‘প্রয়োজন হলে তেল নেন, না হলে দাম কমলে নিয়েন’

দোকানটির মূল্য তালিকায় সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৬৫ টাকা লেখা থাকলেও, বিক্রি হচ্ছিল ১৬৮ টাকায়। ছবি: সনদ সাহা/স্টার

নারায়ণগঞ্জ শহরের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার দিগুবাবু বাজারের মুদি দোকান মেসার্স দয়াময় স্টোর। এ বাজারের অনেক দোকানে মূল্য তালিকা না থাকলেও, এ দোকানে দেখা গেল মূল্য তালিকা। তালিকায় সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৬৫ টাকা। কিন্তু দোকানদার বিক্রি করছেন ১৬৮ টাকায়। তালিকা আর বিক্রির দামের গরমিলের বিষয়ে জানতে চাইলে দোকানদার বললেন, 'প্রয়োজন হলে নেন, অন্যথায় দাম কমলে ২ দিন পরে এসে নিয়েন।'

নাম প্রকাশ না করলেও এই দোকানদার বললেন, 'সরকার ২ দিন আগে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। তাই কেনা দামে বিক্রি করছি।'

আজ রোববার দিগুবাবু বাজারে ঘুরে দেখা যায়, বাজারে অর্ধশতাধিক মুদির দোকান থাকলেও মাত্র ৫-৬টি দোকানে পণ্যের মূল্য তালিকা আছে। অনেক দোকানে পণ্যের তালিকা থাকলেও, ছিল না দাম লেখা।

চুরির ভয়ে দোকানদার সয়াবিন তেলের বোতল শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন। ছবি: সনদ সাহা/স্টার

নিত্য পণ্যের খুচরা বিক্রির দোকানে মূল্য তালিকা ক্রেতার চোখের সামনে রাখার নিয়ম। তবে অধিকাংশ দোকানদারই সেই নিয়ম মানছেন না। ইচ্ছেমতো দামে তারা ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রি করছেন। আবার যে দোকানে তালিকা আছে সেখানে উল্লেখ করা দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

শরীফ স্টোরের সামনে লোহার শিকল দিয়ে সয়াবিন তেলের বোতল বেঁধে রাখা হয়েছে। তবে এ দোকানে কোনো মূল্য তালিকা নেই। বিক্রেতা বললেন, 'প্রতি লিটার ১৭৮ টাকা। দাম কমেনি। বোতল যেন চুরি না হয়, সেজন্য শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি।'

খড়িমাটিতে লেখা মেসার্স টুটুল স্টোরের মূল্য তালিকা। ৩৬টি পণ্যের মধ্যে ১৫টির নাম থাকলেও দাম মুছে দেওয়া হয়েছে। তালিকায় আছে প্রতি কেজি চিনি ৭৬ টাকা, আটা ৪০ টাকা, আদা ৭০ টাকা। কিন্তু বিক্রি করা হচ্ছে চিনি ৭৮টাকা, আটা ৪৪ টাকা ও আদা ৮০ টাকা কেজি দরে।

তবে এ দোকানের বিক্রেতা কোন কথা বলতে রাজি হননি।

নামবিহীন এক দোকানের বিক্রেতা মো. সবুজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূল্য তালিকা আছে। কিন্তু প্রতিদিন ঝুলানো হয় না। বাজারে মোবাইল কোর্ট আসলে বের করে সামনে রাখা হয়।'

তিনি বলেন, 'মূল্য তালিকা দিয়ে কী হবে? ক্রেতারা এগুলো দেখে না। দাম লেখা থাকলেও দর-দাম করেই পণ্য কেনে। আমাদেরও দামাদামি করেই বিক্রি করতে হয়। এজন্য মূল্য তালিকা ঝুলানো হয় না।'

এ বাজারে নিত্য পণ্য কিনতে এসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মুদি দোকান থেকে শুরু করে মাছ, মাংস কোনো দোকানেই মূল্য তালিকা নেই। এ তালিকা থাকলে তো বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে না। সেজন্য দোকানদাররা এগুলো ঝুলিয়ে রাখে না। আর এগুলো যাদের দেখাশোনা করা প্রয়োজন প্রশাসন কিংবা সিটি করপোরেশনের, কেউ সেটা করে না। এজন্যই দোকানদাররা এ নিয়ম মানে না। আগে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে হবে। তবেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঠিক থাকবে।'

দিগুবাবু বাজার ঘুরে বাজার কমিটির কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে কমিটির নেতাদের পরিচয় ও ফোন নম্বর চাওয়া হলে, তাদের কাছে নম্বর নেই বলে জানান।

যোগাযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বাজার কর্মকর্তা মো. জহিরুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অনেক দিন আগে আমরা অভিযান করেছি। কিন্তু সম্প্রতি কোনো অভিযান করিনি। আমরা শিগগির এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবো।'

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ জেলার সহকারী পরিচালক মো. সেলিমুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা যারা করছেন তারা অন্যায় করছেন। এ মাসেই আমি মূল্য তালিকার জন্য দিগুবাবু বাজারসহ নিতাইগঞ্জ ও কালিরবাজারে অভিযান চালিয়েছি। বেশ কয়েকটি দোকানকে জরিমানা করা হয়েছিল। তাদের সচেতনও করা হয়েছে। এরপরও যারা এ নিয়ম মানবে না তাদের দ্বিগুণ জরিমানা করা হবে, তাদের দোকান সিলগালা করে দেওয়া হবে।'

'খুব শিগগির আমরা এ বিষয়ে অভিযান শুরু করব, যেন সব দোকানে বাধ্যতামূলক মূল্য তালিকা থাকে এবং কেউ বেশি দামে বিক্রি করতে না পারে,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

14h ago