ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের উপসর্গ ও করণীয়

বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশন একটি ভয়াবহ পর্যায়ের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দেশে এ বিষয়টিকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমলে নেওয়া হয় না। মানুষ এই সমস্যা একেবারেই বুঝতে চান না এবং ভুক্তভোগীর প্রতি কোনো ধরনের সহানুভূতিও প্রদর্শন করেন না। বরং বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে তাদের যাপিত জীবনকে কঠিন করে তোলেন।

এ ছাড়াও, আমাদের মাঝেই এমন কিছু মানুষ আছেন, যারা এই সমস্যাগুলোকে 'অলসতা', 'পাগলামি', এমনকি 'নাস্তিক হয়ে যাওয়ার ফল' হিসেবেও আখ্যায়িত করতে ছাড়েন না। অনেকে বিদ্রূপ করে কবি-সাহিত্যিকদের ভাষায় 'দুঃখ বিলাস' বলেও হালকা ভাবে দেখার চেষ্টা করেন।

বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিবেচনায় বলা যায়, আমরা হাসি আনন্দ ও রঙবেরঙের উৎসব উদযাপনে অভ্যস্ত একটি জাতি। স্বভাবতই, বিষণ্ণতা বা অন্য যেকোনো ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতিকে আমরা সহজে আমলে নিতে চাই না। তবে এ ধরনের সমস্যায় যারা ভুগছেন, তাদের জন্য সব কিছুই আঁধারে ঢাকা নয়। আজকাল এ বিষয় নিয়ে মানুষ পড়াশোনা করছে এবং অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতা বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষ বেশি সচেতন।

দ্য ডেইলি স্টার মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান সাইকোলজিক্যাল হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস ক্লিনিকের সঙ্গে (পিএইচডব্লিউসি) একটি যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে। সেই উদ্যোগ থেকেই পাঠকদের জন্য বিষণ্ণতার প্রাথমিক লক্ষণগুলো তুলে ধরা হলো। এ ছাড়াও, কারো প্রিয়জন ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকলে কি কি করণীয়, সে সম্পর্কেও এ লেখায় বিস্তারিত বলা হবে।

উপসর্গ

পিএইচডব্লিউসি ও স্ট্যাটিস্টিক্যাল ম্যানুয়াল অব মেন্টাল সিন্ড্রোম (এসএমএমএস) ক্লিনিকাল ডিপ্রেশনের যে উপসর্গ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলছে সেগুলো হলো:

১. কেউ যদি কমপক্ষে ২ সপ্তাহ ধারাবাহিকভাবে বিষণ্ণ থাকেন, তাহলে তাকে ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের রোগী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

২. তারা আগে যেসব কাজে আনন্দ খুঁজে পেতেন, সেগুলোতে আগ্রহ হারাবেন। এমনকি বন্ধুদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংযুক্ত থাকতেও তারা আগ্রহ হারান।

৩. ডিপ্রেশন সংক্রান্ত অসুস্থতায় ভুগতে থাকা মানুষের ঘুমের সমস্যা হয় এবং তারা চরম ক্লান্তিতে ভোগেন।

৪. তারা খুব সহজেই উত্তেজিত হয়ে যাবেন এবং তাদের মনের ভাব ক্ষণে ক্ষণে বদলাতে থাকবে।

৫. বিশেষ কোনো অনুপ্রেরণা ছাড়াই তাদের ক্ষুধা বাড়বে অথবা কমে যাবে। সুনির্দিষ্ট ডায়েট অনুসরণের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ না নিলেও বা এ ধরনের কোনো ইচ্ছা না থাকলেও তাদের ওজন কমে অথবা বেড়ে যায়।

করণীয়

যদি কারও মধ্যে ওপরের সবগুলো লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে যা করতে হবে, তা হলো:

দুর্দশাগ্রস্ত মানুষটির অনুভূতি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। যদি তার দৈনন্দিন জীবন কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে পেশাদারদের সহায়তা নিতে হবে। 'এসব ঝেড়ে ফেলো', 'এটা নিয়ে এত চিন্তা করার কিছু নেই, শিগগির তোমার ভালো লাগবে', 'অলসতা বাদ দাও'—এর মতো অপমানজনক কথা বলে তাকে মানসিক আঘাত দেওয়া একেবারেই উচিৎ হবে না। বরং অবসাদগ্রস্ত মানুষটি যেন সিগারেট ও মদ পান করে বিষণ্ণতা দূর করার মতো স্বাস্থ্যহানিকর প্রচেষ্টা না করেন সে বিষয়ে অনুপ্রেরণা দিতে হবে।

যারা তাদের প্রতি সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতা দেখাতে পারবেন, তেমন প্রিয়জনদের সঙ্গে ভুক্তভোগীদের যোগাযোগ করতে অনুপ্রাণিত করুন। সেই প্রিয়জনটি আপনিও হতে পারেন বা অন্য কেউও হতে পারে। বিষণ্ণ ব্যক্তিদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা গ্রুপগুলোর সাহায্য নিতে উদ্বুদ্ধ করুন। ফেসবুকের 'রিভাইভাল' গ্রুপের মতো গ্রুপগুলোতে তারা একই ধরণের উপসর্গে ভুগতে থাকা মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা তাদেরকে সহায়তা করতে পারবেন এমন বিশেষজ্ঞদের খোঁজ পেতে পারেন।

এমন প্রতিটি ব্যক্তি ও ঘটনার ক্ষেত্রে যে বিষয় নিশ্চিত করতে হবে তা হলো, আমাদেরকে বিষণ্ণতায় ভুগতে থাকা মানুষের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়াতে হবে এবং তাদের প্রকৃত বন্ধু হতে হবে। আমাদেরকে সব সময় মনে রাখতে হবে, এই মানুষটিও আমাদের মতোই স্বাভাবিক জীবনযাপনের চেষ্টা করছেন। শুধুমাত্র আমাদের খানিকটা সহায়তা পেলেই তারা খুব সহজে বিষণ্ণতাকে দূরে ঠেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন। সুতরাং, কেন আমরা তাদেরকে সাহায্য করার সামান্য চেষ্টাটুকুও করবো না? অবশ্যই সেটা করা উচিৎ। অন্তত আমাদের মধ্যে যেটুকু মানবতা রয়েছে, তা আমাদেরকে বাধ্য করে ক্লিনিকাল ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে।

কোনো ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় পিএইচডব্লিউসির সঙ্গে নিচের ঠিকানায় যোগাযোগ করা যাবে:

ফ্ল্যাট ৬/বি হাউস ৪, রোড ২৩/এ, ব্লক বি, বনানী, ঢাকা-১২১৩

মুঠোফোনে পেতে পারেন এই নম্বরে:

০৯৬০৯০১৩০০০

ওয়েবসাইট:

http://www.phwcbd.org

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
NSC shop rent scam in Dhaka stadiums

Shop rent Tk 3 lakh, but govt gets just Tk 22,000

A probe has found massive irregularities in the rental of shops at nine markets of the National Sports Council (NSC), including a case where the government receives as little as Tk 22,000 in monthly rent while as much as Tk 3 lakh is being collected from the tenant. 

19h ago