গত ১২ বছরে দেশের মানুষকে গরিব বানিয়েছে আ. লীগ: রিজভী

আওয়ামী লীগ সরকার গত ১২ বছরে দেশের মানুষকে গরিব বানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অপঘাতে মৃত্যুর সংখ্যা।
আজ রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, গত পরশু বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, 'দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের কিছুই করার নেই'। বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে বোঝা যায়-দেশ চালাচ্ছে না আওয়ামী লীগ, আপনাদের কিছুই করার নেই তাহলে দেশ চালায় কে? দেশ চালাচ্ছে কোন অদৃশ্য শক্তি? যদি কিছুই করার না থাকে আবার জোর করে ক্ষমতাও আঁকড়ে আছেন। এত লোভ-লালসা কেন! কোনো ভদ্র সরকার নিজেরা ব্যর্থ হলে কিছু করার না থাকে তারা পদত্যাগ করে। এটাই গণতান্ত্রিক বিশ্বের দৃষ্টান্ত।
রিজভী বলেন, মাঝে মাঝে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব অদৃশ্য শক্তিধরদের বক্তব্য পাওয়া যায়। বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্য দুর্নীতির পক্ষে জোরালো সাফাই ছাড়া কিছু নয়। কর্মহীনতা, অর্ধাহার, অনাহারক্লিষ্ট দেশবাসীর প্রতি এটি বাণিজ্যমন্ত্রীর নিষ্ঠুর রসিকতা।
প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি ৫ বছরের ক্ষমতাকালে দেশকে ৫০ বছর পিছিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ কোন দিক দিয়ে এগিয়েছে সেটির কিছুই বলেননি তিনি। আওয়ামী সরকার দেশকে যে পিছনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে, সে বিষয়ে উনার কিছু বলা দরকার ছিল।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংক লুট, দুর্নীতির মাধ্যমে দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচারের পৃষ্ঠপোষকদের মুখে এমন কথাই মানায়। তিনি বিএনপি আমলের দলীয়করণের কথা বলেছেন। অথচ বর্তমানে দলীয়করণের মাধ্যমে প্রশাসনকে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন, বিচার বিভাগে দলীয় লোক বসিয়ে বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে রায় দিলে সেই বিচারককেও দেশান্তরিত হতে হয়। আওয়ামী শাসনে 'ফরমায়েসি রায়' এখন বিচার বিভাগের রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এই শতকে সভ্যতার সবচেয়ে বড় সংকট সৃষ্টি করেছে বর্তমান আওয়ামী সরকার। এরা ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য আদিম হিংস্রতাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রসঙ্গে টেনে বিএনপির এই নেতা বলেন, আইসিটি উপদেষ্টা বিএনপি আমলের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা বলেছেন। অধিকাংশ গণমাধ্যমে এই তুলনা আছে, বিএনপি আমলে মোটা চালের দাম ছিল ১৬ থেকে ১৭ টাকা, যা বর্তমানে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। চিকন চালের দাম ছিল ২২ থেকে ২৪ টাকা, যা বর্তমানে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম ছিল লিটার প্রতি ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা, বর্তমানে দাম হলো ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা। গরুর গোস্তোর দাম ছিল কেজি প্রতি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, যা বর্তমানে ৬৫০ টাকা। মসুর ডালের দাম ছিল কেজি প্রতি ৪৫ টাকা, যা বর্তমানে ১৩০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল কেজি প্রতি ৫৫ টাকা, এখন ১৭৫ টাকা। গুঁড়া দুধ ছিল কেজি প্রতি ২৮৫ থেকে ৩৪৫ টাকা, যা বর্তমানে ৫৯০ থেকে ৬৫০ টাকা। পেঁয়াজের দাম ছিল কেজি প্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা, যা বর্তমানে ৫৫ টাকা—কয়েকদিন আগে ছিল ১৩০ টাকা। আলু কেজি প্রতি ছিল ৬ টাকা, এখন ২৫ টাকা। এটা একটা সংক্ষিপ্ত চিত্র ২ আমলের, ২০০১ থেকে ২০০৬ আর বর্তমান আওয়ামী লীগের আমলের। কয়েকশ গুণ দাম বেড়েছে। শুধুমাত্র নিজেদের লোক দিয়ে বাজার সিন্ডিকেট করে দাম বৃদ্ধি করা হয়। এখানে সরকারে কোনো উদ্যোগ নেই। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেই বসলেন সরকারের কিছু করার নেই। তাহলে এই ব্যর্থ সরকার আছে কেন!
দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, আইনের অপশাসন, গুম-খুন-বিচার বহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী সরকার বাংলাদেশে ম্যান মেইড ডিজাস্টার সৃষ্টি করেছে। আসলে আওয়ামী নেতাদের বক্তব্য আদতে লুট, দাঙ্গা, হত্যা, ধ্বংস আর রক্তাক্ত উন্মাদনার সমার্থক বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।
এ সময় দলের এই নেতা মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন করবে বিএনপি। একই সময় কালো ব্যাজ পরে বলাকা সিনেমা হলের সামনে দলীয় নেতা-কর্মীদের জমায়েত এবং প্রভাতফেরী নিয়ে আজিমপুর কবরস্থানে ভাষা শহীদদের কবর জিয়ারত শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উদ্দেশে যাত্রা এবং শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হবে।
এ ছাড়া, সারা দেশে ইউনিট কার্যালয়গুলোতে সকাল ৬টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন এবং স্থানীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। দেশব্যাপী দলের বিভিন্ন ইউনিট স্থানীয় সুবিধা অনুযায়ী ভাষা শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভার আয়োজন করবে।
Comments