলো পাঠানো হয়েছে। আমি যেন কিছু মনে না করি। তারা আরও জানালো, কেবল আমার জন্যই না, করোনা আক্রান্ত সবার জন্য এমন উপহারের প্যাকেট পাঠানো হচ্ছে।

দেখা গেল, ১০ দিনের খাদ্যসামগ্রী ও কয়েক রকমের পানীয় দিয়ে প্যাকেটগুলো পরিপূর্ণ। খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে আছে নুডুলস, স্প্যাগেটি, স্যুপ, বিস্কুক, ভাতসহ অনেক কিছু। পানীয়ের মধ্যে পাওয়া গেল বোতলজাত পানি, জুস, স্পোর্টস ড্রিঙ্কস, এনার্জি ড্রিঙ্কস, কফি, গ্রিন টি। ১ জনের পক্ষে ১০ দিনে এত খাবার শেষ করা সম্ভব না। এ ছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর রুচির ভিন্নতা সংক্রান্ত নির্দেশনাও দেওয়া ছিল ওই প্যাকেটের সঙ্গে।

এরপর স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে কী করতে হবে তার নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে।

আমি একজন বাংলাদেশি। জাপানে বিদেশি। একজন জাপানি নাগরিক যেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন, আমিও এখানে ঠিক একই রকম সুবিধা পাই, পাচ্ছি। এর নামই নাগরিক অধিকার।  এ দেশের সরকার জাপানে বসবাসরত সব মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। কেবল কাগজে-কলমে বা মুখের কথায় নয়, বাস্তবেও।

Comments

The Daily Star  | English

July uprising: The wounds that are yet to heal, one year on

Fifteen-year-old Shahin's life was forever changed -- not by illness or accident, but by a bullet that tore through his leg during a rally on August 5, 2024.

15h ago