সিডন্সের ব্যাটিং ক্লাসে নাসুম-ইবাদতও

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

৬ উইকেট নেই ৪৫ রানে। আফিফ হোসেন আর মেহেদী হাসান মিরাজের কাঁধেই তখন সকল দায়িত্বের ভার। ভার তো বটেই! পাহাড়সম হয়ে ওঠা ২১৬ রান তাড়ায় আর কারও ওপর নির্ভর করার সুযোগ যে ছিল না তাদের। বিপর্যস্ত সেই পরিস্থিতিতে একে অপরকে আত্মবিশ্বাস যুগিয়ে, একে অপরের পরিপূরক হয়ে এগিয়ে যেতে হয় তাদের। সেই কঠিন পথচলার পরতে পরতে লুকিয়ে ছিল অপার বিস্ময়! সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যা প্রকাশিত হয়ে মোহাবিষ্ট করে ক্রিকেটপ্রেমীদের। আফগানিস্তানের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে বাংলাদেশ রচনা করে অবিশ্বাস্য এক জয়ের গল্প।

ভুল করার কোনো উপায় ছিল না দুই তরুণের। তাদের পরে ছিলেন কেবল লেজের ব্যাটাররা। তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম আর মোস্তাফিজুর রহমানের ওপর আস্থা রাখার সুযোগ তো একেবারে সীমিত। তাই লক্ষ্যটা ক্রমে ক্রমে কাছে আসতে থাকলেও আফিফ আর মিরাজই যেন টিকে থেকে ম্যাচটা শেষ করে দিতে পারেন, সেই চাওয়া ছিল দেশের ভক্ত-সমর্থকদের। পূরণ হয় সেই প্রত্যাশা। চার মেরে জয়ের বন্দরে বাংলাদেশের তরী ভিড়িয়ে সন্ন্যাসীর মতো নির্লিপ্ত থাকেন। উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে মিরাজ মাতেন উল্লাসে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তার বুনো উদযাপনের ঢেউয়ের ধাক্কা গিয়ে লাগে যেন গোটা বাংলাদেশে।

প্রথম ওয়ানডেতে সমীকরণ যখন ধীরে ধীরে বাংলাদেশের নাগালের মাঝে চলে আসছিল, তখন স্বস্তির সঙ্গে অন্য একটা অস্বস্তির কাঁটাও খচখচ করে বিঁধতে শুরু করেছিল। আফিফ বা মিরাজ যেভাবে পরস্পরকে সমর্থন দিয়ে অনায়াসে খেলে যাচ্ছিলেন, তাদের কেউ একজন বিদায় নিলে সেই নির্ভার ভাবটা উধাও হয়ে যাবে না তো? যে-ই টিকে থাকবেন তাকে ঘিরে ফেলবে না তো স্নায়ুচাপ? দায়িত্ব একার হয়ে যাওয়ায় নড়ে যাবে না তো মনঃসংযোগ?

সেসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মুখে পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে। তবে ভবিষ্যতে এমন কোনো পরিস্থিতি আবার পড়াও তো অসম্ভব কিছু নয়। তেমনটা হলে লেজের ব্যাটারদেরও তাদের অল্পসল্প ব্যাট চালানোর কাজটা করে পাশে থাকতে হবে বিশেষজ্ঞ ব্যাটারের। সেই ভাবনা থেকেই হয়তো বৃহস্পতিবারের ঐচ্ছিক অনুশীলনে প্রথম ম্যাচে না খেলা নাসুম আহমেদ আর ইবাদত হোসেনকে নিয়ে আলাদা করে কাজ করলেন জেমি সিডন্স। পরম নিষ্ঠার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান এই কোচ তাদেরকে দিলেন দীক্ষা।

ছবি: বিসিবি

ব্যাটিং পরামর্শক আবার টাইগার শিবিরে ফেরা সিডন্স প্রথম ওয়ানডের আগে মনোযোগী দৃষ্টিতে দেখছিলেন তার পুরনো শিষ্যদের। সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল- যাদের ব্যাটিংয়ের উন্নতির পেছনে সিডন্সের অবদান অনস্বীকার্য, তারা সবাই একটু একটু করে আলাপ করছিলেন গুরুর সঙ্গে। সিডন্সও তাদেরকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন টুকিটাকি নানা বিষয়। এদিন সাকিব আসেননি অনুশীলনে। তবে বিশ্রাম না নিয়ে মুশফিকের সঙ্গে তামিম স্টেডিয়ামে পৌঁছান সময়মতো। তাদের সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি তরুণ মাহমুদুল হাসান জয় ও ইয়াসির আলী রাব্বিকে অনেক কিছু বোঝালেন সিডন্স।

তবে চমকপ্রদ ব্যাপারটি ছিল, সিডন্সের ক্লাসে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আর পেসার ইবাদতের মনোযোগী ছাত্র হয়ে ওঠা। দুই দিকের দুই নেটে আলাদাভাবে তাদেরকে সময় দেন সিডন্স। মূল পরিচয় বোলার হলেও নাসুমের ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে হাফসেঞ্চুরি আছে ২৫ ম্যাচে তিনটি। তার স্ট্রাইড, স্টান্স নিয়ে কথা বলতে দেখা যায় সিডন্সকে। নিজে শ্যাডো করে তিনি দেখিয়ে দিচ্ছিলেন নাসুমের ব্যাটিংয়ের ভুল-তরুটি। নাসুম শ্যাডো করে সঠিকটা রপ্ত করার চেষ্টার জানান দিয়ে চলে যান নেটে।

অনুশীলনের শেষদিকে ইবাদত হয়ে ওঠেন সিডন্সের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু। আর্ম থ্রোয়ার দিয়ে নিজেই বল করছিলেন সিডন্স। ইবাদতকে বলছিলেন সেগুলো ডিফেন্স করতে। তবে ঠিকঠাক হচ্ছিল না। অনেক বেশি নড়াচড়া করে বারবার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছিলেন ইবাদত। সিডন্স তখন একটু কড়া শিক্ষকের ভূমিকা নেন। কণ্ঠ ভারী করে বলে যান, কর্তৃত্বের সঙ্গে দাঁড়াতে হবে বোলারের বিপরীতে। শট খেলা বা ডিফেন্স করার আগে ভয়ে কেঁপে কেঁপে ভারসাম্য খুইয়ে হওয়া যাবে না সহজ শিকার। বাধ্য ছাত্রের মতো ইবাদত তখন আত্মস্থ করতে থাকেন সকল পড়াশোনা।

অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর বাংলাদেশের টেস্ট স্কোয়াডে থিতু হওয়ার পথে আছেন ইবাদত। সবশেষ নিউজিল্যান্ড সফরে বে ওভালে ঐতিহাসিক জয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন তিনি। উন্নতির ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফের ভেলায় চড়ে তিনি এবারই প্রথম ডাক পেয়েছেন ওয়ানডে দলে। ব্যাটিংয়ে অবশ্য তিনি একদমই আনকোরা। টেস্টে তার গড় একেরও কম। তবে দলের প্রয়োজনে কঠিন কোনো পরিস্থিতিতে ব্যাট হাতে একটু-আধটু অবদান রাখতে হতে পারে। সেই বিশেষ ক্ষেত্রের ভাবনা থেকেই হয়তো ব্যাট চালানোর প্রশিক্ষণেও ইবাদত দেখান নিবেদন।

Comments

The Daily Star  | English
A dangerous suggestion

A dangerous suggestion

No provision in the constitution should be outside the purview of the judiciary

5h ago