গমের চাহিদা বাড়লেও কমছে চাষ, প্রতিদিন প্রচুর আমদানি

লালমনিরহাটের এক গম চাষি। ছবি: স্টার

আগের তুলনায় গমের চাহিদা অনেক বেড়েছে, তবে দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে গম চাষ। দেশে গমের চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে গম আমদানি করতে হচ্ছে। লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন ৬০-৬৫টি ট্রাকে গম আমদানি করা হচ্ছে। প্রতিটি ট্রাকে ২৫-৩০ মেট্রিক টন গম আনা হচ্ছে।

কৃষকরা জানান, তারা গম চাষে আশানুরূপ লাভবান হতে পারছেন না। তাই গম চাষের পরিবর্তে অন্যান্য ফসল চাষ করছেন। কয়েক বছর আগেও প্রত্যেক কৃষক গম চাষ করতেন। বর্তমানে কম সংখ্যক কৃষক গম চাষ করছেন, তারপরও পরিমাণে কম জমিতে।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও রংপুরে এ বছর গম চাষ হয়েছে ১৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৫ হাজার ৬৬১ মেট্রিক টন। গত বছর গম চাষ হয়েছিল ২০ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে। ২০২০ সালে জমির পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর। ১০ বছর আগে গম চাষ হয়েছিল ৬৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। সারাদেশে গমের চাষ হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন। দেশে গমের চাহিদা রয়েছে ৮৫-৮৬ লাখ মেট্রিক টন। প্রতি বছর গম আমদানি করতে হচ্ছে ৭৪-৭৫ লাখ মেট্রিক টন।

লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে গম আমদানি করা হচ্ছে। আমদানিকৃত এসব গম স্থলবন্দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এ স্থলবন্দরে এসে আমদানিকারকদের কাছ থেকে গম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি কেজি গম আমদানিতে ব্যবসায়ীরা ব্যয় করছেন ৩০-৩১ টাকা।  

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তাপাড়ের চর গোকুন্ডা গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, গম চাষ করে তারা লাভবান হতে পারছেন না। তাই গ্রামের ৯৫ শতাংশ কৃষক গম চাষ ছেড়ে দিয়েছেন। বাকি ৫ শতাংশ কৃষক গম চাষ করলেও পরিমাণে কম জমিতে এ ফসল চাষ করছেন।

তিনি বলেন, 'এক বিঘা জমিতে গম চাষ করতে খরচ হয় ৬-৭ হাজার টাকা। এক বিঘা জমি থেকে গমের ফলন আসে ৮-১০ মণ। প্রতি মণ গম বিক্রি করতে হয় ৮০০-৯০০ টাকা দরে।'

'তবে এ বছর গমের ফলন বেড়েছে। আমি ৩ বিঘা জমি থেকে ৩৪ মণ গম পেয়েছি। প্রতি মণ গম ১২০০-১৩০০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারলে আশানুরূপ লাভবান হতে পারব', বলেন তিনি।

ফাইল ছবি

একই গ্রামের কৃষক সোলেমান মণ্ডল ডেইলি স্টারকে জানান, ১০ বছর আগেও তিনি ৮-১০ বিঘা জমিতে গম চাষ করতেন। তার মতো অন্য কৃষকরাও অনেক জমিতে গম চাষ করতেন। ৩ বছর ধরে তিনি গমের চাষ বাদ দিয়ে ভুট্টা চাষ করছেন। এ বছর যদি গমের দাম বাড়ে তাহলে তিনি আগামীতে গমের চাষ পুনরায় শুরু করবেন।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রপাড়ের চর যাত্রাপুরের কৃষক নাদের আলী শেখ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কয়েক বছর আগেও ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে প্রচুর গম চাষ হতো। এখন বিশাল চর এলাকা ঘুরে শুধু কয়েকটি গমের ক্ষেত দেখা যাবে।'

'গম চাষ করে আমরা লাভবান হতে পারছিলাম না, সেজন্য গম চাষ বাদ দিয়ে ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল চাষ করছি। গমের উন্নত জাত ও গমের আশানুরূপ দাম পেলে আমরা পুনরায় গম চাষে আগ্রহী হব', বলেন তিনি।

নাদের আলী আরও বলেন, 'আমি গত ৩ বছর ধরে মাত্র এক বিঘা জমিতে গম চাষ করছি। ৮-১০ বছর আগে গম চাষ করতাম ১২-১৩ বিঘা জমিতে।'

লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও গম আমদানিকারক শেখ আব্দুল হামিদ বাবু ডেইলি স্টারকে জানান, দেশে উৎপাদিত গমে চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। তাদেরকে বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে গম আমদানি করতে হচ্ছে। দেশে দিন দিন গমের চাহিদা বাড়ছেই, তবে চাষ দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে। কৃষকরা আগ্রহী হয়ে গম চাষ করলে দেশে গমের চাহিদা মেটানো সম্ভব। এজন্য সরকারকে দায়িত্ব নিয়ে কৃষকদের গম চাষে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামীম আশরাফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যে ফসল চাষ করে লাভবান হওয়া যাবে কৃষক সে ফসলই চাষ করবেন। গম চাষ অনেকগুণ হ্রাস পেয়েছে। তবে কৃষকরা গম চাষে নতুন করে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এখন উন্নত জাতের গম চাষ করে প্রতি বিঘা জমি থেকে ১২-১৪ মণ ফলন পাচ্ছেন। বাজারে গমের দামও বেড়েছে।'

'আমরা কৃষকদের গম চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। অনেক কৃষককে গম চাষে কৃষি বিভাগ থেকে প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে', বলেন তিনি।

শামীম আশরাফ আরও বলেন, 'বর্তমানে গমের ফলন ও বাজার দর কৃষকদের আগামীতে গম চাষে আরও আগ্রহী করে তুলবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Touhid Hossain Rohingya statement

Rohingya repatriation unlikely amid Myanmar’s civil war: foreign adviser

He highlights the 2017 mass exodus—prompted by brutal military crackdowns was the third major wave of Rohingyas fleeing Myanmar

19m ago