অনলাইনে পোশাকের বাজারে জায়গা করে নেওয়ার উপায়

ছবি: বাংলাদেশ থ্রিফট

বর্তমানে বিপুল সংখ্যক উদ্যোক্তা অনলাইনে তৈরি পোশাক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাদের মধ্যে বড় একটি অংশ মহামারির কারণে নতুন করে এই ব্যবসায়িক প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছেন।

অনলাইনে ব্যবসা করার একটি বড় সুবিধা হলো এখানে নিজের পণ্যকে আকর্ষণীয় ও ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার হরেক রকম উপায় আছে। নতুন ও পুরনো অনলাইন উদ্যোক্তাদের জন্য এমন কিছু কৌশল নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো।
 
স্পট পারচেস

এই ব্যবসায়িক মডেলটি আমাদের চিরপরিচিত তৈরি পোশাক কেনা-বেচার শোরুমভিত্তিক যে মডেল আছে সেটার মতোই। এখানে উদ্যোক্তা বা বিক্রেতা পণ্য তৈরি করে, আমদানি করে বা অন্য পাইকারি বিক্রেতা থেকে কিনে অনলাইনে সেই পণ্যের লাইভ বা ছবি পোস্ট করে এবং পরবর্তীতে সেটা পূর্বনির্ধারিত কোনো স্থানে ক্রেতার কাছে বিক্রি করে। কিন্তু তৈরি পোশাকের অফলাইন ব্র্যান্ডগুলোর মতোই এই মডেলে ঝুঁকি থাকে চাহিদার অতিরিক্ত মজুদের। যেগুলো পরবর্তীতে স্টক ক্লিয়ারেন্স সেলে কম মূল্যে বিক্রি করা হয় বা ফেলে দেওয়া হয়।

কিন্তু এই ঝুঁকির পরও আয়কা ওয়ে অফিশিয়াল ফ্যাশন হাউজটির উদ্যোক্তা দুই বোন আইনুন আনোয়ার অবনী এবং আনিকা আনোয়ার শ্রাবণীর মতো অনেকেই স্পট পারচেজিংয়ের এই মডেলটি তাদের ব্যবসায় ব্যবহার করেন। 

এ ব্যপারে জানতে চাওয়া হলে আনিকা বলেন, 'অনেক ক্রেতাই তাদের অর্ডার করা পণ্যের জন্য অপেক্ষা করতে পছন্দ করেন না। আর স্পট পারচেজিং উদ্যোক্তার জন্যেও প্রি-অর্ডারের তুলনায় কম সময়সাপেক্ষ এবং বেশি সুবিধাজনক।'

প্রি-অর্ডার

এই ব্যবসায়িক মডেলে বিক্রেতা ক্রেতার নিশ্চিত অর্ডার পাওয়ার পর পণ্য আনে, যার ফলে এতে অর্থনৈতিক বা অতিরিক্ত মজুদের ঝুঁকি নেই বললেই চলে। 

ডিল অফ দ্য ডে নামের অনলাইননির্ভর ব্র্যান্ডটির উদ্যোক্তা রাফিয়া ফেরদৌস মীম এই ব্যপারে বলেন, 'এই মডেলটি আমাকে বুঝতে সাহায্য করেছে যে, আমার ক্রেতারা আসলে কীসে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আমার মতো ক্ষুদ্র ও নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোক্তাদের জন্য সবচেয়ে বড় ভয়ের একটি হলো অতিরিক্ত মজুদ। কারণ আমদানি করা পণ্যগুলো সাধারণত দামি হয়। তাই বিক্রি না হওয়া অতিরিক্ত পণ্যর কারণে আমাদের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। সেদিকে প্রি-অর্ডারভিত্তিক পেইজ হওয়ার সুবিধা হলো আমরা এই ঝুঁকি ছাড়াই অনেক রকমের এবং অনেক পরিমাণের পণ্য আমাদের ক্রেতাদের জন্য পেইজে রাখতে পারি। এটা অবিক্রিত মজুদের বর্জ্য কমিয়ে আমাদের ব্যবসাকে আরও সাসটেইনেবল এবং পরিবেশবান্ধব করে। 

হোলসেল

হোলসেল বা পাইকারি মডেলে বিক্রেতা বিপুল পরিমাণের পণ্য বাজারের তুলনায় সাশ্রয়ী মূল্যে অন্য উদ্যোক্তাদের কাছে বিক্রি করে। এটা দুপক্ষের জন্যই সুবিধাজনক। কেন না এখানে একইসঙ্গে বিক্রেতাও ভালো লাভ করতে পারে আর ক্রেতাও কম মূল্যে পণ্য পায়। অনেক হোলসেল বা পাইকারি বিক্রেতা আবার সরাসরি ভোক্তার কাছেই পণ্য বিক্রি করে। 

