বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি
গত ৩ বছর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ কবলিত দেশের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছে বাংলাদেশ। বায়ুদূষণের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের রাজধানী শহরের তালিকায় দিল্লির পরেই দ্বিতীয় স্থানে ঢাকা।
বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে সৃষ্ট রোগে মারা যান। ২০২১ সালে বিশ্বে প্রায় ৪০ হাজার শিশুর মৃত্যু সরাসরি বায়ুদূষণের কারণে ঘটেছে বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে দৈনিক অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিশ্বের মোট জিডিপির ৩ থেকে ৪ শতাংশ।
বায়ুদূষণ কী
বায়ুতে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম-২.৫ থাকে। বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে এর মাত্রার ওপর ভিত্তি করে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান অনুযায়ী দৈনন্দিন সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য প্রতি ঘনমিটারে পিএম-২.৫ এর মাত্রা ১০ এর নিচে থাকা প্রয়োজন।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান 'আইকিউএয়ার' এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০২১ সালে বাতাসের প্রতি ঘনমিটারে পিএম ২.৫-এর গড় মাত্রা ৭৬ দশমিক ৯, যা গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে প্রায় ৮ গুণ বেশি।
বায়ুদূষণের কারণে কী রোগ হয়
ক্যান্সার, হৃদরোগ, ত্বকের বিভিন্ন রোগ, হাঁপানি, ফুসফুসের বিভিন্ন রোগসহ অনেক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ বায়ুদূষণ।
সম্প্রতি বায়ুদূষণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এসব রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। বায়ুদূষণের কারণে স্নায়বিক এবং প্রজনন সমস্যা হতে পারে বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে। দীর্ঘমেয়াদে বায়ুদূষণের সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
গর্ভবতী মায়ের দেহে বায়ুদূষণের বিরূপ প্রভাবের কারণে নবজাতকের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। শিশুর ক্ষেত্রে ফুসফুস এবং ত্বকের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় বায়ুদূষণের কারণে। সামগ্রিকভাবে বায়ুদূষণের কারণে সৃষ্ট শারীরিক সমস্যা মানুষের জীবনযাত্রার মান এবং গড় আয়ু কমিয়ে দেয়।
বায়ুদূষণ থেকে মুক্ত থাকার উপায়
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টি সরকারি নীতিনির্ধারণের সঙ্গে জড়িত। কলকারখানা, যানবাহন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কারণেই মূলত বায়ুদূষণ হয়ে থাকে।
জনগণকে বায়ুদূষণের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে মাস্ক ব্যবহার করলে বায়ুদূষণের বিরূপ প্রভাব থেকে কিছুটা মুক্ত থাকা যায়।
ডা. এম আর করিম রেজা, ত্বক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
Comments