চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে চা শ্রমিককে ‘কুলি’ বলায় ক্ষোভ

ছবি: সংগৃহীত

সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে চা শ্রমিককে 'কুলি' বলায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন চা শ্রমিকদের সন্তানেরা।

আজ শুক্রবার মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রাজস্ব প্রশাসনের ৪টি গ্রেডে মোট ২২ জনকে নিয়োগের জন্য এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সাড়ে ৭ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী এতে অংশ নেন। 

ভূমি মন্ত্রণালয়ের অদিশাখা-১ (মাঠ প্রশাসন) নিয়োগের জন্য এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। 

পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক চা শ্রমিকের সন্তান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরীক্ষা দিতে গিয়ে দেখি প্রশ্নপত্রে ইংরেজিতে অনুবাদ করতে বলা হয়েছে, 'শ্রীমঙ্গলকে চায়ের রাজধানী বলা হয়। শ্রীমঙ্গলে ৯২টি চা বাগান রয়েছে। শ্রীমঙ্গলের চা খুব উপাদেয়। কুলিরা হাত দিয়ে চা পাতা সংগ্রহ করে। প্রক্রিয়াজাত চা পাতা থেকে চা উৎপন্ন হয়।'

প্রশ্নপত্রে চা শ্রমিকদের কুলি বলায় মন খারাপ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সরকার নিজে এবার আমাদের কুলি বললো।'

ছবি: সংগৃহীত

এ ছাড়া, প্রশ্নপত্রে উল্লেখ করা হয়, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় মোট চা বাগানের সংখ্যা ৯২টি। অথচ স্ট্যাটিসটিক্যাল হ্যান্ডবুক অন বাংলাদেশ টি ইন্ড্রাস্ট্রির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মৌলভীবাজার জেলায় মোট ৯১টি ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৪২টি চা বাগান আছে।

সার্টিফিকেট সহকারী পদের একজন পরীক্ষার্থী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চা বাগানে কাজের অভাব। অনেক কষ্ট করে দৈনিক ১২০ টাকা মজুরির চা শ্রমিক বাবা-মা পড়ালেখা করিয়েছেন। বড় কষ্টে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম এই অভাবের গেড়াকলে। ভালো মন নিয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশ্নপত্র দেখে মনটাই খারাপ হয়ে গেল।'

চা শ্রমিকের সন্তান আরেক পরীক্ষার্থী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরীক্ষার প্রশ্নে এমন শব্দের ব্যবহার দেখে চোখে জল চলে আসলো। ৪৫ মিনিট চুপ করে বসেছিলাম। কিন্তু মা-বাবার অভাবের চেহারাটা বার বার চোখে ভেসে আসে। তাই কষ্ট হলেও পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করলাম মাত্র। আমাদের আর কত অবহেলা সইতে হবে জানি না।'

ক্রেডিট চেকিং কাম সায়রাত সহকারী পদের আরেক পরীক্ষার্থী প্রশ্নপত্রে এ ধরনের 'অপমানজনক ও বিদ্বেষপূর্ণ' শব্দ ব্যবহারের নিন্দা জানিয়ে বলেন, 'আমি চাই প্রশ্ন প্রণয়নকারী ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার বিচার হোক।'

তার ভাষ্য, 'আজ ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে চা বাগান এই স্বাধীন বাংলার শিল্পের চাকাকে সচল রেখেছে। আর এই শিল্পে কাজ করছে লক্ষাধিক শ্রমিক। শ্রমিকরা শ্রমিক হয়, সে যেই শিল্পেরই হোক। কিন্তু তাদের কুলি বলার অধিকার কারও নেই।'    

মৌলভীবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মেহেদী হাসানকে প্রশ্নপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি এখনো প্রশ্নপত্র দেখিনি। আমরা শুধু পরীক্ষার্থীদের অ্যাকোমোডেশনের ব্যবস্থা করেছি। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধিনে নির্বাচন বোর্ড এই পরীক্ষা নিয়েছে।' 

তবে, প্রশ্নপত্রে চা শ্রমিকদের কুলি বলায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়া চা শ্রমিকদের সন্তানদের সংগঠন 'বিশ্ববিদ্যালয় চা ছাত্র সংসদ'-এর সভাপতি মনোজ কুমার যাদব ও সাধারণ সম্পাদক রাজু নুনিয়া। 

এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছেন, 'চা-শ্রমিক জনগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য এটি চরম অবমাননাকর। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে দাসত্বের বেড়াজালে বন্দি চা-শ্রমিকদের অবজ্ঞার সুরে এই নামে সম্বোধন করা হতো। বর্তমানে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে এমন চর্চা নিঃসন্দেহে হতাশাজনক।'

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'বিশ্ববিদ্যালয় চা ছাত্র সংসদ কর্তৃপক্ষের এমন খামখেয়ালিপনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।' সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Leather legacy fades

As the sun dipped below the horizon on Eid-ul-Azha, the narrow rural roads of Kalidasgati stirred with life. Mini-trucks and auto-vans rolled into the village, laden with the pungent, freshly flayed cowhides of the day’s ritual sacrifices.

18h ago