সাধারণত হোলসেল বিক্রেতারা অর্ডারের একটা ন্যূনতম পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়, যাতে কম মূল্যে পণ্য ছাড়লেও তাদের কিছুটা লভ্যাংশ রাখতে অসুবিধা না হয়। 

একটি সম্পূর্ণ পাইকারিভিত্তিক তৈরি পোশাকের পেইজ প্লে-ডেট ক্লজেটের উদ্যোক্তা সামিয়া আজমেরি জানান, তিনি এই ব্যবসার মডেলের দিকে ঝুঁকেছেন তার কারণ, কোনো নির্দিষ্ট ডিজাইনের পোশাকের জন্য যে পরিমাণ অর্ডার পেতেন সেটা ফ্যাক্টরিতে ওই পণ্যের উৎপাদনের জন্য যে অর্থ এবং সময় ব্যয় হয় তার সঙ্গে মানানসই ছিল না। অন্যদিকে নতুন উদ্যোক্তারা পাইকারি মূল্যে বেশি পরিমাণে পণ্য সরাসরি ফ্যাক্টরি থেকে অর্ডার করতে পারতেন না। তখন তিনি হোলসেলনির্ভর একটি গ্রুপ খোলেন। ফেসবুকে যেটার মাধ্যমে তিনি নতুন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছে কম মূল্যে পণ্য সরবরাহ করা শুরু করেন এবং তাতে তার বিক্রি এবং লাভ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। 

থ্রিফটিং

উপরে উল্লিখিত মডেলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব মডেল হলো থ্রিফটিং বা ব্যবহৃত পোশাক বিক্রির মডেল। সাম্প্রতিক সময়ে নতুন প্রজন্মের ক্রেতাদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতার কারণে বাজারে সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। থ্রিফটিং এর মূল চ্যালেঞ্জ হলো ব্যবহারযোগ্য পুরোনো পোশাক জোগাড় করে সেগুলোকে নতুন রূপে সাজানো, প্রয়োজনে মেরামত করা এবং তারপর ক্রেতাদের জন্য আকর্ষণীয়ভাবে অনলাইনে উপস্থাপন করা। কিছু থ্রিফটিং ব্র্যান্ড তাদের মজুদের জন্য নির্ভর করে ব্যবহৃত কাপড়ের ডোনেশনের ওপর। আবার অনেকে ব্যবহারকারী বা সরবরাহকারীর কাছ থেকে ব্যবহৃত পোশাক কমমূল্যে কিনে নেয়। 

বাংলাদেশ থ্রিফট উদ্যোগটির দুই উদ্যোক্তা সুনায়রা সুভা পুষ্পিতা এবং শেনিন সারজিন প্রমি জানান, তারা থ্রিফটিংকে ব্যবসায়িক মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন তার কারণ পরিবেশ এবং পোশাক শ্রমিকের জন্য ক্ষতিকারক ফাস্ট-ফ্যাশনের তুলনায় এটি একটি মানবিক মাধ্যম এবং এই মাধ্যমটি ক্রেতাকে ভিন্টেজসহ নানান ফ্যাশন ধারার পোশাক পরার সুযোগ করে দেয়। তাই এই মডেল তাদের নিজেদের মধ্যেও ব্যবসায়িক উদ্যোগ হিসেবে ভালো অনুভূতি জাগায়। 

তবে এসব ব্যবসায়িক মডেল বা কৌশলের মধ্য থেকে একটি বেছে নিয়ে নিজের ব্যবসায় কাজে লাগানো অনলাইন বাজারে জায়গা করে নেওয়ার প্রথম ধাপ। এরপরেই আসছে মার্কেট রিসার্চ, ভালো কাঁচামাল ও কারিগরের খোঁজ, ব্যবসার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ওয়েবসাইটে সক্রিয় উপস্থিতি এবং মার্কেটিং। তবে সাফল্যের সিঁড়ির প্রথম ধাপটিই হলো একটি কার্যকর বিজনেস প্ল্যান থাকা। 

অনুবাদ করেছেন আদ্রিতা কবির
 

Comments

The Daily Star  | English

Wasa water stinks

However, the state-run agency claims the water is of standard quality when it leaves their facilities

12h ago