খুঁড়িয়ে চলা ফারজানার চোখে জীবন জয়ের স্বপ্ন

ফারজানা। ছবি: মাসুক হৃদয়

জন্মগতভাবেই ফারজানার একটি পা নেই। দুই হাতের আঙুলগুলোও অপরিপূর্ণ। এক পায়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আধা কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দরিদ্র পরিবারের এই মেয়েটি লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে জীবনযুদ্ধে টিকিয়ে রেখেছে নিজেকে।

মাত্র ৮ বছর বয়সী ফারজানা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের গাজীরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি শিক্ষার্থী। ২ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে ফারজানা তৃতীয়। বাবা গাজীরকান্দি গ্রামের বাছির মিয়া মারা গেছেন ৫ বছর আগে। এরপর থেকে মা মাছ ধরে এবং অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

ফারজানা। ছবি: মাসুক হৃদয়

ফারজানার মা বীনা বেগম জানান, ২০১৪ সালে ফারজানার জন্ম হয়। ছোটবেলা থেকেই সে লেখাপড়ায় আগ্রহী। আগ্রহ দেখেই তাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। তার বড় ভাই রাকিবও একই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। দুজনই একসঙ্গে বিদ্যালয়ে যায়। অনেক কষ্ট করে ফারজানা স্কুলে যায়। যেদিন রাকিব স্কুলে যায় না, সেদিন সে-ও স্কুলে যায় না। স্কুলে যেতে না পারলে খুব মন খারাপ হয় তার। প্রথম শ্রেণীতে ফারজানা ভালো ফলাফল করেছে।

ফারজানার মা আরও জানান, এক পায়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে স্কুলে যাওয়ায় তার শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। একটি কৃত্রিম পা হলে সে অন্য ৮-১০ জন সাধারণ শিক্ষার্থীর মতো স্বাভাবিক স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারতো। অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনমতে সংসার চলে। কৃত্রিম পা সংযোজনের সামর্থ্য নেই তাদের। এ অবস্থায় কেউ সহায়তা না করলে তাদের পক্ষে এই ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়।

ফারজানা। ছবি: মাসুক হৃদয়

পা নেই, অথচ নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রবল আগ্রহ ফারজানার। দ্য ডেইলি স্টারকে সে বলে, 'লেখাপড়া শিখে বড় হয়ে চাকরি করেত চাই। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। স্কুলে যাতায়াতের রাস্তাটি ভাঙ্গাচোরা হওয়ায় অনেক কষ্ট হয়।'

গাজীরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক মো. স্বপন মিয়া বলেন, 'আমি প্রথম মেয়েটিকে দেখি সে ভাঙ্গা পায়ে, ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল। লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটার সময় বারবার তার হাত থেকে বইগুলো পড়ে যাচ্ছিল। এই দৃশ্য দেখে আমার চোখে জল চলে আসে। আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা নিজেকে বিকলাঙ্গ সাজিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে। কিন্তু এই মেয়েটি পা না থাকা সত্ত্বেও নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইছে। তার এই আগ্রহ সবাইকে চমকে দিয়েছে।  আমাদের বিশ্বাস মেয়েটি একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াবে।'

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, 'ফারজানা পড়ালেখায় ভালো, তার স্মরণশক্তিও প্রখর। তার এই অদম্য আগ্রহকে এগিয়ে নিতে হলে তার পাশে তথা তার পরিবারটির পাশে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।'

নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. একরামুল সিদ্দিক বলেন, 'ওই স্কুলের শিক্ষক স্বপন মিয়াকে আমি চিনি। আমি তার মাধ্যমে মেয়েটির জন্য কিছু করা যায় কিনা খোঁজ নেব।'

Comments

The Daily Star  | English

Political clashes, mob attacks leave 25 dead in July 2025: MSF

The report, based on news from 18 media outlets and verified by rights activists, also noted an alarming rise in mob attacks, recording 51 incidents last month

1h ago